নাটোর : হারিয়ে যাওয়ার ২৭ বছর পর মেয়েকে পেয়ে কাঁন্না থামলো মায়ের। মেয়ের আশায় থেকে শোকাহত বাবা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আগেই।
দীর্ঘ ২৭ বছর পর স্বজনদের খুঁজে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মনোয়ারা খাতুন কালি।
নাটোরের আমহাটি গ্রামের মনোয়ারা খাতুন কালির দুই যুগেরও বেশি সময় পর বাড়িতে ফিরে আসায় আমহাটি গ্রামে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
প্রয়াত আব্দুস সাত্তারের ছোট মেয়ে মনোয়ারা খাতুন কালি। তিন বোন আর দুই ভাইয়ের সবচেয়ে ছোট মনোয়ারা খাতুন কালি। গায়ের রং কালো হওয়ায় সবাই তাকে আদর করে কালি নামে ডাকতো।
অভাবের সংসারে বাবা-মায়ের হাল ধরতে ছোট্ট মেয়েটির ঠাঁই হয় ঢাকার এক ব্যবসায়ী পরিবারে। গৃহকর্মী হিসেবে কাজ পায় সেই বাসাতেই।
কিন্তু গরিবের কপালে সুখ টেকে না। ক’দিন যেতে না যেতেই তার ওপর নেমে আসে অত্যাচার।
গৃহকর্তার নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে যায় কালি। আশ্রয় পায় অন্য একটি বাড়িতে। সেখানে গিয়ে বলতে পারেনি বাড়ির ঠিকানা। গৃহকর্মী হিসেবে কাজ পায় সেই বাসাতেও। বাড়ির ঠিকানা মনে করতে না পারায় হাহাকার ছিল।
শুধু মনে করতে পারতো নাটোরের বড় এক মন্দিরের পাশে পরিবারের সঙ্গে মেলা দেখতে গিয়েছিল। তার কথামতো গৃহকর্তা বেশ কয়েকবার নাটোরে গিয়েও কোনো ঠিকানা পাননি।
এদিকে পাগলপ্রায় হয়ে মেয়েকে খুঁজতে থাকেন তার বাবা। একসময় শোকাহত বাবা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এর মাঝে কেটে গেছে অনেকটা বছর।
একসময় বিয়ে হয় কালির। ঢাকার মগবাজারের ইলেকট্রিক মিস্ত্রি হারুন অর রশিদের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। তাদের দুই ছেলে আকাশ, আয়ানকে নিয়ে বেশ সুখের সংসার। তবুও মা-বাবা, ভাই-বোনদের কথা মনে হলে বুকটা হাহাকার করে উঠত কালির।
কিছুদিন আগে প্রতিবেশী এক গামেন্টকর্মীর সঙ্গে কথা হয় কালির। কালি জানতে পারে, তার বাড়ি নাটোরে। কালি সব ঘটনা তাকে খুলে বলে। গামেন্টকর্মী তার পরিবারের সন্ধান করতে থাকে। সেই গার্মেন্টকর্মীর মাধ্যমেই তিনি ফিরে পান তার জন্ম ঠিকানা। মা, ভাই-বোনসহ স্বজনদের কাছে ফিরতে পেরে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে।
৬ ফেব্রুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম