শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৬, ১১:০৯:৪৫

মাটির স্কুল, এখান থেকে শিক্ষা লাভ করেছেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী

মাটির স্কুল, এখান থেকে শিক্ষা লাভ করেছেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী

নাটোর: মাটির এই স্কুলটির বয়স এক শ চার। নাটোরের সিংড়া উপজেলায় চৌগ্রাম গ্রামে নিজের বাড়ির পাশে তৈরি করেছিলেন জমিদার রমণীকান্ত রায়। সেটি দেখতে গিয়েছিলেন রেজাউল করিম রেজা

নাটোর শহর থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে নাটোর-বগুড়া হাইওয়ের পাশে চৌগ্রাম গ্রাম। মহাসড়কের মাত্র দুই শ গজ দূরে চৌগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ। চিনতে অসুবিধা হলো না। স্কুলের পাশেই জমিদারবাড়ি। একেবারে ভগ্নপ্রায়। জানতে পারলাম, প্রায় শত বছরের বেশি সময় আগে মাটির এই স্কুলটি তৈরি করেছিলেন এই বাড়িরই একজন। জমিদার রমণীকান্ত রায় চলনবিল অঞ্চলে শিক্ষাবঞ্চিত

জনগোষ্ঠীর শিক্ষা বিস্তারের জন্যই উচ্চ বিদ্যালয়টি স্থাপন করেছিলেন। জানা যায়, স্কুলের নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন ১৯০৩ সালে। আবার কেউ কেউ বলেন, ১৯১০ সালে এই স্কুলভবনটি মাটির দেয়াল দিয়ে তৈরি করা হয়। ১৯১৩ সালে স্কুলটি তৎকালীন কলকাতা বোর্ড থেকে অনুমোদন পায়। ছাত্রদের থাকা ও লেখাপড়ার সুবিধার জন্য স্কুললাগোয়া আবাসিক ভবনও তৈরি করা হয়।

টিনের চালা দিয়ে তৈরি এই স্কুলে কোনো জানালা নেই। ঘরের দুই পাশেই দরজা ও বারান্দা। বারান্দা টানা দীর্ঘ। মাটির দেয়ালে চুনা লাগানো হয়েছিল। সেগুলো খসে পড়ে নানা রকম নকশার মতো দেখতে হয়েছে। মোট ৪৮টি দরজা। মাথার ওপর মাটির তৈরি চাতাল, যা ঘরগুলোকে ঠাণ্ডা রাখে। এখানে যারা লেখাপড়া করত তাদের শিক্ষার অধিকাংশ ব্যয় বহন করতেন জমিদার রমণীকান্ত রায়। এ ছাড়া আশপাশের গ্রামগুলোতে বিত্তবান গৃহস্থরা লজিং রেখে তৈরি করে দিতেন উচ্চ শিক্ষার পথ।

চলনবিলের সর্বত্র এখন উন্নয়নের ছোঁয়া। চৌগ্রামও ব্যতিক্রম নয়। এই গ্রামেই রয়েছে মহাসড়কের পাশে বাজার ও ইউনিয়ন পরিষদ ভবন। তৈরি হয়েছে নতুন দালানকোঠা। এখন মাটির স্কুলভবনের পাশে তৈরি হয়েছে দ্বিতল পাকা ভবন। তবে শুধু পাকা ভবনেই ক্লাস হয় না, মাটির ভবনেও ছাত্ররা ক্লাস করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। মাটির ভবনে গিয়ে দেখতে পেলাম ক্লাস চলছে। দশম শ্রেণির ছাত্রী আছিয়া খাতুন বলেন, ‘শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা মনে করেন এটি আমাদের ঐতিহ্য।’ দশম শ্রেণির ছাত্র সারফুল ইসলাম জানান, শতবর্ষী এই স্কুলের ছাত্র হিসেবে নিজেদের ভেতরে এক ধরনের গর্ব অনুভব হয়।

স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক রাশেদুল ইসলাম জানান, ‘চলনবিলের বেশির ভাগ বাড়ি-ঘরই মাটির কোঠার তৈরি। সময়ের বিবর্তনে গ্রামগুলোতেও এখন তৈরি হচ্ছে পাকা বাড়ি। কমে আসছে কোঠার বাড়ির চলন। এই ঘরগুলো গরমের সময় শীতল আর শীতের সময় গরম। ফলে ঘরগুলো বসবাসের জন্য আরামদায়ক। আমরা এই স্কুলের মাটির ভবনটিকে চলনবিলের ঐতিহ্য মনে করে এখনো ক্লাস নেওয়া চালিয়ে যাচ্ছি।’ স্কুলের প্রধান শিক্ষক এরশাদুল ইসলাম বলেন, ‘এই স্কুল থেকেই হাজার হাজার ছেলেমেয়ে শিক্ষা লাভ করেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই সরকারের উচ্চ পদে রয়েছেন। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে ১০৪ বছরেও স্কুলটি জাতীয়করণ হয়নি। স্কুলটিকে সম্প্রতি কলেজে উন্নীত করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে সরকারি অনুমোদন না পাওয়ায় সেটাও থেমে আছে।’-কালের কন্ঠ
২৯ অক্টোবর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে