মৌলভীবাজার : বাবার উপেক্ষিত এক কন্যা মায়ের মুখে হাসি ফুটালো। লোভ লালসার হাতছানিতে ১১ মাসের শিশু ও তার মাকে ফেলে দিয়ে বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে চলে যায় অন্যত্র । মায়ের সামনে নেমে আসে ঘোর অমানিশা। প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করে মা মেধাবী মেয়েকে নিজের মতো করে গড়ে তুলেন। মায়ের ভাষায়, এ যেন আমার আঁধার ঘরে আলোর ঝিলিক।
মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার রাজনগর আইডিয়াল হাইস্কুলের শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার ইমা এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। বাবার আদর থেকে বঞ্চিত ইমা ছোট বেলা থেকেই অযত্নে অবহেলায় বেড়ে ওঠে মায়ের কোলে।
মেয়ে সন্তান হিসেবে ঘৃণা করে জন্মদাতা কখনো মুখ ফিরে তাকায়নি ইমার দিকে। উপজেলার গবিন্দবাটি গ্রামে ইমার বাড়ি। ইমার মা সেলিনা বেগম জীবন জীবিকা ও একমাত্র কন্যা ইমাকে মানুষ করে গড়ে তুলার জন্য একটি সেলাই মেশিন নিয়ে নেমে পড়েন জীবন যুদ্ধে। ভাইদের সাহায্য আর এলাকার টুকটাক কাপড় সেলাই করে সংসার চালান তিনি।
ইমাকে নিয়ে নুতন করে স্বপ্ন দেখেন ভুলে যান জীবনের কথা। প্রথমে তাকে এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। ইমা পিএসসিতে কৃতিত্বের সাক্ষর রাখেন। পর্যায়ক্রমে ইমা ভর্তি হয় রাজনগর আইডিয়াল হাইস্কুলে। তার দরিদ্রতার কথা চিন্তা করে স্কুল কর্তৃপক্ষ বেতন ও টিউশন ফি মাফ করে দেন। তার মা ও স্কুলের শিক্ষক এবং প্রাইভেট শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় ইমা পড়া লেখায় মনযোগী হয়ে ওঠেন।
সরেজমিনে ইমার বাড়িতে গেলে তার মা সেলিনা বেগম বলেন, গবিন্দবাটি গ্রামে তার নানী নিঃসন্তান সায়রা বেগম তাকে ৪ বছর বয়সে লালন পালনের জন্য বাবার বাড়ি একই উপজেলার মোকামবাজার থেকে এখানে নিয়ে আসেন। নানী মৃত্যু আগে তার অংশের জমিজমা আমার নামে রেজিস্টারী করে মালিকানা হস্তান্তর করেন। নানি আমার ভবিষ্যত চিন্তা করে নানার বংশধর ওই বাড়ির মোবারক মিয়ার ছেলে জয়নাল মিয়ার সাথে বিয়ে দেন। জমিজমার লোভে সে আমাকে বিয়ে করে।
তিনি জানান, বিয়ের কিছুদিন পরে আমার জীবন আলোকিত করে আসে ইমা। কিন্তু জয়নাল তার বোনদের চক্রান্তে ১১ মাসের ইমাকে ফেলে রেখে বিয়ে করে অন্যত্র চলে যায়। আমার সামনে অন্ধকার নেমে আসে। তবে মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে জীবন যৌবন সব ভুলে যাই। তাকে নিয়েই স্বপ্ন দেখি। আত্নপ্রত্যয়ী হয়ে একটি সেলাই মেশিন নিয়ে জীবন যুদ্ধে নেমে পড়ি। ইমার চাহিদামত আমি কিছুই দিতে পারিনি। এখন সে কলেজে পড়বে আমি তার খরচ যোগাতে অক্ষম। যদি কোন সুহৃদ এগিয়ে আসেন তবে ইমার পড়ালেখা চলমান থাকবে।
ইমার সাথে কথা বললে তিনি দুঃখ করে বলেন, আমার জন্মদাতা এমন একজন মানুষ পরীক্ষায় যাওয়ার পথে তার কাছে দোয়া চাইতে গেলে তিনি আমাকে অবজ্ঞা করে এরিয়ে যান।
ইমা আরো বলেন, আমি এমন এক পিতার সন্তান যে পিতা আমার এমন খুশির খবর পেয়ে আমার সাথে কোন যোগাযোগ করেননি বরং বিরূপ মন্তব্য করেছেন। আমার এ সফলতার পিছনে প্রথমে আমার মায়ের চেষ্টা ,স্কুলের শিক্ষক ও গৃহশিক্ষক কুতুব স্যারের অবদান রয়েছে।