নড়াইল : মসজিদে জোহরের আজান দিচ্ছেন মোয়াজ্জিন। পাশের মন্দিরে তখন শুনশান নীরবতা। দুর্গাপূজার অষ্টমীতে পূজারীরা আসছেন মণ্ডপে, পূজা দিচ্ছেন-প্রসাদ নিচ্ছেন পুরোহিতের কাছ থেকে। অন্যদিকে মসজিদে ছুটছেন মুসল্লিরা।
বিকেলে আসর নামাজের আজানের আগেই মন্দিরের বাজনা বন্ধ হয়ে গেল। নামাজ শেষ হতেই পূজা শুরু। একইভাবে সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ শেষে মুসল্লিরা মসজিদ থেকে বাড়ির পথে রওনা হলে শুরু হয় পূজার ঢোলের বাজনা।
ধর্মীয় সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত নড়াইল।
এখানে মহিষখোলায় একই স্থানে মন্দিরে চলে পূজা আর মসজিদে নামাজ। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই অভ্যাসে কারো ধর্ম পরিচালনায় কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি।
নড়াইল পৌর এলাকার মহিষখোলা সার্বজনীন দুর্গামন্দির আর মসজিদ একই স্থানে। শহরের পুরাতন সাবরেজিস্ট্রি এলাকার একই চত্বরের দুই পাশে আলাদা দুটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় মুসল্লি আর পূজারিদের কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি কখনো। এ যেন একে অন্যের পরিপূরক হয়ে আছে। পাশ দিয়ে চিত্রা নদী ধর্মীয় এই সম্প্রীতির সাক্ষী হয়ে বয়ে চলেছে।
মসজিদের মুয়াজ্জিন ও খাদেম সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের আজান ও নামাজের সময়সূচি তৈরি করেছেন তারা। সেই মতে পূজা চলে, আমরাও নামাজ পড়ছি নির্বিঘ্নে। আমরা খুবই শান্তিতে ধর্ম পালন করছি।’
মহিষখোলা পুরাতন সাব-রেজিস্ট্রি জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. ইনামূল হক বলেন, ‘১০ বছর ধরে এখানের মসজিদে আছি। মসজিদের পাশেই রয়েছে মন্দির। এ পর্যন্ত ধর্ম পালনে কোনো সমস্যা হয়নি, ইনশাল্লাহ আগামীতেও হবে না।’
মন্দিরের সাংগঠনিক সম্পাদক শিক্ষক প্রলয় কুমার ভৌমিক বলেন, ‘আমাদের নদীর বাধাঘাটে আমরা পূজার সরঞ্জাম ধুয়ে পবিত্র করি, মুসলিম ভাইয়েরা একই জায়গায় ওযু করেন। এটা আমাদের সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এটা যুগ যুগ থাকুক তাই চাই।’
মন্দিরের পুরোহিত অমর কৃষ্ণ সমাদ্দার বলেন, ‘তাদের নামাজ আর আমাদের পূজার নাচ-গানে কোনো সমস্যা হচ্ছে না, বরং মুসলিমরা আমাদের ওপর কেউ ঝামেলা করতে আসলে তা প্রতিহত করে। আমরা যুগ যুগ ধরে একসাথেই চলছি।’
মন্দিরে পূজা দেখতে আসেন মুসলিম নারীরা। সন্তান নিয়ে পূজার মেলায় ঘুরতে আসা সাগরিকা বলেন, ‘আমাদের একই স্থানে পূজা আর নামাজ চলে, এটাই আমাদের নড়াইলের গৌরব। আমরা এটি নিয়ে গর্ববোধ করি।’
পুলিশ সুপার সাদিরা খাতুন এই বিষয়ে বলেন, ‘সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আমাদের নড়াইল। এটাই বাংলাদেশের চিত্র হওয়া উচিত। তারা নিজেরাই নিজেদের সব ব্যবস্থা ঠিক করেন।’