সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৮:১১:৫৪

নৌকার পক্ষে মাঠে নেই তৃণমূল নেতা-কর্মীরা

নৌকার পক্ষে মাঠে নেই তৃণমূল নেতা-কর্মীরা

রংপুর থেকে : রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আর মাত্র নয় দিন বাকি। দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঠে নিয়ে ব্যস্ত প্রচারণায় রয়েছেন প্রার্থীরা। তবে মেয়র পদে অন্যান্য প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠ দলীয়ভাবে অনেকটাই গুছিয়ে ফেললেও পিছিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু।

এখন পর্যন্ত ভোটের মাঠ অনুকূলে নিতে পারেনি নৌকার প্রার্থী। দলটির নেতা-কর্মীরা বলছেন, মেয়র প্রার্থীর সমন্বয়হীনতার কারণেই আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের ঘনিষ্ঠভাবে কাছে পাচ্ছেন না। আর এই সুযোগ কাজে লাগাতে কৌশলী অবস্থানে রয়েছেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী।

তবে মাঠ নিজের আয়ত্তে নিতে বসে নেই নৌকার প্রার্থী ঝন্টু। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ সাড়া দিলেও এখনো তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মাঠে দেখা যাচ্ছে না।

তবে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা জয়নাল আবেদীন বলেন, তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে প্রার্থীর সরাসরি কোনো যোগাযোগ না হলেও শেষমেশ তারা ঘরে বসে থাকবে না। যেহেতু নৌকা প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে।

রংপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হতে মাঠে ছিল ১৬ জন নেতা। তাদের টপকে সদ্য বিদায়ী মেয়র সরফুদ্দীন আহমেদ ঝন্টুকে মনোনয়ন দেওয়ায় বাকি ১৫ মনোনয়নপ্রত্যশীর অন্তর্জালা এখনো শেষ হয়নি। দলের স্বার্থে তারা ঝন্টুর প্রচারণায় নামলেও তা ‘দায়সারা গোছের’ বলে একাধিক নেতা মন্তব্য করেছেন।

যারা রয়েছেন তাদের বেশিরভাগই ঝন্টুর ব্যক্তিগত কর্মী ও সমর্থক। প্রচারণায় মাঠে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের বেশিরভাগই লোক দেখানো বলে জানা গেছে। নেতা-কর্মীরা মেয়র প্রার্থী ঝন্টুর সামনে এসে নৌকা নৌকা বলে হৈহুল্লোড় করলেও আড়ালে তাদের অন্য রূপ। প্রার্থীর আড়াল হলেই তারা বলে বেড়ান, আরে কী যে কন ঝন্টুকে নৌকা দিয়ে ভুল করেছে দল।

পাস করবে তো লাঙ্গল। রংপুরে লাঙ্গলেরই শক্ত অবস্থান। আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা প্রার্থী ঝন্টুর নির্বাচনী অফিসে এসে পোস্টার ও পোস্টার টাঙানোর খরচাদি নিয়ে এখন লাপাত্তা। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের এক ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক ছয়টি নির্বাচনী অফিস খরচার নাম করে টাকা নিয়ে এখন আর ধারেকাছে ভিড়ছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগরের পায়রা চত্বর এলাকার এক ব্যবসায়ী জানান, আওয়ামী লীগের বহু নেতা নৌকার পক্ষে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী মাঠে নামলে ঝন্টুর কোনো চিন্তা করতে হবে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একাধিক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে মেয়র প্রার্থী ঝন্টু নিজ উদ্যোগে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের নিয়ে বসেননি। ওয়ার্ড পর্যায়ে কোনো নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়নি। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান কার্যালয়ে যারা বসে আছেন তারাও তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সেভাবে মূল্যায়ন করছেন না।

ফলে মনোকষ্টে প্রচারণায় অংশ নিতে নেতা-কর্মীদের খুব একটা আগ্রহী হতে দেখা যাচ্ছে না। এ অভিযোগ মানতে নারাজ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল। তিনি বলেন, দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে সব পর্যায়ের নেতারাই রয়েছেন। তিনটি ওয়ার্ড নিয়ে একটি টিম কাজ করছে।

মেয়র প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু বলেন, নৌকা শুধু আমার প্রতীক নয়, এটি আওয়ামী লীগের প্রতীক। দল আমাকে প্রতীক দিয়েছে। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সব নেতা-কর্মী আমার সঙ্গে মাঠে কাজ করছেন। আমি মনে করি দলের সব স্তরের নেতা-কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে মাঠে কাজ করবেন। যেখানে যা সমস্যা হবে সেটা সমাধানের চেষ্টা করব আমি।

এক মঞ্চে ছয় মেয়র প্রার্থী : গতকাল দুপুরে নগরীর জিলা স্কুল মাঠে বেসরকারি টেলিভিশন নিউজ টোয়েন্টিফোরের জনতন্ত্র গণতন্ত্র টকশো অনুষ্ঠানে অংশ নেন ছয় মেয়র প্রার্থী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন, নিউজ টোয়েন্টিফোরের কারেন্ট অ্যাফেয়ারস সামিয়া রহমান। এ সময় মেয়র প্রার্থীদের নিকট সরাসরি বিভিন্ন দাবি জানায় সাধারণ ভোটাররা।

ভোটারদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু বলেন, আমাদের হাতে তো জাদুর কাঠি নেই, যে বললেই কাজ করা যাবে। তবে নগরের উন্নয়নে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছি। তিনি বলেন, ঢাল নেই, তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার হয়ে লাভ নেই। সিটি করপোরেশনের জনবলের অভাবে ঠিকমতো কাজ করা যায়নি। বিভিন্ন দাতা সংস্থার অনুদান আনতে চিঠি চালাচালিতেই অনেক সময় গেছে।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, আমি নির্বাচিত হলে সিটির উন্নয়নে দাতা সংস্থার সঙ্গে জোর লবিং চালাব। শত কোটি নয়, হাজার কোটি টাকার কাজ করব। বিএনপির প্রার্থী কাওছার জামান বাবলা বলেন, সিটির একটি বড় অংশ এখনো গ্রাম। আর এসব গ্রামে কোনো ধরনের উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। বিডি প্রতিদিন

এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে