শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৭, ০১:১৪:৫৩

রংপুরে কার কত সম্পদ

রংপুরে কার কত সম্পদ

শফিকুল ইসলাম সোহাগ ও শাহজাদা মিয়া আজাদ, রংপুর থেকে : রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর আয় সবচেয়ে বেশি। ঝন্টুর চেয়ে ঋণ বেশি থাকলেও জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার আয় অনেক কম।

মোস্তফার চেয়ে বিএনপির কাওসার জামান বাবলার আয় অনেক বেশি হলেও তিনি ঋণগ্রস্ত। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী প্রার্থী হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফের আয় ও ঋণ মোস্তফার চেয়ে কম। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া প্রধান চার প্রার্থীর হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এ নির্বাচনে মেয়র পদে ১৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

আগামী ৩ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। ভোট গ্রহণ ২১ ডিসেম্বর। হলফনামায় দেওয়া তথ্যানুযায়ী, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু বিকম পাস। মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করে তিনি আবারও প্রার্থী হয়েছেন। তার কোনো কৃষিজমি নেই।

বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৪৫ লাখ ৯৩ হাজার ১৪০ টাকা। এর মধ্যে মেস ভাড়া থেকে পান ৭৫ হাজার টাকা, স্ত্রীর ব্যবসা থেকে ৫ লাখ ৭১ হাজার টাকা, তার ওপর নির্ভরশীল ছেলের চাকরি থেকে ১৩ লাখ ৩৩ হাজার, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ৫০০, মেয়র সম্মানী থেকে ১১ লাখ ৪ হাজার, ছেলের ভবন ভাড়া থেকে ১৩ লাখ ৮২ হাজার ৬৪০ টাকা আয় করেন।

তার নিজ নামে নগদ টাকা আছে ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫৭, স্ত্রীর নামে ১৬ লাখ ২৭ হাজার ৩৮ টাকা, নির্ভরশীলের নামে ৮৪ হাজার ৩৬৬ টাকা আছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি। এ ছাড়া তার নামে ব্যাংকে আছে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ২৪ টাকা, স্ত্রীর নামে ৪ লাখ ৫০ হাজার ৬২ টাকা এবং নির্ভরশীলের নামে ৫ লাখ ২৩ হাজার ৩৩৮ টাকা। এ ছাড়াও শেয়ার হিসেবে নিজ নামে ১৪ লাখ ১৯ হাজার ৪৩৩ টাকা এবং নির্ভরশীলের নামে ৫ লাখ টাকা আছে।

তার পোস্টাল ও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ আছে নিজ নামে ২ লাখ, নির্ভরশীলদের নামে ১৭ লাখ টাকা। তার নির্ভরশীলের নামে একটি প্রাইভেট কার, নিজ নামে ২ ভরি সোনা, স্ত্রীর নামে ৬ ভরি এবং নির্ভরশীলদের নামে ১৩ ভরি সোনা থাকার কথাও উল্লেখ করা হয় হলফনামায়। নির্ভলশীলদের নামে ৬০ শতক কৃষিজমি ও ৩ কাঠা অকৃষি জমি আছে।

অন্যদিকে তার নিজ নামে ৮ শতক জমির ওপর মেস, ৩ শতক জমির ওপর নির্মাণাধীন বাণিজ্যিক ভবন, নির্ভরশীলের নামে ৭ শতক জমির ওপর মেস, ২৩ শতক জমির ওপর বাণিজ্যিক ভবন এবং স্ত্রীর নামে ৩ শতকের ওপর তিনতলা বাড়ি আছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে। ঝন্টুর ঋণ আছে ৯ লাখ টাকা।

জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক। মেয়র প্রার্থী হওয়ার আগে তিনি ঠিকাদারি করতেন। হলফনামায় তার বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ৩ লাখ ৬৪ হাজার ২৭২ টাকা। এর মধ্যে বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে ৭২ হাজার এবং ব্যবসা থেকে ২ লাখ ৯২ হাজার ২৭২ টাকা আয় আসে তার। বর্তমানে নিজ নামে নগদ টাকা ৭ লাখ ৫০ হাজার, স্ত্রীর নামে আছে ২০ হাজার টাকা।

আর ব্যাংকে জমা আছে নিজ নামে ১ লাখ ৫০ হাজার, স্ত্রীর নামে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। আছে একটি মোটরসাইকেল। তার নিজের নামে সোনা না থাকলেও স্ত্রীর সোনা আছে ১০ ভরি। মোস্তফার নিজ নামে ১৬ শতক এবং স্ত্রীর নামে ৬ শতক জমি আছে। এ ছাড়া জনতা ব্যাংকে তার নামে ১৫ লাখ টাকা ঋণ আছে।

হলফনামায় দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বিএনপির মেয়র প্রার্থী কাওসার জামান বাবলার শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক। মেয়র প্রার্থী হওয়ার আগে তিনি ব্যবসা করতেন। তার বার্ষিক আয় উল্লেখ করা হয়েছে ১৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। তিনি কৃষি খাত থেকে ৫০ হাজার, বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে ২ লাখ ৪ হাজার, ব্যবসা থেকে ১৩ লাখ টাকা আয় করেন।

অন্যদিকে তার কাছে নগদ টাকা আছে ২ লাখ, ব্যাংকে জমা আছে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। দুটি জিপ ও একটি কার আছে তার। আছে ২টি ফ্ল্যাট, ১টি বাড়ি ও ২ ভরি সোনা। বাবলার কৃষিজমি আছে ২ একর ৭৫ শতক। অকৃষি জমি আছে ১ একর ৪ শতক। বাবলার নিজ নামে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে ঋণ আছে ৮ কোটি এবং যৌথ নামে সোনালী ব্যাংকে ঋণ আছে ৪২ কোটি টাকা।

জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী প্রার্থী দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাইপো হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ এইচএসসি পাস। তিনি ব্যবসা করতেন। তার নামে কোনো মামলা নেই। হলফনামায় তিনি বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে বাড়ি ভাড়া থেকে ৩৫ হাজার, ব্যবসা থেকে ৭ লাখ টাকা।

বর্তমানে তার কাছে নগদ টাকা আছে ৫ লাখ ৬৬ হাজার ৬২১ টাকা এবং ব্যাংকে জমা আছে ২৪ হাজার ১২৬ টাকা। তার ৩৭ লাখ ৪৫ হাজার ৮১৯ টাকা মূল্যের একটি জিপগাড়ি এবং স্ত্রীর সোনা আছে ২০ ভরি। এ ছাড়াও তার নামে ১৬ শতক অকৃষি জমি এবং একটি সেমিপাকা বাড়ি আছে। তার ব্যক্তিগত ঋণ আছে ১০ লাখ টাকা।

রিটার্নিং ও রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন আইন অনুযায়ী, হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুসন্ধান চালিয়ে বা অভিযোগ হলে অনুসন্ধান করে ভুল তথ্য পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে নির্বাচন কমিশন। মিথ্যা তথ্য দানকারী কেউ নির্বাচিত হওয়ার পর তার মেয়র পদ বাতিলও হতে পারে। বিডি প্রতিদিন
এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে