এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : নাটোরে আলোচিত চিকিৎসক ও জনসেবা ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারী ডা. এএইচএম আমিরুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় তার ব্যক্তিগত সহকারী আসাদুল মিয়া আসাদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছে ত্রিভুজ প্রেমের জটিলতা।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় শহরের মাদ্রাসামোড় এলাকায় জনসেবা ক্লিনিকের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন এ তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার বলেন, ঘটনার পর থেকেই তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা বিশ্লেষণের মাধ্যমে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদের পর, ডা. আমিরুল ইসলামের ব্যক্তিগত সহকারী আসাদুল মিয়াকে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে শনাক্ত করা হয়।
আসাদ বগুড়ার ধুনট উপজেলার ইলিয়াস আকন্দের ছেলে। ২০২৪ সালে এইচএসসি পাস করার পর তিনি টিএমএসএস মেডিকেলে ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে চাকরি শুরু করেন। পরে নাটোরে এসে জনসেবা ক্লিনিকে ডা. আমিরুল ইসলামের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে তিন বছর কর্মরত ছিলেন।
কর্মকালীন সময়ে হাসপাতালের এক নারী স্টাফের সঙ্গে আসাদ ও ডা. আমিরুল ইসলামের ত্রিভুজ প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। এ নিয়ে তিন জনের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়। এই দ্বন্দ্বের জেরে গত ২৫ আগস্ট ডা. আমিরুল ইসলাম ওই নারী স্টাফ ও আসাদকে ক্লিনিকের একটি কক্ষে ডেকে মারধর করেন। একই সঙ্গে আসাদকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন। অপমানিত ও ক্ষুব্ধ হয়ে আসাদ বগুড়ায় ফিরে যান এবং প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, তিনি ১ হাজার ৩০০ টাকায় একটি বোরকা ও দুটি ধারালো ছুরি কিনে নাটোরে ফিরে আসেন। ৩১ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে বোরকা পরে হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ডা. আমিরুল ইসলামের কক্ষের সামনে অবস্থান নেন। কক্ষে ডাক্তার উপস্থিত থাকায় তিনি সিঁড়িতে লুকিয়ে থাকেন এবং পরে সুযোগ বুঝে কক্ষে ঢুকে খাটের নিচে আত্মগোপন করেন।
রাত ১টার দিকে ডা. আমিরুল ইসলাম প্রতিদিনের মতো ঘুমের ওষুধসহ অন্যান্য ওষুধ সেবন করে ঘুমিয়ে পড়েন। এরপর ভোর ৪টার দিকে ঘুমন্ত অবস্থায় তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ধারালো ছুরি দিয়ে নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যা করেন আসাদ। ভোর সোয়া ৬টার দিকে ক্লিনিক থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় সিংড়ার আইসিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এলাকায় নদীতে বোরকাটি এবং নন্দীগ্রাম এলাকায় দুটি ছুরি ফেলে দেন।
পুলিশ পরবর্তীতে অভিযান চালিয়ে আসাদকে গ্রেপ্তার করে। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যার কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন জানান, আসাদ দীর্ঘদিন ডা. আমিরুল ইসলামের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করায় তার চলাফেরা, রুটিন এবং অভ্যাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতেন। নারী স্টাফের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে তৈরি হওয়া ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ও ক্ষোভ থেকেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। আসাদ আদালতে স্বীকারোক্তি দিতেও রাজি হয়েছে।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নাটোর শহরের মাদ্রাসা মোড় এলাকায় জনসেবা ক্লিনিকের নিজ কক্ষ থেকে ডা. এএইচএম আমিরুল ইসলামের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত চিকিৎসকের স্ত্রী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।