শুক্রবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৬:৪৯:২৪

‘বাবা মারা গেছে, আমি আর পড়বো না’

‘বাবা মারা গেছে, আমি আর পড়বো না’

রংপুর: ‘বাবা মারা গেছে, আমি আর পড়বো না’- মৃত বাবার জানাজায় অংশ নেয়া রংপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুদ আলীর কাছে দ্বিধাহীনভাবে এ কথা বলে মরহুম সাংবাদিক ইকবাল হোসেনের আট বছর বয়সী ছোট্ট মেয়ে আফিয়া ইয়াসমিন আফিফা। মাহিগঞ্জ বেজ এডুকেয়ারে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে সে।

রংপুরের সাংবাদিক মহলসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে সৎ সাংবাদিক ও নিরহংকার মানুষ হিসেবে পরিচিত ইকবাল হোসেন মরণব্যাধি ক্যানসারে আক্রন্ত হয়ে দির্ঘদিন থাকার পর গত বুধবার রাত সোয়া ৮টায় মহানগরীর মাহিগঞ্জ দেওয়ান টুলির নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন।

বৃহস্পতিবার সকালে রংপুর প্রেসক্লাবে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানায় সর্বস্তরের মানুষ। সেখানে প্রথম নামাজে জানাজা শেষে তার মরদেহ নেয়া হয় মাহিগঞ্জ দেওয়ানটুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। বাদ জোহর এখানে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

বাবাকে শেষ বিদায় জানাতে ওই মাঠেই উপস্থিত ছিল আফিফা। সেখানেই তার সঙ্গে কথা হয় রংপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুদ আলীর।

সাংবাদিক ওয়াদুদ আলী তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “জানাজা শেষে আমি মাঠে দাঁড়িয়ে থাকার সময় ভিডিও জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহ নেওয়াজ জনি আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক যুবকের কোলে একটি শিশুকে দেখিয়ে বলল- মামা, ওই শিশুটি ইকবাল ভাইয়ের মেয়ে। ফুটফুটে শিশুটিকে দেখে আমি কোলে নিলাম। শিশুটির দুহাতে ফুল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, মা তোমার নাম কী। 

সে বলল, ‘আমার নাম আফিয়া ইয়াসমিন আফিফা।’ কোন ক্লাসে পড়- ‘ক্লাস ওয়ানে পড়ি।’ এ সময় আমি তাকে বললাম, ‘মা তোমাকে ভালোভাবে পড়াশুনা করতে হবে।’ সে জানালো, ‘বাবা মারা গেছে, আমি আর পড়বো না।’ এ কথা শুনে আমার বাকরুদ্ধ হওয়ার উপক্রম! আমি মস্তিস্কে ও হৃদয়ে রক্তক্ষরণের অনুভূতি অনুভব করলাম। চোখে জল এসে গেলো। দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে তাকে বললাম, মা তোমাকে পড়াশুনা করতে হবে। আমরা তোমার পাশে আছি। আফিফার আবারও একই উত্তর- ‘বাবা মারা গেছে, আর পড়বো না’।’’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘মাত্র ৮ বছর বয়সের কারণে এই শিশু জানে না তার জীবনে কত বড় ক্ষতি হয়ে গেছে! সে হারিয়েছে তার পিতাকে। যে তাকে প্রতিদিন আদর করত, তার পছন্দের নানা খাবার ও খেলনা নিয়ে বাড়ি ফিরত।’

রংপুর প্রেসক্লাবের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক লিখেছেন, ‘১৮ ঘণ্টা আগেই তার বাবা মারা গেছে সেই অনুভূতি আফিফার মাঝে লক্ষ্য করলাম না। এই বয়সে সেই অনুভূতি থাকার কথাও নয়। এ সময় বিবেকের কাছে নিজেকে অপরাধী মনে হলো।’

তিনি লিখেছেন, ‘ইকবাল তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও।’ আমি তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থী। কারণ, আমার ইচ্ছা, আন্তরিকতা ও স্বদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তোমাকে রংপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সদস্য পদ দিতে পারিনি। আমার প্রচেষ্টায় অনেকেই সাধারণ সদস্য হয়েছেন, বহিস্কৃত সদস্যরা সদস্যরাও পদ ফিরে পেয়েছেন। কিন্তু ইকবালের মতো একজন পেশাদার, নির্ভীক, সৎ-সাহসী, দক্ষ সাংবাদিককে আমি সাধারণ সদস্য পদ দিতে পারিনি। মা আফিফা (ইকবালের শিশুকন্যা) তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও তোমার যোগ্য পিতাকে আমি সদস্য করতে পারিনি। আমরা সাংবাদিক সমাজ মরণব্যাধি থেকে তোমার বাবাকে রক্ষা করতে পারিনি। তবে কথা দিচ্ছি, তোমার পাশে থাকবো মা।’

উল্লেখ্য, দৈনিক সমকালের স্টাফ রিপোর্টার ও রংপুর অফিস প্রধান এবং দীপ্ত টিভির রংপুর প্রতিনিধি ইকবাল হোসেন বুধবার রাত সোয়া ৮টা রংপুর মহানগরীর মাহিগঞ্জ দেওয়ান টুলি নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৪৪ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক কন্যা ও মাসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে