মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০২:২৪:৩১

কুষ্টিয়ায় হঠাৎ পানের দাম কত হলো জানেন?

কুষ্টিয়ায় হঠাৎ পানের দাম কত হলো জানেন?

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পানের দাম কম হওয়ায় চাষিদের বেহাল দশা পরিলক্ষিত হয়েছে। দাম অত্যন্ত কম ও খরচ অত্যধিক বেশির কারণে পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন প্রান্তিক কৃষক। ভেঙে ফেলছেন পানের বরজ।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ভেড়ামারা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে প্রায় ৬৪৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়। যেখানে প্রতি বছরে ৭ হাজার টন পান উৎপাদন হয়। ব্রিটিশ আমল থেকে এই অঞ্চল পান চাষের জন্য প্রসিদ্ধ।

সরেজমিনে উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন জুনিয়াদহ, ধরমপুর ও বাহাদুরপুরের প্রান্তিক পান চাষিদের দুর্ভোগের চিত্র দেখা যায়। প্রতি বিঘা নতুন পান বরজে খরচ হয় ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। যেখানে পান বিক্রি করে আসছে ১ লাখেরও কম। পান বরজের সরঞ্জামের দাম বেড়েছে পূর্বে চেয়ে ৩ গুণ। পূর্বে যে শ্রমিকের দাম ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, বর্তমানে তা হয়েছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। তাই অনেকেই পান ররজ মেরামত না করে রেখে দিয়েছেন। দাম কম হওয়ায় কেউ আবার বরজের পান ভাঙছেন না। ঋণের দায়ে জর্জরিত কেউ কেউ বরজ ভেঙে অন্য চাষাবাদ করার মনস্থির করেছেন। বরজের ওপর ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে না পেরে অনেকে হয়েছেন এলাকাছাড়া। উপজেলার বৃহত্তম হাট জগশ্বর পান হাটে গিয়ে দেখা যায়, ৫০-২০০ টাকা বিড়ার পান বিক্রি হচ্ছে ৫-৩০ টাকায়। খুব ভালো মানের পান বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা বিড়া। পান বিক্রি করতে আসা চাষি মো. রফি বলেন, প্রতি বিড়া ৭ টাকায় বিক্রি করলাম, যা গত বছর করেছি ৯০-১০০ টাকায়। পান ভাঙা আর যাতায়াত খরচই উঠল না। এই ব্যবসা আর হবে না। চাষি তুষার বলেন, আমার জীবনে পানের দাম এত কম দেখিনি। আমার ৯০ পিলি পান বরজ ছিল কিন্তু দাম না পেয়ে ভেঙে ফেলা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

৭০ বছরের বৃদ্ধা জমেলা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ৪০ বছরের পুরোনো পান বরজ আমার। না পারছি ভাঙতে, না পারছি রাখতে। পান বাজারে নিলে খরচের টাকাও ফিরে পাচ্ছি না।

জগশ্বর পানহাটের সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন জানান, উৎপাদন বেশি ও রপ্তানি না থাকায় এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় পানের দাম অনেক কম। কিন্তু শ্রমিক ও পান বরজের সরঞ্জামের দাম পূর্বের থেকে ২-৩ গুন বেশি। সরকারি কোনো প্রণোদনা না থাকায় প্রান্তিক চাষিদের মধ্যে হাহাকার লক্ষ্য করছি। ঋণের ভারে জর্জরিত চাষিরা এই আবাদ ছেড়ে দিচ্ছেন। অর্থকরী এই খাতটিকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের সাহায্য চাই।

ভেড়ামারা উপজেলার (ভারপ্রাপ্ত) কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আশফাকুর রহমান কালবেলাকে জানান, দাম কম হওয়ায় পান চাষিদের বেহাল দশার বিষয়টি আমরা শুনেছি। পূর্বে মধ্যপ্রাচ্যসহ বেশকিছু দেশে পান রপ্তানি হলেও এখন সেটা হচ্ছে না বললেই চলে। আপাতত পান চাষিদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রণোদনার ব্যবস্থা নেই।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে