স্পোর্টস ডেস্ক: আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এদিকে নড়াইল-২ আসনে নৌকার প্রার্থী ক্রিকেট তারকা মাশরাফি বিন মুর্তজা। এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে একান্ত এক সাক্ষাৎকারে তার সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় তাকে বলা হয় জনগনের কেন এই ভালোবাসা, সেটি অনুভব করতে পেরেছেন? নিজের কাছে জানতে চেয়েছেন?
এমন প্রশ্নের জবাবে মাশরাফি বলেন, ‘জানি না, অনেক কিছুই ব্যখ্যা করা কঠিন। অনেক সময়ই নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কারণ খুঁজতে যাওয়া উচিত নয়। সেদিন বড়দিয়া ঘাটে একজন মুরুব্বি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেলেন, ‘বাবা, আমি শুধু আল্লাহর কাছে দোয়া করছি, ৩০ তারিখ পর্যন্ত যেন বাঁচিয়ে রাখে। তারপর আল্লাহ নিয়ে যাক। জীবনের শেষ ভোট তোমাকে দিয়ে মরতে চাই।’
‘এই মানুষটির কাছে কি আমি কারণ জানতে চাইব? কোনো কারণ হয়তো আছে, কিংবা নেই। তিনি তার মতো করেই ভালোবেসেছেন। এরকম আবেগ-ভালোবাসার আরও অনেক ঘটনা দেখেছি। কয়টার কারণ খুঁজব? সবারই হয়তো নিজের গল্প আছে, কারণ আছে। আমি শুধু তাদের ভালোবাসাটাই দেখেছি।’
মাশরাফি বলেন, ‘আমি সবসময়ই বর্তমানে থাকতে চাই। খেলার সময় খেলা, অন্য কাজের সময় অন্য কিছু। এখন এই কদিন ভোটের মাঠে ঘুরলাম। কেবলই মনে হচ্ছে, এই মানুষগুলোর জন্য কিছু করতে পারলে জীবন স্বার্থক।’
এ সময় তাকে বলা হয় নির্বাচনে আপনার নিজের হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া কিছু অভিজ্ঞতা কি ভাগাভাগি করা যায়? এ সময় মাশরাফি বলেন, ‘অভিজ্ঞতা কতই তো হল। সব বলা উচিতও না। এক বৃদ্ধের কথা তো আগে বললাম। আরেকটি ঘটনা আমার মনে খুব দাগ কেটেছে। সেখানে আমি ছিলাম না। কয়েকজন গিয়েছিল একটি বাড়িতে আমার জন্য ভোট চাইতে। ওরা উন্নয়নের কথা-টথা বলে চলে আসছিল।’
‘এক বৃদ্ধা পেছন থেকে ডেকে বললেন, ‘এই দাঁড়া, মাশরাফির জন্য ভোট চাস? দোয়া চাস? ওর জন্য কেন চাইতে এসেছিস! শোন, আমার ক্যান্সার, কতদিন বাঁচব জানি না। আমার কিছু লাগবে না। ওকে ভোট দিয়েই মরব।’ আপনিই বলুন, এর চেয়ে বড় পাওয়া একজন মানুষের কী আছে! ৫০০ উইকেট নিয়ে কি একজন মৃত্যুপথযাত্রীর এমন নিঃস্বার্থ ভালোবাসা পাওয়া যাবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত একটি ছেলে, কেমো নিতে হয়। তার বিছানা থেকে ওঠা নিষেধ, তবু নির্বাচনের প্রচারে ছুটে আসে। আমার ঢাকার বাসায় মাঝে মধ্যে কাজ করেন একজন কলের মিস্ত্রি, মোনেম। আমি নড়াইলে আসার আগে থেকেই ছবিতে দেখি সে চলে এসেছে, মিছিলে প্রতিদিন সবার আগে। কোথায় থাকবে, কী খাবে, ঠিক নেই… চলে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘আরও অসংখ্য আছে। এসব কি শুধুই ক্রিকেটের জন্য? এক হাজারটা উইকেট নিলেও তাদের কী? আমার কেবলই মনে হয়, মানুষের জন্য কিছু করে মরে গেলেও শান্তির। আমি সেই শান্তির পরশে থাকতে চাই।’ তাই বলা চলে সবচেয়ে বড় পাওয়াই পেয়ে গেলেন মাশরাফি!