সাতক্ষীরা থেকে : সাতক্ষীরার কলারোয়ায় পাওনা ১০০ টাকা না দেওয়ায় এক যুবককে গলা কেটে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে তারই চাচাতো ভাই। শুক্রবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের উত্তর দিগং গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত যুবকের নাম রুবেল (২০)। তিনি হেলাতলা ইউনিয়নের হাসানুর রহমানের ছেলে।
নিহতের ছোট ভাই ইমামুল জানায়, রুবেল ভাইয়ের নিকট ১০০ টাকা পেতো চাচা আফসার আলীর ছেলে আবু সাইদ (২২)। শুক্রবার ওই টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ভাই (রুবেল) সেদিন তাকে টাকা দিতে পারেনি।
কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, ভাই ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতো। শুক্রবার অসুস্থ্য থাকায় ভ্যান চালাতে পারেনি, সারাদিন বাড়িতে ছিলো। রাত ৮টার দিকে চাচাতো ভাই আবু সাইদ বাড়িতে আসে। এ সময় রুবেল ভাই তাকে দুই দিন পর টাকা ফেরত দেওয়ার কথা জানালে আবু সাইদ ক্ষিপ্ত হয়ে মারপিট শুরু করে।
ইমামুল বলেন, ঘটনার সময় তাদের বৃদ্ধ দাদা মালেক সরদারসহ বাড়ির সদস্যরা রুবেলকে উদ্ধার করতে গেলে আবু সাইদ তাদেরকেও মারপিট করে। এক পর্যায়ে তার কাছে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে রুবেল ভাইয়ের গলায় আঘাত করলে সে মাটিতে পড়ে যায়। পরে আবু সাইদ ভাইয়ের (রুবেল) গলা কেটে দিয়ে পালিয়ে যায়।
ঘটনার পর স্থানীয়দের সহায়তায় রুবেল ভাইকে উদ্ধার সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ইমামুল আরও বলেন, ‘আমার সামনেই ভাইকে জবাই করে হত্যা করেছে চাচাতো ভাই আবু সাইদ। আমি ভয়ে কোনো কথা বলতে পারিনি।’
বৃদ্ধ দাদা মালেক সরদার জানান, ‘আমিসহ বাড়ির অনেকে রুবেলকে উদ্ধারের চেষ্টা করেছি কিন্তু আবু সাইদ আমাকেসহ পরিবারের সদস্যদের মারপিট করেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার সামনে এক ভাই আরেক ভাইকে হত্যা করলো। আমি কিছুই করতে পারলাম না।’
নিহত রুবেলের স্ত্রী তাসলিমা জানান, ‘আমি আশাশুনি উপজেলায় নিজ বাবার বাড়িতে ছিলাম। রাতে খবর পেয়ে আজ শনিবার সকালে কলারোয়াতে এসেছি। আমি একটি কন্যা সন্তানের (৯ দিন বয়স) মা হয়েছি। আগামী রোববার নিজের মেয়েকে প্রথম দেখার জন্য রুবেল আশাশুনিতে যাবে বলেছিলো। মেয়েকে তার আর দেখা হলো না।’ তাসলিমা এসব কথা বলার সময় একাধিকবার মূর্ছা যাচ্ছিল।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিপ্লব দেব নাথ জানান, খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছি। পরে রাত সাড়ে ১০ টার দিকে সাতক্ষীরা সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) মেরিনা আক্তার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় নিহত রুবেলের ছোট ভাই ইমামুল বাদি হয়ে কলারোয়া থানায় একটি হত্যা মামলা (নং-২১) দায়ের করেছেন। শুক্রবার রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে আবু সাইদের মা তরুনা বিবি (৪৩) কে গ্রেপ্তার করেছে এবং হত্যকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করে জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় ঘাতক আবু সাইদকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান ওসি।
এমটিনিউজ/এসএস