বৃহস্পতিবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৮, ০৯:৪২:৩০

নতুন বাবা-মা পেল নবজাতক স্বাধীন

নতুন বাবা-মা পেল নবজাতক স্বাধীন

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে জন্ম নেয়া পিতৃহীন নবজাতক স্বাধীনের নতুন ঠিকানা হলো সন্তানহীন দিনমজুর পরিবারের মাঝে। নিঃসন্তান মমিনুল ইসলাম (৩৫) ও মৌসুমি আক্তারের (৩০) ১০ বছরের দাম্পত্য জীবনে ছিল না কোনো সন্তান। আর এতে করে স্বাধীন পেল তার নতুন বাবা-মা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন নিজ হাতে শিশুকে কোলে নিয়ে সন্তানহীন এই দম্পতির কাছে তুলে দেন। আর শিশুটির জন্মদাত্রী মা মানসিক ভারসাম্যহীন নাসিমা বেগমের দায়িত্ব নেন মৌসুমি আক্তারের বাবা রিকশাচালক সৈয়দ আলী।

স্বাধীনকে তার নতুন বাবা- মায়ের হাতে তুলে দেয়ার সময় ১০০ ডলারের একটি নোট তুলে দেন কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক।

এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিভিল সার্জন ডা. এস এম আমিনুল ইসলাম, সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এটিএম আনোয়ারুল হক প্রামাণিক, ফুলবাড়ি উপজেলা কর্মকর্তা (ইউএনও) দেবেন্দ্র নাথ ঊরাঁও, কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু।

সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের দিনমজুর মমিনুল ইসলাম ও তার স্ত্রী মৌসুমি আক্তার শিশু স্বাধীনকে পেয়ে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ১০ বছর হলো আমাদের সংসারে কোনো সন্তান নেই। সন্তান না থাকার যন্ত্রণা আর মা ডাক শোনার জন্য এই শিশুটিকে সন্তান হিসেবে দত্তক নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করি। শিশুটি নেয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করি। পরে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী, শিশুটি ও তার মানসিক ভারসাম্যহীন মার দায়িত্ব নেই আমরা।

মৌসুমি আরও বলেন, শিশুটির মাকে দেখাশোনা করার জন্য বাড়ির পাশেই পৌরসভার নাজিরায় সরকারপাড়ায় আমার বাবার বাড়িতে রাখা হবে। এ সময় এই দম্পতি সবার কাছে দোয়া কামনা করেন।

সিভিল সার্জন ডা. এসএম আমিনুল ইসলাম জানান, গত ৮ আগস্ট বুধবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন মানসিক ভারসাম্যহীন নাসিমা বেগম। খবর পেয়ে শিশুটিকে দেখতে সদর হাসপাতালে আসেন জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন। শিশুটিকে কোলে নিয়ে আদর করেন আর শিশুটির নাম রাখেন ‘স্বাধীন’।

এছাড়া জেলা প্রশাসক এই নবজাতক ও মায়ের দায়িত্ব নেন। শিশুটি জন্ম নেয়ার বিষয়টি প্রকাশ হলে অনেকেই তার দায়িত্ব নিতে চাইলেও মানসিক ভারসাম্যহীন মায়ের দায়িত্ব নিয়ে রাজি হয়নি কেউ। ফলে তাদের কাছে শিশুটিকে দেয়া হয়নি। পরবর্তিতে মমিনুল ও মৌসুমি নামে এক দম্পতি শিশু ও তার মায়ের দায়িত্ব নেয়ায় আগ্রহ প্রকাশ করলে জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে শিশু ও তার মাকে তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়। এ ছাড়াও শিশুটি ও তার মায়ের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন জেলা প্রশাসক।

আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শাহিনুর ইসলাম সরদার বলেন, ‘গত ২৭ জুলাই হাসপাতালের সামনে মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারীকে অসুস্থ অবস্থায় ছটফট করতে দেখেন কুড়িগ্রামের সাংবাদিক জাহানুর রহমান খোকন। তিনি লোকজনের সহায়তায় তাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায় ওই নারী অন্তঃসত্ত্বা। পরে তাকে প্রসূতি বিভাগে ভর্তি করানো হয়।

জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন বলেন, একজন মা হিসেবেই আমি স্বাধীনের দায়িত্ব নিয়েছি। মানসিক ভারসাম্যহীন তার মায়ের কাছে শিশুটির নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে নিঃসন্তান দম্পতির কাছে হস্তান্তর করা হয়। আল্লাহ যদি আমায় বেঁচে রাখে, আমি যে প্রান্তেই থাকি স্বাধীনের খোঁজখবর নেব।

ইতিমধ্যে একজন ব্যক্তি স্বাধীনের খবর পেয়ে একটি অটোরিকশা দিয়েছেন। যা দু’একদিনের মধ্যেই স্বাধীনের নতুন বাবা-মার হাতে তুলে দেব।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে