শাহ্ দিদার আলম নবেল : বৃহত্তর সিলেটের প্রখ্যাত রাজনীতিক আবদুস সামাদ আজাদ, সাইফুর রহমান, হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, এস এম কিবরিয়াদের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবেই দেখা হচ্ছিল ইলিয়াস আলীকে। তিনিও চলছিলেন সে পথে দুর্বার গতিতে।
বৃহত্তর সিলেটের গণ্ডি পেরিয়ে ক্রমেই জাতীয় রাজনীতিতে এক জনপ্রিয় মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। কিন্তু সব থমকে যায় ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল। সেদিন মধ্যরাতে ইলিয়াস আলী ঢাকার বনানী থেকে গাড়িচালক আনসার আলীসহ ‘নিখোঁজ’ হন। এরপর কেটে গেছে ৫২ মাস। কিন্তু আজও উদঘাটন হয়নি ইলিয়াস আলী ‘নিখোঁজ রহস্য’।
স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে উত্থান ঘটে ইলিয়াস আলীর। নব্বইয়ের দশকে প্রভাবশালী ছাত্রনেতা ছিলেন তিনি। বিএনপির রাজনীতিতে তরতরিয়ে ওপরের দিকে উঠছিলেন তিনি। ভারতের সীমান্ত আগ্রাসন ও টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদসহ নানা ইস্যুতে শক্ত অবস্থান নিয়ে ইলিয়াস ক্রমেই জাতীয় রাজনীতিতে নিজেকে এক অপ্রতিরোধ্য নেতা হিসেবে প্রকাশ করছিলেন।
সে কারণেই ইলিয়াস যখন ‘নিখোঁজ’ হলেন, তখন দেশব্যাপী গড়ে উঠে তীব্র আন্দোলন। বিশেষ করে ওই সময়ে সিলেট ছিল অগ্নিগর্ভ। ওই সময়ে ইলিয়াস ‘নিখোঁজ’র প্রতিবাদী আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে জনতার সংঘর্ষে প্রাণ হারান অন্তত তিনজন। কিন্তু আজও সন্ধান মেলেনি ইলিয়াস আলীর। বিএনপি নেতা-কর্মীদের কারও কারও ধারণা, ইলিয়াস আলীকে সরকারই গুম করেছে। আবার কারও কারও মতে, ‘বিশেষ কোনো কারণে’ ইলিয়াস নিজেই লুকিয়ে আছেন।
তবে যা-ই হোক, ইলিয়াসের জন্য এখনো অন্তহীন প্রতীক্ষায় নেতা-কর্মীরা। ‘নিখোঁজ’র এতদিন পর ইলিয়াসের সন্ধান দাবির আন্দোলন কিছুটা ম্রিয়মাণ হয়ে পড়েছে। তবে এখনো প্রতি মাসের ১৭ তারিখ তার সন্ধান দাবিতে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। গতকালও ইলিয়াস ‘নিখোঁজ’র ৫২ মাস পূর্ণ হওয়ার দিনে তার সন্ধান কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল হয়েছে। এদিকে ইলিয়াস আলী বেঁচে আছেন, নাকি মারা গেছেন— এ নিয়ে সাধারণ নেতা-কর্মীদের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক কৌতূহল। সম্প্রতি বিএনপির কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করলেও সেখানে স্থান হয়নি ইলিয়াসের।
এরপর নেতা-কর্মীদের একাংশের মধ্যে এই গুঞ্জনই ঘুরপাক খাচ্ছে— তবে কি ইলিয়াস বেঁচে নেই? তাদের ধারণা, বিএনপির হাইকমান্ড ইলিয়াস আলীর ব্যাপারে অবশ্যই কিছু না কিছু জানে। ইলিয়াস বেঁচে থাকলে তার মতো নেতাকে কমিটির বাইরে রাখা ‘অসম্ভব’ ছিল— এমন ধারণাও অনেক নেতা-কর্মীর। ইলিয়াসের পথ চেয়ে তার মা, স্ত্রী, ছেলে-মেয়েসহ বৃহত্তর সিলেট বিএনপির নেতা-কর্মীরা অন্তহীন অপেক্ষায় রয়েছেন।
কিন্তু প্রায় সাড়ে চার বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও জট খুলছে না তার ‘নিখোঁজ’ রহস্যের। তিনি বেঁচে থাকলে কোথায় আছেন, কীভাবে আছেন— এসব প্রশ্নের উত্তরও খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। ইলিয়াসের ‘নিখোঁজ রহস্য’ যেন সমাধানের বাইরে থাকা একটি ধাঁধা। এ ব্যাপারে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস ইলিয়াস আলী সরকারের হেফাজতেই আছেন। সরকার চাইলে ইলিয়াসকে তার পরিবার ও সিলেটবাসীর কাছে ফিরিয়ে দিতে পারে। ইলিয়াসের সন্ধান দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলমান রয়েছে। আগামীতে এই আন্দোলন আরও জোরদার করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’ -বিডি প্রতিদিন
১৮ আগস্ট ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস