আব্দুর রহমান মিন্টু, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: আশাশুনির মরিচ্চাপ ব্রীজটি মূল পাটাতন হারিয়ে পুরাতন পাত কেটে-ছিড়ে ঝালাই+পুটিতে ইতোপূর্বে চলছিলো কোন রকম। তাও পটি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দুমড়ে-মুচড়ে গর্ত আর অগনিত ফাঁক হয়ে চালনের আকার ধারন করেছে। যানবহন তো দূরের কথা, পায়ে হাটার পথও হারিয়ে ফেলেছে প্রায়। ১শ টি পাটাতন থাকলে ৪শতাধিক পটি মারা হয়েছে। বাস্তব চিত্র দেখলে করুন ভগ্নদশাটা মর্মে মর্মে অনুভব করা যায় কিন্তু লিখে বুঝানোটা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
এ যেন সর্গের সিড়ি বেয়ে ১০ মিনিট যোগাযোগ ব্যবস্থা। বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে দেশে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে দিয়েছে। কিন্তু বর্তমান এ আসনের সাংসদ সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রী আ.ফ.ম রুহুল হক বহুবার এ ব্রীজ বেয়ে চলেছেন। তখন থেকে ভগ্নদশা থাকলেও এলাকাবাসীর দাবীর মূখে বার বার ঝালাই-পটির ব্যবস্থা করেছেন মাত্র। প্রতিনিয়ত ভ্যান, ইঞ্জিন চালিত ভ্যান, মহেন্দ্র, মটর সাইকেল, পিক-আপসহ ছোট বড় যাত্রীবাহী ও মালবাহী বাহন ভাঙ্গায় পড়ে ভেঙ্গে-দুমড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, রক্তাক্ত জখম হয়ে আহত হচ্ছে যাত্রীরাও। ইতোপূর্বে পুঙ্গত্ব বরন করতে হয়েছে বহু যাত্রী ও পথচারীদের। উপেক্ষিত হচ্ছে পুনঃনির্মাণ করে ঢালাই করা কংক্রিটের বেইলি ব্রীজের গনদাবী।
সাতক্ষীরা থেকে আশাশুনি উপজেলায় হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র যোগাযোগ পথ মরিচ্চাপ ব্রীজটির বেহাল দশা সূরহ হচ্ছে না, অথচ নতুন করে খোলপেটুয়া ব্রীজ নির্মান নিয়ে দোড়ঝাপটা ভূক্তভোগীদের কাছে এখন দারুনভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। আদৌ কি এ সরকারের সময় এর সফল দেখতে পাব ? তাদের জীবদ্বশায় মনে হয় ব্রীজটি আর সূরহ হবেনা। কারণ উপজেলা সদরে ঢুকতেই যে ব্রীজটি সরকারের গুন-গান করবে তার অবস্থা যদি এই হয়, তা হলে গ্রামে আর কি উন্নয়ন হবে ? মনে হয় উন্নয়ন কর্মীরা পাওয়ারফুল ঘুমের ঔষধ খেয়েছেন ? কারন স্থানীয় সাংসদ এখন প্রায় আশাশুনিতে আসেননা, উন্নয়নের কোন বিষয়ে খেয়াল করেন না বললেই চলে।
শুধুমাত্র কোন অনুষ্ঠান বা এমপির উপস্থিতির প্রয়োজন বলোবদ হয়ে পড়ে, তখনই অলিখিত বিশেষ এক ব্যক্তিকে প্রতিনিধি পাঠিয়ে দায় সারছেন মাত্র। সচেতন মহলের বক্তব্য, যেমন নিজের ছেলে না কাঁদলে দুধ পায়না, আশাশুনির সন্তান এমপি না হওয়ায় বুধহয় ব্রীজসহ উপজেলার অবকাঠামো উন্নয়নে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদতে হবে। নানা জনে নানা প্রশ্ন, কে দেবে তাদের এ প্রশ্নের জবাব।
সাংবাদিকদের সংশ্লিষ্ট জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় সমস্যা তুলে ধরতে ধরতে হাতে ব্যাথা হয়েছে, তেমনি কর্তৃপক্ষের শুনতে আর পড়ে জানতে জানতে চোখ অন্ধ হয়ে গেছে। কারণ পত্রিকায় লিখে যদি তেমন কাজ হত, তা হলে হচ্ছেটা কি ? শুধু অন্ধলোকের হাত ধরে চলার মত কোন রকম সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিজস্ব দাপ্তারিক লোক দিয়ে পুরাতন বার্জের পাত কেটে ছোট ছোট খন্ড করে ঝালাই-পটি দিয়ে চলার ব্যবস্থা করেন মাত্র। ব্রীজটি মোট ৫টি পার্টের চাপড়া পারের ৩টি পার্ট জাপান ও ২টি পার্ট চায়না’র সরবরাহকৃত সরঞ্জাম দ্বারা নির্মিত। চায়না পাট বিগর্ত ৫/৬ বছর পূর্বে নষ্ট হলে টেন্ডারে নতুন গ্যাল্বানাইজ পাতি দেয়ার কথা থাকলেও ঠেকাদার সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্তাব্যক্তিদের ম্যানেজ করে পাতলা লোহার পাত লাগানোই ৬মাসের মধ্যে পূর্বের স্থানে ফিরে যায়। বাকী জাপানের পার্ট কিছু কিছু জায়গায় নষ্ট হলে তাও একই পাত দিয়ে ঠিক করায় একই অবস্থায় ফিরে যায়। সে থেকে চরম ভোগান্তিতে আছে এলাকাবাসী। ইংরাজী ১৯৯১ সালে ততকালীন সরকার ব্রীজের উদ্বোধন করে ১৯৯৪ সালে দক্ষিন ধারের(আশাশুনি) এ্যাপ্রোজ রোড বাদে ব্রীজের কাজ সম্পন্ন হয়।
দীর্ঘ সময় পর ব্রীজটি এখন মরন ফাদে পরিনত হয়েছে কিন্তু এ জনদূর্ভোগ দেখার যেন কেহ নেই। বিগত ১বছর পূর্বে ব্রীজের মূখে ৫টনের অধিক ভারী কোন যান বহন পারা-পার হওয়ার উপর কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা বোর্ড ঝুলিয়ে দিলেও কার কথা কে শোনে। ২৫/৩০টনের মালবাহী ট্রাক চলতে চলতে এখন স্বাভাবিক চলাচলের যোগ্যতাও হারিয়ে ফেলেছে। এখন প্রতিনিয়ত যে কোন ধরনের গাড়ী গর্তে পড়ছে, আর তা চাকার হাওয়া সরিয়ে জগ দিয়ে তুলতে তুলতে দীর্গ জ্যাম পড়ে দূর্ভোগে পড়তে হচ্ছে সব যাত্রী ও পথচারীদের। সবচেয়ে বেশী সমস্যা সন্ধ্যার পর ব্রীজে কোন লাইটের ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিনিয়ত পথচারী, যাত্রী বাহী বাহন গর্তে ঢুকে রক্তাক্ত জখম ও গুরুতর আহত হচ্ছে। অনেক ব্যক্তি কটুক্তি করে বলেন, না হয় আবারো পূর্বের ন্যায় খেয়া পারাপার ব্যবস্থা করুক, ব্রীজ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তুলে নিয়ে যাক। এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে কোন মটর সাইকেল চালকের সাথে পথচারী সালাম বিনিময় করলে নির্ঘাত চাকা গর্তে ডুকতে বাধ্য। চলতে-ফিরতে এলাকাবাসী এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘একটু খয়রি কাগজে নেক দিন, দেয় সরকার বা আফিস আলারা স্যাকোডা ঠিক কুর দেয় কেওন’। এতকিছু লেখার মূল উদ্দেশ্য হল ব্রীজটির বেহাল দশা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রালয়, এমপি ও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ আমলে নিয়ে অতি দ্রুত সুরহ হোক এটাই আশাশুনি বাসীর মূল দাবী।
১৩ জানুয়ারি, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস