নড়াইল: নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কুচিয়াবাড়ি গ্রামে বাঁশবাগানে ফেলে যাওয়া অসহায় বৃদ্ধা মায়ের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এছাড়া নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম বয়োঃবৃদ্ধ হুজলা বেগমকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন।
গতকাল শনিবার বিকেলে ৮৬ বছরের বৃদ্ধা হুজলা বেগমকে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখতে এসে সাংবাদিকদের এসব কথা জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন।
তিনি বলেন, অসহায় হুজলা বেগমকে তার ছেলে ও পূত্রবধূ বাঁশবাগানে ফেলে যাওয়া বিষয়টি জানার পর মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে ফোন দিয়ে এ ব্যাপারে জানতে চান। বৃদ্ধা মাকে উদ্ধার, চিকিৎসাসেবাসহ সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নেন এবং চিকিৎসাসেবার দায়িত্ব নিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়া হাসপাতালে ভর্তিসহ তার দেখভালের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার সকালে বৃদ্ধা হুজলাকে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এরপর বিকেলে তাকে হাসপাতালে দেখতে এসে ব্যক্তিগত উদ্দেগে তার (হুজলা) হাতে পাঁচ হাজার টাকা তুলে দেন নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন লোহাগড়া থানার ওসি প্রবীর কুমার বিশ্বাস, ওসি তদন্ত মনিরুল ইসলামসহ পুলিশ কর্মকর্তারা।
এর আগে শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক এমদাদুল হক চৌধুরী বৃদ্ধা হুজলাকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া লোহাগড়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফয়জুল আমির লিটু বৃদ্ধা হুজলার বাড়িতে গিয়ে তাকে পাঁচ হাজার টাকা দেন এবং প্রতিমাসে ভরণ-পোষণের জন্য তিন হাজার টাকা করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
জানা যায়, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কুচিয়াবাড়ি গ্রামে চরম নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিয়ে জন্মদাত্রী মাকে গত ২৬ সেপ্টেম্বর (বুধবার) রাত ৮টার দিকে বাঁশবাগানে ফেলে যায় তার ছেলে ও পূত্রবধূ। অমানবিক এ ঘটনা সব শ্রেণি-পেশার মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ছেলে ও পূত্রবধূর যথাযথ শাস্তি দাবি করেছেন বিভিন্ন পেশার মানুষ।
এ ব্যাপারে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ডক্টর ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, আর কোনো মায়ের এমন অবস্থা দেখতে চাই না। তার পাঁচটি সন্তান থাকতেও এমন নির্মমতা মেনে নেয়া যায় না। এ ঘটনায় জড়িতদের যথাযথ শাস্তি দাবি করছি।
কুচিয়াবাড়ি এলাকার ব্যবসায়ী জিন্নাত হোসেনসহ অনেকে জানান, এই বৃদ্ধা মায়ের (হুজলা) অসহায়ত্ব নিয়ে কণ্ঠশিল্পী নচিকেতার গানের কথা ও সুরও যেন হার মেনে যায়! চরম নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিয়ে তাকে (হুজলা) রাতের আঁধারে বাড়ি থেকে টেনে-হিঁচড়ে বাঁশবাগানে ফেলে দেয়া হয়েছে।
এলাকাবাসীরা জানান, মায়ের ভরণ-পোষণ দিতে পারবেন না, এমন অজুহাতে গত বুধবার রাতের আঁধারে ৮৬ বছরের অসহায় মাকে রাস্তার পাশে বাঁশবাগানে ফেলে যান তার মেঝো ছেলে বাবু শেখ ও পূত্রবধূ। তবে প্রতিবেশিদের সহযোগিতায় গত বুধবার ভোরে হুজলা বেগমের নাতবউ তাদের বাড়িতে নিয়ে যান।
হুজলা বেগমের তিন ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। প্রায় ৩০ বছর আগে স্বামী সামাদ শেখ মারা যাওয়ার পর ছেলে-মেয়েরা আলাদা সংসার শুরু করেন। আর হুজলা বেগম বিভিন্ন সময়ে ছেলে ও মেয়েদের সংসারে জীবনযাপন করে আসছিলেন। কিন্তু, হঠাৎ করে মায়ের ভরণ-পোষণ কে নেবেন, এ বিষয়ে সন্তানদের মধ্যে মত-বিরোধের সৃষ্টি হয়। শেষপর্যন্ত কোনো সন্তানই তার মাকে তাদের সংসারে ঠাঁই দিতে চায়নি। এরপর বাবু ও তার স্ত্রী বৃদ্ধা মাকে (হুজলা) রাস্তা দিয়ে টেনে-হিঁচড়ে বাঁশবাগানে ফেলে রেখে যান বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পাকা রাস্তা দিয়ে টেনে-হিঁচড়ে নেয়ায় হুজলার শরীরের বিভিন্ন স্থানে থেঁতলে গেছে। খোলা আকাশের নিচে অসহায় বৃদ্ধাকে রাতভর ফেলে রাখায় পিঁপড়াসহ বিভিন্ন ধরণের পোকার কামড়ের শিকার হন।
এ ব্যাপারে লোহাগড়া থানার ওসি প্রবীর কুমার বিশ্বাস বলেন, বৃদ্ধা মাকে নির্যাতনের ঘটনায় এক ছেলে ও মেয়েকে আটক করা হয়েছে। তবে মূল অভিযুক্ত বাবু ও তার স্ত্রী পলাতক রয়েছে।