সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হককে মারপিট ও কোপানোর ঘটনায় মামলার কারণে সিরাজগঞ্জ-৩ (তাড়াশ-রায়গঞ্জ) আসনের এমপি ম ম আমজাদ হোসেন মিলনসহ বাকি আসামিরা গা-ঢাকা দিয়েছেন। এদের কেউ অবস্থান করছেন ঢাকায়, কেউ ন্যাম ভবনে, কেউবা নাটোরে, আবার কেউ কেউ রয়েছেন পার্শ্ববর্তী জেলা বগুড়ার শেরপুরসহ চলনবিল অঞ্চলের দুর্গম স্থানে। মোবাইল ট্রাকিং-এর মাধ্যমে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা তাদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এই তথ্য নিশ্চিত করে তাড়াশ থানার ওসি এটিএম আমিনুল ইসলাম বৃহস্পতিবার সকালে জানান, শিগগিরই অভিযুক্তদের গ্রেফতারে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে, মামলা রুজু হওয়ার পর তাড়াশে র্যাব, রাজশাহী রেঞ্জ রিজার্ভ পুলিশ, তাড়াশ থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের যৌথ অভিযান চালায়। অভিযানে এমপির ভাগ্নে স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আব্দুল খালেককে গ্রেফতার করা সম্ভব হলেও বাকিরা এখনও পুলিশের ধরা-ছোয়ার বাইরে। মামলার কারণে এমপি মিলন, তার দুই ছেলে জর্জিয়ার মিলন জুয়েল, জাকির হোসেন রুবেল, জামাতা গোলাম রব্বানী, ব্যাক্তিগত সহকারী আরিফুল ইসলামসহ বাকিরা বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছে। এ কারণে তাড়াশ উপজেলা সদর এখন উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হকের সমর্থকদের দখলে।
এদিকে বেশ কিছুদিন ধরে চলমান এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি প্রতিবাদ-সমাবেশ ও বিক্ষোভ-মিছিল এখন বন্ধ থাকায় এলাকার থমথমে ও উত্তপ্ত অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার রাতে তাড়াশের পাশ্ববর্তী সলঙ্গা, রায়গঞ্জ ও শেরপুর থেকে বহিরাগতদের আনাগোনা শুরু হলেও র্যাব-পুলিশের টহলের কারণে তারাও সটকে পড়েন।
ওসি আমিনুল ইসলাম ইসলাম আরও জানান, রাজশাহী রেঞ্জ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ তাড়াশ আনা হয়েছে। এছাড়া, তাড়াশ পুলিশের সঙ্গে ডিবি পুলিশ ও র্যাবের টহল চালু থাকায় উত্তপ্ত রাজনৈতিক অঙ্গন এখন অনেকটাই শান্ত। এমপির ভাগ্নে খালেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। মোবাইল ট্রাকিং করে বাকিদের ধরার প্রক্রিয়া চলছে।
তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত কুমার জানান, মামলার কারণে এমপি ও তার আত্মীয়-স্বজন তাড়াশ থেকে সটকে পড়ায় জনগণের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এলাকায় আতঙ্ক কমতে শুরু করেছে। তবে, এমপি ও তার স্বজনরা জামিন পেয়ে এলাকায় ফিরে আসলে আবার নতুন করে কোনও সংঘাত শুরু হবে কি-না, এ নিয়েও আনেকেই উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা পেট্রো বাংলার সাবেক চেয়ারম্যান ড. হোসেন মুনসুর, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট কে এম হোসেন আলী হাসান মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চেয়ারম্যান আব্দুল হককে দেখে আসেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ প্রশাসক আব্দুল লতিফ বিশ্বাস বিষয়টি নিশ্চিত করে বৃহস্পতিবার জানান, আব্দুল হক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আশঙ্কামুক্ত অবস্থায় রয়েছেন।
প্রসঙ্গত পুরনো দলীয় কোন্দল ও দুই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জিডির ঘটনার জের ধরে রবিবার তাড়াশ উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হক, সদর ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল শেখ এবং বারুহাস ইউপি চেয়ারম্যান মোক্তার হোসেনের সঙ্গে এমপি মিলন ও তার সমর্থকদের বাগ-বিতণ্ডা হয়। এই ঘটনার পর উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হককে নিজ কার্যালয়ে মারপিট ও কোপানো হয়। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল শেখ ও মোক্তার হোসেনকেও লাঞ্ছিত করা হয়।
এই ঘটনায় চেয়ারম্যান বাবুল শেখ বাদী হয়ে মঙ্গলবার এমপি, তার দুইছেলে, জামাতা ও স্বজনসহ জ্ঞাত-অজ্ঞাত মিলে ২৫ জনের নামে তাড়াশে মামলা দায়ের করেন। মামলায় এমপি মিলনকে ইন্ধনদাতা ও হুকুমদাতা এবং বাকিদের হামলাকারী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। মামলার পর এমপি মিলনের ভাগ্নে গ্রেফতার হলেও এমপিসহ বাকিরা গাঢাকা দেন। এমপি এই ঘটনায় তার ইন্ধনের অভিযোগ তাৎক্ষণিকভাবে অস্বীকার করেছেন। -বাংলা ট্রিবিউন।
০৩ নভেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম