নড়াইল : টানা দুইদিনের ঝড় ও বৃষ্টিতে নড়াইলের অরুনিমা ইকোপার্কের প্রায় ছয় হাজার দেশীয় ও অতিথি পাখি মারা গেছে। সোমবার অল্প কিছু মারা গেলেও মঙ্গলবার রাতের ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে পার্কের গাছে থাকা সবচেয়ে বেশি পাখি মারা যায়।
জানা যায়, মধুমতি নদীর তীরসংলগ্ন কালিয়া উপজেলার নড়াগাতি থানার পানিপাড়া গ্রামে ‘কৃষি পর্যটনকেন্দ্র অরুনিমা ইকোপার্ক’ অবস্থিত। এই পার্কের গাছে গাছে হাজার হাজার পাখির অবস্থান। কিন্তু এক রাতের ঝড়ে পার্কটি প্রায় পাখিশূন্য হয়ে গেল।
কৃষি পর্যটনকেন্দ্র অরুনিমা ইকোপার্কের মালিক ইরফান আহম্মেদ বলেন, সারাদেশের মতো নড়াইলেও ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে ঝড়ো হাওয়া ও ভারী বৃষ্টিপাত। ২৫ তারিখ ও ২৬ তারিখ রাতে ভারী বৃষ্টির সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়। এই শিলাবৃষ্টিতে পার্কে অবস্থানরত হাজার হাজার অতিথি পাখি মারা যায়। দেশীয় ও অতিথি মিলে মৃত পাখির সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার। পার্কে কর্মরত শ্রমিক দিয়ে মৃত পাখিগুলোকে একত্রিত করা হচ্ছে। পরবর্তীতে মাটি খুঁড়ে মৃত পাখিগুলোকে পুঁতে রাখা হবে।
কালিয়া উপজেলার কৃষি পর্যটনকেন্দ্র অরুনিমা ইকোপার্কের চেয়ারম্যান খবির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০০৪ সাল থেকে প্রতি বছর শীত মৌসুমসহ বছরের আট মাস বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কলতানে মুখরিত হয় এই পার্ক। চলতি বছরও মৌসুমের শুরু থেকে দেশীয় ও অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত হয়ে উঠেছিল পার্কটি। পাখি সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণার একযুগ আগে থেকেই এই এলাকা পাখির গ্রাম নামে সবার কাছে পরিচিত।
তিনি বলেন, এখানে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন বিকেলে গাছের ঢালে ঢালে বসতে থাকে পাখিরা। রাত যত গভীর হয় পাখিদের আগমন তত বাড়তে থাকে। সারারাত পাখির কলতানে মুখর থাকে পুরো এলাকা। কিন্তু দুইদিনের ঝড়ো আবহাওয়া ও শিলাবৃষ্টিতে প্রায় ছয় হাজার পাখি মারা যায়। গতকাল রাতের বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি পাখি মারা গেছে। এই ক্ষতি অপূরণীয়।
ইকোপার্কের চেয়ারম্যান খবির উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, প্রায় ৬০ একর এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির কয়েক হাজার পাখির বাসস্থান। এখানে বক, হাঁসপাখি, পানকৌড়ি, শালিক, টিয়া, দোয়েল, ময়না, মাছরাঙা, ঘুঘু, শ্যামা, কোকিল, টুনটুনি, চড়ুইসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখির রাজত্ব। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার পাখির প্রজনন ঘটে। ডিম থেকে ফুটে বাচ্চা। বর্তমানে দেশের একমাত্র এই কৃষি পর্যটনকেন্দ্রটি পরিণত হয়েছে পাখির অভয়ারণ্যে। কিন্তু এক রাতের বৃষ্টিতে পার্কটি প্রায় পাখিশূন্য হয়ে গেল। এই ক্ষতি পোষাতে সময় লাগবে অনেকদিন।