সোমবার, ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১১:১১:০৪

সেপটিক ট্যাংকে ছেলের লাশ দেখে মায়ের করুণ আর্তনাদ

সেপটিক ট্যাংকে ছেলের লাশ দেখে মায়ের করুণ আর্তনাদ

নাটোর : ভারতীয় এক টিভি চ্যানেলের একটি সিরিয়াল দেখে নাটোরে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের আগেই বন্ধুকে খুন করে দুই কিশোর আর তাদের এক সহযোগী।  খুন করার পর তারা ধরা পড়েছে র‍্যাবের হাতে।  একটি সেপটিক ট্যাংক থেকে নিহত মাদ্রাসাছাত্র তানভীরের লাশটি উদ্ধার করা হয়েছে।

একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে হারিয়ে মা-বাবা এখন পাগলপ্রায়।  তারা খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

আটক তিন কিশোর হুসাইদ হোসেন (১৫), বাইজিদ হাসান (১৪) ও নাঈম হোসেন।  তারা পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য তানভীরকে হত্যা করে লাশ গুম করার কথা স্বীকার করেছে।

তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে জেলা শহরের আলাইপুর আশরাফুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসার পাশের এক বাড়ির টয়লেটের সেপটিক ট্যাংক থেকে (র‍্যাব)-৫ তানভীরের লাশ উদ্ধার করে।

নাটোর সদর থানা ও র‍্যাব সূত্রে জানা যায়, শহরের উত্তর বড়গাছা হাফরাস্তা এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে তানভীর হোসেন (১১) চার বছর ধরে আলাইপুর আশরাফুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসায় পড়ালেখা করছিল।  এরই মধ্যে সে ৯ পারা কোরআন মুখস্থ করেছে।  

২৫ আগস্ট মঙ্গলবার দুপুরে তার মা ফিরোজা বেগম ও বাবা সাইফুল ইসলাম ওরফে তুষার মাদ্রাসায় গিয়ে তাদের একমাত্র সন্তানকে দুপুরের খাবার খাইয়ে দিয়ে আসেন।  রাতে খাবার নিয়ে যাওয়ার পর মাদ্রাসায় তাকে আর পাওয়া যায়নি।  অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাকে না পেয়ে ওই রাতেই সাইফুল ইসলাম সদর থানায় একটি জিডি করেন।

তিনদিন পর ২৮ আগস্ট মুঠোফোনে তানভীরকে অপহরণ করা হয়েছে জানিয়ে তার বাবার কাছে মুক্তিপণ হিসেবে ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়।  টাকা দেয়ার আগে ছেলের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে অপহরণকারীদের একজন ছদ্মবেশে কথা বললে সাইফুল বুঝতে পারেন যে, ওই কণ্ঠ তার ছেলের নয়।

ঘটনাটি তখন তিনি র‍্যাবের সদর দপ্তরে জানান।  র‍্যাব সদস্যরা মুঠোফোনে আড়ি পেতে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় অপহরণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তানভীরের সহপাঠী সিংড়া উপজেলার জোড়মল্লিক গ্রামের মোক্তার হোসেনের ছেলে হুসাইদ হোসেন ও বাগাতিপাড়া উপজেলার নওপাড়া গ্রামের বাবুল হাসানের ছেলে বাইজিদ হাসানকে আটক করেন।

পরে স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তাদের সহযোগী শহরের কালুরমোড়ের আবদুর রহিমের ছেলে নাঈম হোসেনকেও আটক করে র‌্যাব।  প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনজনই তানভীরকে হত্যা করার কথা স্বীকার করে।  পরে তাদের দেয়া তথ্য মতে মাদ্রাসার পাশে জনৈক আবুল কাশেমের টয়লেটের কাঁচা সেপটিক ট্যাংক থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়।

লাশ উদ্ধারের সময় র‍্যাব-৫-এর কমান্ডিং অফিসার কর্নেল মাহবুব হোসেন, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুন্সি সাহা্বুদ্দিন, নিহত কিশোরের বাবা সাইফুল ইসলাম ও মা ফিরোজা বেগম উপস্থিত ছিলেন।

হত্যার নেপথ্য কাহিনী

আটক হুসাইদ হাসান আজ সকালে গণমাধ্যমের কর্মীদের জানায়, তারা ভারতীয় সনি টিভি চ্যানেলের একটি সিরিয়াল দেখে অপহরণের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করে।  এ জন্য তাদের সহপাঠী তানভীরকেও বেছে নেয় তারা।  কারণ সে বাবা-মার একমাত্র সন্তান।  খুব সহজেই টাকা পাওয়া যাবে।  গত ২১ আগস্ট তাদের বন্ধু নাঈমের দোকানে গিয়ে তারা অপহরণ ও খুনের পরিকল্পনা করে।

যেভাবে খুন করা হয়

আটক বাইজিদ হাসান সাংবাদিকদের জানায়, ঝামেলা এড়াতে তানভীরকে প্রথমেই খুন করার পরিকল্পনা করে তারা।  পরিকল্পনা মোতাবেক গত ২৮ আগস্ট আসরের নামাজের পর সে আর হুসাইদ নতুন মোবাইল সেট দেখার কথা বলে তানভীরকে মাদ্রাসা থেকে ডেকে পাশের একটি পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে যায়।  সেখানে রশি দিয়ে তাকে ফাঁস দিয়ে হত্যাা চেষ্টা করে।  কিন্তু তাতেও তার মৃত্যু না হলে এরপর তারা গলায় ক্ষুর চালায়।  এতে তার মৃত্যু নিশ্চিত হলে সেখান থেকে তারা বন্ধু নাঈমের দোকানে গিয়ে গায়ে লেগে থাকা রক্ত পরিষ্কার করে মাদ্রাসায় ফিরে আসে।

যেভাবে ঘাতকদের আটক করা হলো

র‍্যাবের উপপরিদর্শক (গোয়েন্দা) আবদুর রশিদ জানান, ঘাতক হুসাইদের এক মামার (পিটিআই মসজিদের ইমাম) মুঠোফোনের কললিস্ট পর্যালোচনা করে প্রথম হুসাইদকে আটক করা হয়।  পরে অন্যদের আটক করা হয়।  ওই মামার মুঠোফোন থেকে সর্বশেষ তারা তানভীরের বাবার মুঠোফোনে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করেছিল।

ছেলেহারা মায়ের আকুতি

একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে মা ফিরোজা বেগম পাগলপ্রায়।  টয়লেটের সেপটিক ট্যাংক থেকে ছেলের লাশ ওঠানো দেখে তার কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।  ছেলের মাথার চুল ও চামড়া খসে খসে পড়তে দেখে তিনি চিৎকার দিতে থাকেন।  বারবার আল্লাহর কাছে এ ঘটনার বিচার চান তিনি।  তিনি ঘাতকদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন।
১ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে