নিউজ ডেস্ক: ২২ দিন ইলিশ আহরণে সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে যমুনা নদীতে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ছে। সিরাজগঞ্জের দক্ষিণাঞ্চলের চৌহালী উপজেলা সদরের জোতপাড়া বাজার, এনায়েতপুরের নতুন ও পুরাতন বাজার, বেতিল হাট-বাজার, বেলকুচি, মুকুন্দগাতী, চালা ও শাহজাদপুর, কৈজুরী, পাচিলসহ চরাঞ্চলের হাট-বাজারে ইলিশ কেনাবেচার ধুম পড়েছে। পসরা সাজিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে ইলিশ বিক্রি। দাম তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে হাট-বাজারে।
মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি মাছের ডালায় শোভা পাচ্ছে নানা সাইজের রুপালী ইলিশ। শুধু বাজারে নয়; ইলিশ বিক্রি হচ্ছে নদী তীরবর্তী খেয়াঘাট এলাকায়ও। এমনকি পাড়া-মহল্লায় বাড়িতে গিয়ে কড়া নাড়ছে খুচরা ইলিশ বিক্রেতারা। ইলিশ কিনতে দূর-দূরান্তের লোকজন আসছেন হাটগুলোতে। আবার অনেকেই স্বল্পমূল্যের ইলিশ বরফজাত করে পাঠাচ্ছেন ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে।
যমুনাপাড়ের এলাকাগুলোতে ইলিশ উৎসব শুরু হয়েছে। এ বছর যমুনা নদীতে প্রচুর পরিমাণে মা ইলিশ এসেছে। বিগত পাঁচ বছরে এত ইলিশের দেখা মেলেনি বলে স্থলচরের প্রবীণ মৎস্যজীবী আয়নাল হক ও জাহেদুল বারী জানান। তারা জানান, এ বছর সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞার সময় চৌহালী মৎস্য অফিস ও প্রশাসনের নজরদারি ফাঁকি দিয়ে কিছু অসাধু জেলে ইলিশ শিকার করলেও বেশির ভাগ জেলে মাছ ধরা থেকে বিরত ছিলেন। তাই বেশি ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। এবার সর্বোচ্চ আড়াই কেজি পর্যন্ত ইলিশ পাওয়া গেছে। তবে এখনো জেলেদের জালে ধরা পড়া ইলিশের পেটে ডিম পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি কেজি ইলিশ সাইজ অনুযায়ী ১০০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
উমারপুরের মৎস্যজীবী আব্দুল কাইয়ুমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, তিনি প্রায় ২২ বছর ধরে এই ব্যবসার সাথে জড়িত। এই দীর্ঘ সময়ে এত ইলিশ চোখে দেখেননি বলে মন্তব্য করেন। তিনি আরো বলেন, ২২ দিন মাছ মারি নাই। ছেলেমেয়ে নিয়ে কষ্ট করেছি। এখন মাছ ধরায় কোনো নিষেধাজ্ঞা নাই। আজ প্রচুর মাছ ধরছি।
এ দিকে মাছের প্রচুর আমদানিতে বরফ মিলগুলো বরফ সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে। বরফের অভাবে অনেক জেলে মাছ সংরণ না করে মোবাইল ফোনে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে স্বল্পদামে বিক্রি করে দিচ্ছেন। তারপর সেই মাছ বাড়িতেও পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
চৌহালী উপজেলা মৎস্য অফিসের ক্ষোত্র সহকারী শফিকুল ইসলাম বলেন, ১ অক্টোবর হতে ২২ অক্টোবর মা ইলিশ ধরার যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা অনেকটাই কাজে দিয়েছে। এর ফলে চৌহালীর যমুনার বুকে এত ইলিশ দেখা দিয়েছে। এখন নদীতে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় জেলেরা ইচ্ছেমতো মাছ ধরতে পারছেন। প্রশাসন নিষিদ্ধ সময়ে মাছ ধরতে না দেয়ায় এত বেশি ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে।
তবে চৌহালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদেকুর রহমান জানান, এ বছর মা ইলিশ রায় নদীতে অব্যাহতভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জেলেদের জেল-জরিমানা করার পাশাপাশি কারেন্টজাল পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এতে করে অবৈধ মৎস্য আহরণকারীরা খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি। তবে কারেন্ট জাল দিয়ে জাটকা নিধন বন্ধে অভিযান ১ নভেম্বর থেকে শুরু হবে বলে তিনি জানান।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস