পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রীনা বেগম (৩০) নামে এক প্রসূতিকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই হাসপাতালের এক নার্সের বিরুদ্ধে। পরে হাসপাতালের বাইরে এক গাছের নিচে ওই প্রসূতি একটি ছেলে সন্তান প্রসব করেন।
আজ শনিবার দুপুরে বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই নার্সকে শোকজ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একই সাথে ঘটনার তদন্তে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৩ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রোগীর পরিবার থেকে জানা যায়, শুক্রবার গভীর রাতে বোদা উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের বালাভিড় গোয়ালপাড়া এলাকার জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী রীনা বেগমের প্রসব বেদনা উঠে। শনিবার সকাল ৮ টায় তাকে বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে পরিবারের লোকজন। দুপুরে রীনার প্রমথ সন্তান অস্ত্রপচারের মাধ্যমে জন্ম দেওয়ার কথা শুনে হাসপাতালের মিডওয়াইফ নার্স সাবানা বেগম ওই রোগীকে ছাড়পত্র দিয়ে পঞ্চগড় বা ঠাকুরগাঁও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন।
এ সময় ওই প্রসূতির স্বামী জাহিদুল ইসলাম টাকা ও গাড়ির ব্যবস্থা করতে যান। এদিকে ছাড়পত্র দেওয়ার পরও ওই রোগী হাসপাতাল ত্যাগ না করায় তাদের চাপ দিয়ে থাকে নার্স সাবানা বেগম। কিন্তু স্বামী ফিরে আসার অপেক্ষায় বসে ছিলো ওই প্রসূতি। এক পর্যায়ে তাদের হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করে ওই নার্স। ননদ রেজিনাকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে হাসপাতালের সামনের একটি ইউক্যালিপটাস গাছের নিচে অপেক্ষা করছিলেন ওই প্রসূতি। কিছুক্ষণ পর সেখানেই একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন তিনি। এটি তার তৃতীয় সন্তান। পরে ওই হাসপাতলের পরিচ্ছন্ন কর্মী সোহাগী নবজাতক ও প্রসূতিকে হাসপাতালের ওয়ার্ডে নিয়ে যান।
এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে স্থানীয়রা। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তেই। অবস্থা বেগতিক দেখে হাসপাতালে ছুটে আসেন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. আফরোজা বেগম ও বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসপাতালে ওই প্রসূতিকে দেখতে যান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাৎক্ষণিক ওই রোগীকে দুই হাজার টাকা অর্থ সহায়তা দেন। এ ঘটনায় ওই প্রসূতির পরিবারসহ স্থানীয়রা দোষীদের বিচার দাবি করেছেন।
ওই প্রসূতি রীনা বেগম বলেন, ছাড়পত্র দেওয়ার পর আমি আমার স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু নার্স সাবানা আমাকে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করে। নিরুপায় হয়ে আমি আমার ননদ রেজিনা আক্তারকে নিয়ে হাসপাতালে বাইরের একটি গাছের নিচে আশ্রয় নেই। সেখানেই আমার সন্তান প্রসব হয়।
রীনার স্বামী জাহিদুল ইসলাম জানান, আমাদের সাথে যে আচরণ করা হয়েছে তা অমানবিক। আমরা চাই তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক যাতে আর কোনো প্রসূতি মাকে এমন পরিস্থিতির শিকার হতে না হয়।
বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস আই এম রাজিউল করিম রাজু জানান, ওই মিডওয়াইফ নার্স সাবানা বেগমকে শোকজ করা হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনার কারণ জানতে বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. জাহিদ হাসানকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহমুদ হাসান জানান, বিষয়টি জানতে পেরে আমি হাসপাতালে ওই রোগীকে দেখতে যাই। আমি বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগকে অবহিত করি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মিডওয়াইফ নার্স সাবানা বেগম বলেন, রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে আমি তাদের অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি মাত্র।