ইখতিয়ার উদ্দীন আজাদ, পত্নীতলা (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ নওগাঁর পতœীতলায় গ্রাম-গঞ্জের ঘরে ঘরে তাল কুড়ানো ও বড়া-পিঠা তৈরি করে খাওয়া এবং আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে পাঠানোর ধুম পড়ে গেছে। যেন তালপিঠা তৈরির উৎসব চলছে। তবে ক্রমান্বয়ে বিলুপ্তি ঘটছে তালগাছের। হারিয়ে যেতে বসেছে পুরানো ঐতিহ্যে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে বিশেষ করে শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে তাল পাকতে শুরু করে। তা পর্যায়ক্রমে চলে মাসাধিক কাল ধরে। আর এ পাকা তালের রসদিয়ে তৈরি হয় রকমারি পিঠা। এলাকার এমন কোন পরিবার বাদ যায় না যে তারা তালের রস দিয়ে স্থানীয় ভাষায় পিঠা, বড়া, কানমুচড়ি, ধাবড়িপিঠা, মুঠা, গড়গড়াসহ বিচিত্র ধরনের খাবার তৈরি করেন না। শুধু গ্রাম-গঞ্জের লোকজনই নয় এমনকি শহরের অনেক পরিবারের লোকজন বিশেষ করে নতুন জামাই বাড়িতে তালপিঠা, তালবড়াসহ অন্যান্য খাবার তৈরি করে পাঠাতে ভোলেন না। অত্রঞ্চল হতে যারা এলাকার বাহিরে কর্মরত থাকেন তারা বছরে একবার হলেও বাড়িতে ফিরতে ভোলেন না এ পিঠা-বড়া খেতে। কোন কারণে আসতে না পারলে তাদের বাবা-মা ও আপনজনেরা তা তৈরি করে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। তা এলাকার জনগণের পুরানো ঐতিহ্যে। তা-না হলে যেন তারা অতৃপ্ত রয়ে যান বলে অনেকের সাথে আলাপ করে জানাগেছে। তালের মওসুম আসলে ছোট-বড়দের মাঝে কোন ভেদাভেদ থাকে না। সকলেই এ তাল কুড়াতে উদ্যোগী হয়ে উঠেন। দিবা-রাত্রি এ তাল সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করেন। প্রতিযোগিতা করে তাল কুড়ানো যেন সকলকেই বাড়তি আনন্দ যোগায়। তবে উপজেলার হাট বাজারে পাকা তাল কিনতেও পাওয়া যায়। প্রতিটি তাল ৮ টাকা হতে ১৫টাকা পর্যন্ত ক্রয়-বিক্রিয় হয়। বর্তমানে প্রতিকেজি গুড়ের দাম ৮০/৯০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। মঙ্গা হলেও তালপিঠা তৈরি হয় সবার ঘরে ঘরে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষেরা জানান তাদের অনেকে এবার চড়া দামের কারণে গুড় ছাড়াই পিঠা তৈরি করছেন। অনেকে এ সময় তাল কুড়ায় আঁটি মধ্যে শাঁস খাওয়ার লোভে। পাকা তালের রস চিপিয়ে বের করে নেয়ার পর আঁটি রেখে দিলে দু’মাসের মধ্যে আঁটির ভিতর মজাদার শাঁস তৈরি হয়। যা কাঁচা কিংবা দুধ চিনি দিয়ে রান্না করে বা অন্য উপায়ে সুন্দর ও মুখরোচক খাবার তৈরি করা যায়।
এ তালগাছের দ্রুত বিলুপ্তি লক্ষকরা যাচ্ছে বলে অনেকেই অভিমত ব্যাক্ত করেন। এলাকার প্রবীণ লোকজনের অনেকেই জানান সে বেশিদিনের কথা নয়। অত্রঞ্চলের এমন কোন পুকুরপাড়, খাড়িরপাড়সহ বাড়ির আশপাশ ছিল না যে তালগাছ চোখে পড়ত না? বর্তমানে বিভিন্ন কারণে যেমন পারিবারিক দ্বন্দ, অভাব, অভিযোগ, সামাজিক অস্থিতিশীলতা আবার অনেকেই জানান তালগাছের কান্ড খুঁটি, রুয়াসহ হিসাবে টিকসই হওয়ায় বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হচ্ছে। আর এ সব কারণে তালগাছ কাটা হচ্ছে। সে তুলনায় জনগণ এ তালগাছ রোপনে আশানুরুপ উদ্যোগী হয়ে উঠছেন না। অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন হয়তো এলাকার পুরানো ঐতিহ্যে তালের অভাবে এক দিন হারিয়েই যাবে।
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস