নড়াইল থেকে : স্কুলছাত্রীর সাথে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে অপহরণের চেষ্টাকালে দুই শিশুসহ তিন জনকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টাকারী বখাটে কোচিং শিক্ষক রকিবুল ইসলাম মিঠুসহ তার সহযোগিদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
সোমবার দুপুরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী নড়াইল-মাগুরা সড়কে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এসময় বিক্ষুব্ধ জনতা বখাটে ৪ ভাইয়ের বাড়িঘর ভাংচুর করে। এ ঘটনায় সদর থানায় মামলা হলেও পুলিশ বখাটে মিঠুকে গ্রেফতার করতে পারেনি। মঙ্গলবার দুপুরে অভিযুক্ত মিঠুসহ অন্য ৩ ভাই আদালতে হাজির হলে আদালত তাদের জেলহাজতে প্রেরণ করেন।
জানা গেছে, নড়াইল সদরের বাজার শিঙ্গিয়া গ্রামের সাইদ বিশ্বাসের ছেলে রকিবুল ইসলাম মিঠু একই গ্রামের রতন বিশ্বাসের মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী রাবেয়াকে কোচিং এ পড়াত। সদরের সিংগা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী রাবেয়া প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় ১৫ মার্চ সন্ধ্যায় তাকে অপহরণের চেষ্টা চালায় বখাটে মিঠু, ভাই সাজ্জাদ সহ ৭/৮ জন সহযোগী।
অপহরণে বাধা দিতে ছুটে আসে রাবেয়ার দাদি জাহানারা (৫৫)। এ সময় রাবেয়া, তার দাদি জাহানারা ও পাশের বাড়ির মনিরুলের মেয়ে কোমখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির ৮ বছরের শিশু হেনাকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে।
বখাটেদের উপর্যুপরি ছুরি ও কাটারির কোপে হাত ও পায়ের রগ কাটাসহ মারাত্মকভাবে আহত রাবেয়া তার দাদি ও হেনা বর্তমানে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে সিংগা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কোমখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিংগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সহস্রাধিক এলাকাবাসী ঘাতক মিঠু ও তার সহযোগীদের শাস্তির দাবীতে সোমবার প্রথম দফা ও মঙ্গলবার ২য় দফা টানা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে আসছে।
বিদ্যালয় সমূহের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, প্রধান শিক্ষক, ইউপি সদস্য, বাজার কমিটির নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ সকল শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা এসব মানববন্ধন ও বিক্ষোভ এর নেতৃত্বদেন।
এদিকে মঙ্গলবার মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ চলাকালে হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে পড়ে এলাকার ছাত্ররা। এ সময় কয়েক’শ ছাত্র জনতা বখাটে মিঠু ও তার ৪ ভাইয়ের বাড়িঘর ভাংচুর করে। পুলিশ এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।
কোমখালী গ্রামের সাগর জানায়, বখাটে মিঠু ও তার ভাইদের হাত থেকে এলাকার শিশুরা মুক্তি পাক, ওদের এমন শাস্তি হওয়া উচিত যেন আর কোন শিশু কিম্বা মেয়ের দিকে কুনজরে কেউ তাকাতে না পারে।
হবখালী ইউনিয়নের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য খোদেজা বেগম জানান, মিঠুসহ এদের ৪ ভাইয়ের যন্ত্রনায় এলাকার মানুষ ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না। হবখালী ইউনিয়নে এযাবত কালে এ ধরনের শিশু ও বৃদ্ধা নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। আমরা উপযুক্ত বিচার চাই।
এলাকার প্রবীন আইয়ুব হোসেন বলেন, এলাকার ছেলে-মেয়েদের স্কুলে-কোচিং এ আসা যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে, বাড়িতে প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ করে দিয়েছে অভিভাবকেরা। শিশুদের শিক্ষক সম্পর্কে এক ধরনের ভীতি কাজ করছে।
এদিকে বিক্ষোভ কালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি অপারেসন্স) সুকান্ত সাহা বলেন, বিক্ষোভ চলাকালে কিছুলোক হটকারীভাবে আসামি মিঠু ও তার ভাইদের বাড়িঘর ভাংচুর করতে উদ্যত হয়। তবে এলাকার পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক আছে।