সিরাজগঞ্জ থেকে : ‘আমাগোরই বার বার বিপদ দেয় আল্লাহ। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনের তো কিছু অয় না (হয়না)। আমাগোরে (আমাদের) যারা পানিতে ডুবিয়ে মারতাছে,বাড়িঘর ডুবিয়ে দিচ্ছে, বাঁধ নিয়া ছিনিমিনি খেলে তাগোর তো (তাদের তো) কিছুই অয় না। সরকার ঠিকই ট্যাকা-পয়সা দেয়,কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকমতো কাজ করে না। সব লুটে খায়। পানি আসলেই বাঁধের কাজ শুরু করে। আর পানি যহন থ্যাহে না,তহোন তারা কাজ করে না। তারা (পাউবো) যদি ঠিকমতো কাজ কইরতো,তাহলে বানের পানিতে ডুইবা মরতে হইতো না।’
কথাগুলো বলছিলেন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাহুকায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) বাঁধে আশ্রয় নেওয়া শাহজামাল ও রোকেয়া দম্পতি। যমুনার পানির তোড়ে বাহুকায় নির্মাণাধীন রিং বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ার পর রাগে-ক্ষোভে এসব কথা বলেন তারা।
১৪ জুলাই (শুক্রবার দুপুরে) সরেজমিনে বাঁধের অবস্থা দেখার সময় সাংবাদিকদের কাছে দুর্গতরা এভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে নিজেদের দুঃখ কিছুটা লাঘবের চেষ্টা করেন।
উজানের পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যমুনার পানি বাড়তে থাকে। ১৩ জুলাই (বৃহস্পতিবার) রাতে সেই পানির তোড়ে বাঁধের দক্ষিণ দিকের অংশ বিশেষ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢোকে। এতে বাহুকা,ইটালী ভেওমারাসহ আশেপাশের বেশ ক’টি গ্রাম প্লাবিত হয়। ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় শাহজামাল ও রোকেয়ার মতো কয়েকশ’ মানুষ পার্শ্ববর্তী বাঁধে আশ্রয় নিলেও অনেকেই তাদের গৃহস্থালীর জিনিসপত্র ও খাবারদাবার নিরাপদ স্থানে সরাতে পারেনি।
বাঁধ ভাঙার খবর শুনেও লাঞ্ছিত হওয়ার ভয়ে ভাঙন কবলিত স্থানে আসতে গড়িমশি করে পাউবোর লোকজন। তবে ১৩ জুলাই রাত থেকেই এলাকাবাসী স্বেচ্ছা শ্রমে বাঁধ রক্ষার কাজ শুরু করে। শুক্রবার সকালে বঙ্গবন্ধু সেতু রক্ষাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত ১১ রিভার ইঞ্জিনিয়ারিং (আর.এ) কোরের প্রায় ৪০ জন সেনা সদস্য সেখানে গিয়ে তদারকির কাজে যোগ শুরু করেন।
শুক্রবার দিনভর পাউবো ও সেনাবাহিনীর লোকজন ধসের অংশে বস্তা ফেলে মেরামতের চেষ্টা করেন। কিন্তু চাপ এতই বেশি যে ধসে যাওয়া অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম দায়িত্ব অবহেলা ও গাফিলতির কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘রিং বাঁধটির নির্মাণের অনুমতি ও বরাদ্দের জন্য বারবার ঊর্ধ্বতনদের বলেছি। আমাদের সদ্বিচ্ছার কোনও অভাবই ছিল না। সঠিক সময়ে বরাদ্দ না পেলে আমরা কি করবো?’
পাউবোর বগুড়া অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বাবু চন্দ্র শীল বলেন, ‘বাঁধ ভাঙার খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় প্রশাসন ও সরকার দলীয় লোকজন আমাদের সহযোগিতা করছেন। সেনা সদস্যরাও আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। ভাঙা অংশ মেরামতের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বাঁধটির ভাঙন অংশ মেরামত করা সম্ভব হয় না। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে নতুন করে পরিকল্পনা নেওয়া হবে বলে পাউবোর স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান।
এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস