কবির হোসেন: ছোট্ট আমগাছটির উচ্চতা বড়জোর নয় ফুট। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে লম্বাটে সবুজ আম। অপরিপক্ব এই আমের একেকটির ওজন আড়াই থেকে তিন কেজি পর্যন্ত। শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি যখন পাকা শুরু হবে, তখন প্রতিটির ওজন হবে চার কেজির মতো। মাগুরার শালিখা উপজেলার শতখালী গ্রামের আতিয়ার রহমান মোল্লার নার্সারিতে আছে গাছটি। এ বছর আম ধরেছে ১৫টি। এখনো আকারে পূর্ণতা পায়নি। তবে এখনই একেকটি আমের ওজন হয়েছে আড়াই থেকে তিন কেজি। সবচেয়ে বড় আমটি মেপে দেখা গেল লম্বায় ১২ ইঞ্চি এবং ব্যাস ১৬ ইঞ্চি। বিশাল আকারের এই আম দেখতে এবং গাছের চারা সংগ্রহ করতে প্রতিদিনই মানুষ ভিড় করছেন আল আমিন নার্সারি অ্যান্ড মোল্লা হর্টিকালচার সেন্টারে। নতুন জাতের এই আমের নাম রাখা হয়েছে ‘মোল্লা-১ ইয়াসমিন’।
নার্সারির মালিক আতিয়ার রহমান মোল্লা বললেন, ব্রুনাইয়ের রাজপরিবারের বাগান পরিচর্যার কাজ করতেন তাঁর প্রতিবেশী ইউসুফ আলী। সেখানকার গাছে তিনি ওই আম দেখেন। ছয় বছর আগে বাড়ি আসার সময় ইউসুফ আলী আমগাছের চারটি ‘শাইওন’ (গাছের মাথার কচি ডাল বা ডগা) নিয়ে আসেন। সেটি দিয়ে তিনি বাড়িতে দেশি জাতের আমগাছে কলম করেন। দুই বছর পর ওই কলমের গাছে দেড় কেজি ওজনের একটি আম ধরে। ইউসুফের বাড়িতে গিয়ে আতিয়ার রহমান নতুন জাতের ওই আম গাছে ঝুলতে দেখেন। পরে আতিয়ার আমগাছটির একটি ডাল এনে নিজের নার্সারিতে দেশি জাতের আমগাছে কলম দেন।
দুই বছর পর সেই গাছে দুই কেজি ওজনের দুটি আম ধরে। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে ওই গাছে আটটি আম আসে। শ্রাবণ মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি আমের আকার দেখে অবাক হন। দেখেন, সবচেয়ে বড় আমটির ওজন চার কেজি এবং ছোটগুলো দুই কেজি করে। স্থানীয় কৃষি মেলায় তিনি ওই আম প্রদর্শন করে সবাইকে চমকে দেন। পরে ওই আমের চারাটি কৃষি বিভাগের মাধ্যমে কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। আতিয়ার রহমান আরও বলেন, আমগাছটিতে বাড়তি কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন পড়েনি। মাঘ মাসে গাছে মুকুল আসে। বোঁটা বেশ শক্ত। তাই ঝড়-বৃষ্টিতেও আম ঝরে পড়েনি। কাঁচা আম গাঢ় সবুজ রঙের। পাকলে সবুজের সঙ্গে কিছুটা হলুদ আভা দেখায়। কাঁচা আম খেতে পেঁপের মতো। হালকা টক মিষ্টি। পাকা আমের স্বাদ দেশি মল্লিকার মতো। আঁশ নেই। আঁটি খুবই ছোট। আঁটির ওজন আমের মাত্র আড়াই শতাংশ। আমের মূল মৌসুম শেষ হওয়ার পর এই আম পাকে বলে দাম এবং চাহিদাও বেশি। ইউসুফ আলী কষ্ট করে ব্রুনাই থেকে ওই আমের জাত নিয়ে আসেন। তাই তিনি ইউসুফ আলীর মেয়ে ইয়াসমিন ও নিজের নামের পদবি জুড়ে দিয়ে আমের নাম রেখেছেন ‘মোল্লা-১ ইয়াসমিন’।
আতিয়ার রহমান বলেন, ‘নতুন এই আমের জাতটি আমি সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। কলমের মাধ্যমে চারা তৈরি করেছি। গত বছর ৫০টি চারা বিক্রি করেছি। এ বছর ৩০টি চারা বিক্রি হয়েছে। এখনো ১০০টি চারা আছে। প্রতিটি চারার দাম ৫০০ টাকা। নতুন এই আম সম্পর্কে জানতে চাইলে মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ পার্থ প্রতীম সাহা বলেন, ‘গত বছর তিন কেজি ওজনের ওই আম আমি দেখেছি। আমের ওজন অনেক বেশি। তবে পরিমাণে কম ধরায় বাণিজ্যিকভাবে এই আম আবাদযোগ্য না। শৌখিন ব্যক্তিরা আমের চারা রোপণ করতে পারেন।-প্রথম আলো
২৯ মে,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ