মৌলভীবাজার থেকে: শ্রীমঙ্গলের সাতগাঁওয়ে আন্তঃনগর উপবনের ১১টি বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় দীর্ঘ ১৫ ঘণ্টা বন্ধ ছিল সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন যোগাযোগ। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন হাজার হাজার যাত্রী।
বৃহস্পতিবার রাত পৌনে একটার দিকে সাতগাঁও রেলওয়ে স্টেশনের পাশে ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেসটি হঠাৎ লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। দুর্ঘটনার পর কিছু বগি নিয়ে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। শুক্রবার সকালে
কুলাউড়া ও আখাউড়া থেকে দুটি রিলিফ ট্রেন এসে উদ্ধার কাজ শুরু করে। বিকাল সাড়ে ৩টা নাগাদ উদ্ধার কাজ শেষ হয়। এরপর সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এ ঘটনায় ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে প্রকৌশলী মুজিবুর বলেন, রাতে সাতগাঁও রেল স্টেশন অতিক্রমের পর ‘ট্রেনের একটা আন্ডারগিয়ার বা ট্রেনের ‘পুলিং রড’ ভেঙে লাইনের ‘পয়েন্ট অ্যান্ড ক্রসিং’ এর কয়েকটি ব্লকের মধ্যে পড়ে যায়। এতে ব্লক ভেঙে ট্রেনের ১১টি বগি লাইনচ্যুত হয়।
এদিকে শুক্রবার সকালে উপবন ট্রেনের উদ্ধার কাজ পরিদর্শনে আসেন শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সংসদীয় এলাকার এমপি সাবেক চিফ হুইপ ড. উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ, জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো. শাহজালালসহ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।
ঘটনাস্থল থেকে উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এমপি রেলপথ মন্ত্রী মো. মুজিবুল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। তখন রেলমন্ত্রী জানান- দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে ঢাকা বিভাগীয় ট্রান্সপোর্টেশন অফিসার মো. শফিকুর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা। উক্ত কমিটি ঢাকা বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক মো. গাওস আল মুনীর এর নিকট আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিবেন।
এদিকে উপবন ট্রেনের গার্ড (পরিচালক) মো. জাহাঙ্গীর আলম রাতেই বলেন- ‘বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২.৪৮ মিনিটে বিকট শব্দ শুনতে পাই। সাতগাঁও রেলস্টেশন পার হয়ে আউটার সিগন্যাল এলাকায় ট্রেনের ১১টি বগি লাইনচ্যুত হয়। ট্রেনে মোট ১৭টি বগি ছিল। এর মধ্যে সামনের ইঞ্জিনসহ ও পেছনের অর্থপ্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান স্যারকে বহনকারী বগি পড়েনি। শুধু মাঝখানের বগিগুলো লাইনচ্যুত হয়েছে। ট্রেনের ১১টি বগি লাইনচ্যুত হলেও ইঞ্জিনসহ তিনটি বগি অক্ষত রয়েছে’।
তার ধারণা, রেললাইনের নাট বল্টু-ক্লিপ-হুক রেললাইন থেকে ছুটে সরে যাওয়ায় এ দুর্ঘটনা হতে পারে। তবে স্থানীয়রা জানান, রেল লাইনের রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
শায়েস্তাগঞ্জ রেল স্টেশনের মাস্টার মুঠোফোনে বলেন, যাত্রী সাধারণের সুবিধার্থে এখান থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর জয়ন্তিকা ট্রেন ও আন্তঃনগর কালনী ট্রেন এবং রাতে আন্তঃনগর উদয়ন ট্রেনসহ সবধরনের ট্রেন চলাচল করে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোবাশ্বেরুল ইসলাম জানান, ‘ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনায় ট্রেনটির কয়েক শ’ যাত্রী দুর্ভোগে পড়েন। ট্রেনটির পেছনের বগিতে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানও ছিলেন। পরে অর্থ প্রতিমন্ত্রী সড়ক পথে ঢাকায় ফিরেন।’
দুর্ঘটনার পর রাতে ট্রেনের যাত্রী সাধারণ চরম দুর্ভোগে পড়েন। যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য শ্রীমঙ্গল থানার ওসি কেএম নজরুলের নেতৃত্বে পুলিশের চারটি টিম দুর্ঘটনাস্থলে রাতভর উপস্থিত থেকে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে যানবাহনের সুব্যবস্থা করে দেন।
অনেক রেলযাত্রী জানান, সাতগাঁও স্টেশন বাজার থেকে চড়ামূল্যে ভাড়া দিয়ে শত শত ট্রেন যাত্রী সিএনজি অটোরিকশা যোগে শ্রীমঙ্গল শহরে এসে হানিফ-শ্যামলী বাস কাউন্টারে ভিড় জমান। পরে যাত্রীরা সেখান থেকে গন্তব্যে রওনা হন।
এমটিনিউজ/এসবি