এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শোভনা গ্রামের তরুণ মিন্টু সরদার (১৮)। স্কুলে পড়ার সময় বিজ্ঞান মেলায় গিয়ে আবিষ্কারের নেশা পেয়ে বসে তার। ৭ম শ্রেণিতে মাটি কাটার গাড়ি ও ৮ম শ্রেণিতে পানি সেচের পাম্প তৈরি করেন তিনি। অনার্স প্রথম বর্ষে এসে মিন্টু তৈরি করলেন ককশিটের উড়োজাহাজ। যা আকাশে নিয়ন্ত্রিতভাবেই ওড়াতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। ককশিটের তৈরি এ বিমানের ওজন ১৬০ গ্রাম। বিমানটি ৩ কেজি ওজন বহন করতে পারে।
দেখতে খানিকটা খেলনা উড়োজাহাজের মতোই। এটাকে মানুষ ও মালামাল পরিবহনের উপযোগী করে তৈরি করার স্বপ্ন বুনছেন মিন্টু। পতাকাবাহী বাংলাদেশ বিমানের অনুকরণে ওই ছোট্ট বিমানটির ওড়া-উড়ি দেখতে তার বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন উৎসুক মানুষ।
মিন্টু খুলনার ব্রজলাল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ম্যাথমেটিক্স অনার্স ১ম-বর্ষের শিক্ষার্থী। বিজ্ঞানমনস্ক মিন্টু কলেজে পড়াকালে উড়োজাহাজ তৈরির স্বপ্ন আঁকেন। সংসারে তীব্র অভাব, তারপরও মিন্টু থেমে যাননি। তিনি বাবা-মা ও বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ধার-দেনা করে তার উড়োজাহাজ তৈরির চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। ইন্টারনেট ঘেঁটে তিনি প্রথমবার ককশিট দিয়ে উড়োজাহাজের আদল তৈরি করে। কিন্তু ওড়াতে পারেননি। সেখানে না থেমে ২য় বারের চেষ্টায় বিমান আকাশে উড়লেও নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হন।
শেষে গত ১৫ ডিসেম্বর স্বপ্নবাজ মিন্টু তার এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান-সহ বহু মানুষ সামনে নিজের তৈরি বিমানটি সফলভাবে বেশ কয়েক মিনিট ধরে আকাশে উড়িয়েছে। মিন্টুর ককশিটে তৈরি মূল বিমানটির দৈর্ঘ ৬৬ ইঞ্চি। আর দুই পাশের ডানা ৬৫ ইঞ্চি লম্বা। মোট ওজন ১৬০ গ্রাম।
হত-দরিদ্র মিন্টুর সাত জনের একান্নবর্তী পরিবার। একটি মাত্র মাটির দেওয়ালে টিনের ছাউনি দেওয়া ঘরে ঠাকুরদা-ঠাকুরমা, বাবা-মা, ছোট কাকু ও দুই ভাই মিলে বসবাস করেন মিন্টু। এতো অভাবের মধ্যে বাস করা ছেলেটির উড়োজাহাজ তৈরির মতো বড় স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলার বিষয়টি এখন এলাকাবাসীর মুখে মুখে আলোচনা ছড়িয়ে পড়েছে।
উদ্ভাবক মিন্টু সরদার বলেন, এই উড়োজাহাজে ৯৪০ গ্রাম করে ওজন বহনে সক্ষম ২টি ব্রাশলেস ড্রোন মটর ব্যবহার করা হয়েছে। রিচার্জেবল লিপো ব্যাটারির শক্তিতে চালিত উড়োজাহাজটি রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে গতি-ওঠা-নামা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বর্তমানে এই উড়োজাহাজটি ৩ কেজি ওজন বহন করতে পারে।
উড়োজাহাজের জন্য এ পর্যন্ত ২৩ হাজার টাকা খরচ করেছি। খুব শিগগিরই ককশিটের পরিবর্তে ডেফরন বোর্ড দিয়ে বডি তৈরি করবো। আমার ইচ্ছা, টাকার বন্দোবস্ত হলে উড়োজাহাজটিতে দুই-তিন জন মানুষ নিয়ে চলাচলের উপযোগী করে গড়ে তুলবো।
প্রতিবেশী গৌতম বিশ্বাস বলেন, মিন্টুর তৈরি উড়োজাহাজ উড়তে দেখে গ্রামের সকলেই খুব খুশি। শোভনা ইউপি চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত বৈদ্য বলেন, অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী মিন্টু একটা বড় অবিষ্কার করে এলাকার মুখ উজ্জ্বল করেছে। আমি চাই, আরও বড় কিছু করার জন্য ছেলেটিকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠোপোষকতা দেওয়া হোক।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরীফ আসিফ রহমান বলেন, উড়োজাহাজ বানানো সহজ বিষয় না। আসলে ছেলেটি একটি অসাধারণ কাজ করেছে। আমি তার সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জেনে তাকে সবরকম সহয়তা করার কথা ভাবছি।