সিলেট ব্যুরো: হাওর অঞ্চলের বাঁধ নির্মাণে কারও কোনও ধরনের গাফিলতি থাকলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘হাওর অঞ্চলে মানুষের কষ্ট লাঘব করার জন্য বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এসব বাঁধ নির্মাণে কোনও ধরনের অবহেলা থাকলে তা ছাড় দেওয়া হবে না।’
রবিবার সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় হাওর এলাকা হাওর এলাকা পরিদর্শনের পর উপজেলার শাহীদ আলী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে এক মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হাওর অঞ্চলের মানুষ প্রতিনিয়ত জীবনযুদ্ধে থাকে। বাওর এলাকা আমারও এলাকা, আমি বুঝি আপনাদের কষ্ট। এসব এলাকার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এসব এলাকায় বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করা হবে। শুধু ফসলের ওপর নির্ভরশীল না থেকে মাছের উৎপাদন বাড়াতে হবে। মাছ উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে মাছের সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাতের ব্যবস্থা যেন নেওয়া হয়, সে ব্যবস্থা করা হবে।’
হাওরে মানুষের বিকল্প জীবিকা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পানি নেমে গেলেই হাওরে ব্যাপকভাবে মাছের পোনা ছেড়ে দেওয়া হবে। এমন ব্যবস্থা করতে হবে যেন মাছের চাষ বাড়ে। শুধু তাই নয়, হাসের চাষ করা যায়, খাচার মধ্যে মাছের চাষ করা যায়, শাক-সবজির চাষ করা যায়, ডাল-শরিষা উৎপাদন করা যায়। এমন নানা ধরনের প্রক্রিয়া আছে। এগুলো ব্যবহার করতে শুরু করলে আর হাওর এলাকার মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।’
আগাম বন্যা হলেই হাওর এলাকার ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে সহনীয় ধানের জাত তৈরিতে গবেষণা চলছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এমন ধানের জাত নিয়ে গবেষণা চলছে, যেগুলো কিছুদিন পানির নিচে থাকলেও নষ্ট হবে না। পানি নেমে গেলেই সেগুলো ঠিকভাবে বেড়ে উঠবে। এছাড়া অনেক সময় বৃষ্টি হয় না। অনাবৃষ্টি বা খরাতেও যেন ধান গাছ টিকে থাকতে পারে, তেমন ধান নিয়েও গবেষণা চলছে।’
হাওর অঞ্চলের উন্নয়নে সরকারের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হাওর এলাকার নদীগুলো যেন ভরাট না হয়ে যায়, সেজন্য নদীগুলো ড্রেজিং করা হবে। হাওর এলাকায় খাল কাটা হবে এবং এসব খাল যেন বেশি পানি ধারণ করতে পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসব এলাকার ঘরবাড়ি যেন দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্যও পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। হাওর উন্নয়ন বোর্ড সরকারের এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের হাওর বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কারণ হাওরে যে পানি জমা হয়, এই পানিই সারাবছর নদীতে যায়। এই পানি এই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে সম্পৃক্ত।’
হাওর এলাকাকে দুর্যোগপ্রবণ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা এবং প্রকৃতিকেই কাজে লাগানোর চিন্তা করতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে, সেটা মোকাবিলা করেই বাঁচতে হবে। কিভাবে মোকাবিলা করে বাঁচতে পারি, সেই পথ বের করতে হবে। এমন ব্যবস্থা নিতে হবে যেন কোনও মানুষের জীবনের ক্ষতি না হয়। খেয়াল রাখতে হবে, হাওরাঞ্চল জীববৈচিত্র্যের এলাকা। এই অঞ্চলের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এসব সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে। এখানে পর্যটনের সুযোগ আছে, আর্থিক স্বচ্ছলতা আনার সুযোগ আছে। এগুলোকে কাজে লাগিয়ে কেবল এই অঞ্চল নয়, দেশও যেন লাভবান হতে পারে সেই ব্যবস্থা আমরা নেবো।’
দুর্যোগে ত্রাণ তৎপরতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোনও ধরনের দুর্যোগ হলেই ত্রাণ মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করে। আমরা যতটুকু সম্ভব, ত্রাণ দিয়ে যাব। হাওর এলাকায় ১০ টাকা কেজিতে ওএমএসের মাধ্যমে চাল বিক্রি করা হচ্ছে। যারা দুঃস্থ আছেন, তাদের জন্য রয়েছে ভিজিএফ কার্ডের ব্যবস্থা। এই অঞ্চলের মানুষের ঘরে খাবার আসার আগ পর্যন্ত এসব সহায়তা অব্যাহত থাকবে। একজন মানুষও না খেয়ে কষ্ট পাবেন না, এটাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা চাই, আমাদের দেশের মানুষ, তিনি যে অঞ্চলেরই হোক না কেন, তারা যেন ভালোভাবে বাঁচতে পারে।’
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম ও স্থানীয় সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্তা।
৩০ এপ্রিল ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/টিটি/পিএস