সোমবার, ৩০ মে, ২০১৬, ১১:৩৩:৫১

৭০ বছরের বৃদ্ধা দাদীর আশ্রয়ে থেকে জিপিএ-৫ পেল এতিম আফরিন

৭০ বছরের বৃদ্ধা দাদীর আশ্রয়ে থেকে জিপিএ-৫ পেল এতিম আফরিন

জিতু কবীর : বাবার মৃত্যুর পর কোনো দিন ভাবিনি পড়ালেখা করতে পারবো। মনে হয়েছিল বড় বোনদের মতো আমারও বিয়ে হয়ে যাবে। কিন্তু আমি এখন এসএসসি পাস করেছি। মনে হচ্ছে আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবো। অনেকটা আবেগাল্পুত হয়েই কথাগুলো বলছিল রংপুর সরকারি শিশু (বালিকা) কেন্দ্রে থাকা শাহনাজ আফরিন (১৫)।

রংপুর নগরীর জাহেদা খাতুন গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে।

শাহনাজ আফরিনের বাড়ি রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুস্করণী ইউনিয়নের দক্ষিণ অযোধ্যাপুর এলাকায়। তিন বোনের মধ্যে আফরিন সবার ছোট। তিন বছর বয়সে তার বাবা আইয়ুব আলী মারা যান। এরপর মায়ের অন্য জায়গায় বিয়ে হয়। বাবার মৃত্যু ও মায়ের অন্যত্র বিয়ের পর দাদী মাসুমা বেগম (৭০) হয়ে ওঠে তার একমাত্র আশ্রয়ের ঠিকানা। দাদির ইচ্ছে নাতনিকে লেখাপড়া শিখিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা।

এ ভাবনায় যখন মাছুমা বেগম দিশেহারা ঠিক তখনি আফরিনের চাচাতো ভাই সেলিম সমাজসেবা অধিদফতর থেকে সরকারি শিশু (বালিকা) কেন্দ্রের শূন্য আসনে ভর্তির বিষয়টি তাকে জানান। এরপর আফরিনকে ২০০৮ সালে সমাজসেবা অধিদফতরের সরকারি শিশু (বালিকা) কেন্দ্রে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। শুরু হয় তার পড়ালেখার জীবন।

সরকারি শিশু (বালিকা) কেন্দ্রের উপ-তত্ত্বাবধায়ক নূরে লায়লা জানান, আফরিনকে সরকারি শিশু বালিকা কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। তবে আফরিন শুরু থেকে পড়ালেখায় খুব মনোযোগী ছিল। স্কুলে তার পরীক্ষার ফলাফলও ভালো ছিল। এসএসসি পরীক্ষার আগে সরকারি শিশু (বালিকা) কেন্দ্রের মাধ্যমে আফরিনকে গণিত, রসায়নসহ অন্যান্য বিষয়ের উপর প্রাইভেট দেয়া হয়।

ভালো ফলাফলের অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাইলে শাহনাজ আফরিন জানায়, এটা তার জীবনের অবিস্বরণীয় একটা ঘটনা। ভালো ফলাফলের পেছনে শিশু সদনের যেমন অবদান ঠিক দাদিরও তাই রয়েছে। একজন আদর্শ শিক্ষক হয়ে সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে চায় সে। কিন্তু আগামী দিনের সেই চলার পথ তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে কিনা তা নিয়েও চিন্তিত আফরিন।

আফরিনের দাদি মাসুমা বেগম জানান, মা-বাবা হারা মেয়েটিকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। আমার ইচ্ছা তাকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার।

জাহেদা খাতুন গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ জহুরুল ইসলাম জানান, আফরিন পড়ালেখায় মনোযোগী ছিল। অনেক সময় সে বিনা টাকায় স্কুলের স্যারদের কাছে প্রাইভেট পড়েছে। এছাড়াও স্কুল থেকে তার সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়েছে। -জাগো নিউজ
৩০ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে