চৌহালী (সিরাজগঞ্জ): 'নদীতে বাড়ি ভাইঙ্গা গ্যাছে, থাকত্যাছি নদীর কান্দায়। মেলা ছোট আছিলাম তহন আব্বা মইরা গ্যাছে। মা মাটি কাইটা ম্যালা কষ্ট কইরা আমাগোরো সংসার চালায়। ঈদ আসত্যাছে, মনতো চায় এ্যাকখান নতুন জামা। কিন্তু পামু কোনে। দিবো কেডা। আমার তো কেই নাই।' এমনি বুকভরা আবেগি আক্ষেপের কথা জানালো সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার খাসপুখুরিয়া দক্ষিণ পাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে ছয় বছরের ছেলে আলামিন।
আলামিনের পরনে কোন রকমে একটি হাফপ্যান্ট জুটলেও গায়ের একটিও জামা নেই। এমনি অবস্থা এই গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের মেয়ে তামান্না খাতুন (৫), মৃত আব্দুর জব্বারের ছেলে আব্দুল মতিন (৭), দিন মজুর আব্দুর রোউফের ছেলে রাব্বি সরকার (৮), আব্দুল লতিফের ছেলে দুলাল হোসেন (৭), কৃষি শ্রমিক মামুদ আলীর ছেলে মেরাজুল ইসলামের (৮)।
তাদের একটিই চাওয়া ঈদের জন্য একটি নতুন পোশাক। তারা বলে, 'ঈদে ব্যাহে কত আনন্দ করে। নতুন জামা গায় দিয়া ঈদের মাঠে যায়। আমাগোরে হে আশা শ্যাষ কইরা দিছে নদীতে বাড়ি-ঘর ভাইঙ্গা। এহন তো তিনবেলা ভাতই জোটেনা, আব্বা-মা ঈদে জামা-কাপড় দিবো কি কইরা। তয় আঙ্গরে খুব ইচ্ছা নতুন জামার নিগা।' ঈদে কম-বেশি সকলের নানা পোশাক, খাবার-দাবারের নানা আগাম আয়োজনের প্রস্তুতি থাকলেও চৌহালীতে নদী ভাঙনে সর্বস্ব হারানো হাজারো অসহায় মানুষের সে উপায় নেই। ঈদের দিন এদের শিশু ছেলে মেয়েদের মুখে একটু মিষ্টি সেমাই তুলে দেয়াই দুষ্কর। বর্তমানে এসব দুস্থ মানুষ পান্তা আর চাল-পানি খেয়ে রাখছে রোজা, আর ইফতারি করছে শুধুই সাদা পানি দিয়ে।
নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এ অঞ্চলের মানুষের জানাতে গিয়ে চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদেকুর রহমান বলেন, 'ক্ষতিগ্রস্তরা আমার কাছে আসলে সাধ্যানুযায়ী সহযোগিতা করবো। তবে সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানরা এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ালে মানবতা যেমন বিকশিত হতো। তেমনি ওদের ভাগ্যে জুটতো দুধ-চিনির মিষ্টি সেমাই ও নতুন পোশাক।'
এমটিনিউজ২৪ডটকম/এইচএস/কেএস