সিরাজগঞ্জ : ‘সরকার আমাগোরে নামে ১০ ট্যাহা শ্যারে চাইল দিছে, আমরা তা পাইলাম না। তালি (তাহলে) ওই চাইল গেলো কোনে? মনে করছিলাম সরকার গরিব মাইনস্যের অভাব দূর করতে ১০ ট্যাহা শ্যার চাইল দিত্যাছে। কিন্তু এহুন (এখন) দেহি উল্টা। গরিব মাইনশ্যের চাইল মাইরা খাইত্যাছে বড়লোকরা!’
রবিবার সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার পঞ্চক্রোশী ইউনিয়ন পরিষদের সামনে আইডি কার্ড হাতে নিয়ে ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বললেন ষাটোর্ধ্ব হতদরিদ্র বৃদ্ধ ছামাদ প্রামাণিক। এ সময় পাশে দাঁড়ানো দমদমা গ্রামের আহাদ আলী, চর দমদমার নুরু, জয়গন নেছা, বন্যাকান্দির রুবিয়া খাতুন, বেতকান্দি গ্রামের খাদেজা, কমলা, আবুল কালাম, হবিবর রহমান, কালিগঞ্জের রওশন আরা, আনুফা, পেচর পাড়ার তামেজ আলী মোল্লাসহ অনেকেই তার কথায় সায় মেলালেন।
হতদরিদ্র এসব ভোক্তারা বলেন, তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও গত সেপ্টেম্বর মাসে ১০ টাকা কেজির চাল দেননি পঞ্চক্রোশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম ভুট্টোর স্ত্রী এবং ডিলার ফেরদৌস আরা। তাদের দাবি ডিলার ফেরদৌস আরা ও তার স্বামী ভুট্টো মিলে গরিবের চাল কালোবাজারে বিক্রি করেছে।
পূর্ব সাতবাড়ীয় গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ ইউনুস আলী প্রামাণিক জানান, ডিলার ফেরদৌস আরা তার সামনে বেশ কজন ভোক্তাকে চালের পরিবর্তে তিনশ’ করে টাকা দিয়েছেন।
হতদরিদ্র ভোক্তারা পাওনা চাল ফিরে পাওয়ার জন্য রবিবার উপজেলার পঞ্চক্রোশী ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ভোটার আইডি কার্ড ও তালিকা হাতে নিয়ে প্রায় আধা ঘণ্টা মানববন্ধন করেন। পরে তারা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে বিক্ষোভ মিছিলও করেন।
এসব বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ উদ্দিন জানান, পঞ্চক্রোশী ইউনিয়নে দুজন ডিলারের মাধ্যমে এক হাজার হতদরিদ্র পরিবারকে স্বল্পমূল্যের চাল বিতরণ করার কথা। কিন্তু ডিলার আইয়ুব আলী ফরিদ তার এলাকায় সুষ্ঠুভাবে চাল বিতরণ করলেও অপর ডিলার ফেরদৌস আরার বিরুদ্ধে চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন ভোক্তারা। গত কদিন ধরেই তারা চাল ফিরে পাওয়ার দাবিতে ইউনিয়ণ পরিষদে ঘোরাফেরা করছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মূল তালিকায় এসব ভোক্তাদের নাম রয়েছে অথচ তাদের চাল দেওয়া হয়নি।
তিনি আরও জানান, বেতকান্দির তালিকাভুক্ত ৭২ জন্যের মধ্যে ৭০ জনকেই চাল দেওয়া হয়নি। এছাড়া দমদমা, কালিগঞ্জ, শাহীকোলা, কাজিপাড়া, কালিগঞ্জ, বনবাড়ীয়া, ভদ্রকোল, রাঘববাড়ীয়া, চর পেচড়া, শাহজাহানপুর গ্রামের অধিকাংশ হতদরিদ্র মানুষ স্বল্পমূল্যের চাল থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অপরদিকে, সাখাওয়াত নামের কোনও গ্রাম না থাকলেও ওই গ্রামের ১৫ জনের নামে একটি ভুয়া তালিকা করা হয়েছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান।
ডিলার ফেরদৌস আরার স্বামী ও ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘চেয়ারম্যান ফিরোজ উদ্দিন আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার উদ্দেশ্যে গভীর ষড়যন্ত্রে নেমেছে। এরই অংশ হিসেবে গত সেপ্টেম্বর মাসে তার দেওয়া তালিকার ভোক্তাদের চাল নিতে আসতে বাধা দেন। এ কারণে ওইসব মানুষ চাল পায়নি। তাদের নিয়ে মানববন্ধন বিক্ষোভও করেছেন চেয়ারম্যান।’
উল্লাপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান মারুফ বিন হাবিব বলেন, ‘চেয়ারম্যান বিষয়টি মৌখিকভাবে বলেছিলেন। আমি জেলা প্রশাসক ও ইউএনও বরাবর অভিযোগ দিতে বলেছি। এটি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত একটি প্রকল্প। এখানে অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না।’
জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ ধরনের একটি অভিযোগ স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তের জন্য উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১১ অক্টোবর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম