আসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট থেকে: দুই হাতের আঙুল নেই শাহ আলমের। হাতের কব্জির দিয়ে লিখে এইচএসসিতে আশানুরূপ ফলাফল অর্জন করেছে সে। শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহ আলম লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পুর্ব বিছনদই গ্রামের দিনমজুর একরামুল ইসলামের পুত্র ও হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন কলেজের ছাত্র। রোববার প্রকাশিত এইচএসসি ফলাফলে শাহ আলম বাণিজ্য বিভাগ থেকে জিপিএ ৩.৪২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। এর আগেও একই ভাবে পরীক্ষা দিয়ে পিইসি-জেএসসি ও এসএসসি সফলতার সাথে পাশ করেছে শাহ আলম। পরিবারে অভাব-অনটন ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার মাঝে এমন সাফল্যে সবাই অভিভূত।
জানা যায়, হাতীবান্ধা উপজেলার পুর্ব বিছনদই গ্রামের দিনমজুর একরামুল-মরিয়ম দম্পতির ছেলে শাহ আলম। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সে চতুর্থ। শিশুকালে আগুনে শাহ আলমের দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত পুড়ে যায়। দরিদ্র বাবা-মা চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে না পারায় শেষ পর্যন্ত দুই হাতের সবগুলো আঙুলই হারাতে হয় শাহ আলমকে। কিন্তু ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার অদম্য ইচ্ছা ছিল তার। স্থানীয় একটি ব্র্যাক স্কুল থেকে লেখাপড়া শুরু। এরপর পিইসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করায় পড়ালেখার সেই ইচ্ছাশক্তি আরও বেড়ে যায়। তবে পরিবারের অভাব-অনটন প্রায় সময় বাধ সাধলেও থেমে যায়নি শাহ আলম। খেয়ে না খেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে পিইসি, জেএসসি ও এসএসসিতে ভালো ফলাফল করে এবার এইচএসসিতেও জিপিএ ৩.৪২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।
শাহ আলম জানায়, শারীরিক প্রতিবন্ধকতার চেয়েও সংসারের অভাব-অনটনই তার পড়ালেখায় সবচেয়ে বেশি বাধা হয়ে দাড়াঁয়। ভবিষ্যতে ব্যাংকার হওয়ার স্বপ্ন দেখছে অদম্য মেধাবী শাহ আলম। সে বর্তমানে সবার জন্য শিক্ষা ফাউন্ডেশনের আওতায় বিনামূল্যে ঢাকায় কোচিং করছে।
শাহ আলমের বাবা একরামুল মিয়া বলেন, তার ছেলে আগুনে দুটো হাতের সবগুলো আঙুল হারালেও মনোবল হারায়নি কখনও। তাই সে এখন লেখাপড়া করে ব্যাংকের চাকরি করবে বলে স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু ৭ সদস্যের অভাব-অনটনের সংসারে চাহিদা মেটাতে গিয়ে ছেলের সেই স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত পূরণ হবে কি না ? এমন শঙ্কা বাবা একরামুলের।
হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষ সরওয়ার হায়াত খান বলেন, শারীরিক আর সাংসারিক প্রতিবন্ধকার সঙ্গে যুদ্ধ করেই শাহ আলম কৃতিত্বের সাথে পাস করেছে। সমাজের বিত্তবানরা তার পাশে দাঁড়ালে ভবিষ্যতে শাহ আলম আরও ভালো করবে।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/টিটি/পিএস