নিউজ ডেস্ক: সিলেটে ছাত্রলীগের কলংকতিলক বদরুল। ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী-শিক্ষক ছাড়াও সব মহলের ঘৃণা, ধিক্কার বদরুলকে নিয়ে। তাকে সংগঠনের কেউ নয় দাবি করেও দায় এড়াতে পারছে না ছাত্রলীগ। এমনকি তার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিও করেছে ছাত্রলীগ। তার পৈশাচিকতায় আড়াল হয়ে পড়েছে ছাত্রলীগের অতীত অপকর্ম। কলেজছাত্রী খাদিজার ওপর পৈশাচিক-বর্বর হামলার পর তার নামের আগে যোগ হয়েছে ‘চাপাতি’ বিশেষণ। এখন সভা-সমাবেশ সর্বত্রই উচ্চারিত হচ্ছে ‘চাপাতি বদরুল’ নাম। কেউবা বলছেন ‘বদ’ বদরুল। বদরুলের পৈশাচিকতায় বিস্মিত, বিব্রত, ক্ষুদ্ধ তার সংগঠন ছাত্রলীগ। মাথা হেট হয়ে গেছে শাসক দলেরও। এমন বর্বরতায় হতবাক দেশবাসী। এখন ছাত্রলীগ বলছে বদরুল মিথ্যুক, প্রতারক। তার সর্ব্বোচ্চ শাস্তি চান সহপাঠী, সহযোদ্ধারাও। খাদিজার উপর বর্বর হামলার পর বদরুলকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও সর্বশেষ কর্মস্থল আয়াজুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে।
শাবির অর্থনীতি বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ও শাবি ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলম। বদরুল ছাতক উপজেলার মুনিরজ্ঞাতি গ্রামের সাইদুর রহমানের ছেলে। সে দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের মুনিরজ্ঞাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক ও নতুনবাজার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করে। টানাপড়নের সংসারে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পাওয়ার পাশাপাশি এসএসসি ও এইচএসসিতেও ভালো ফল করে সে। এরপর ভর্তি হয় শাবিতে। বদরুলের বেড়ে ওঠা দিনমজুর পরিবারে চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। তার গ্রামের বাড়িসহ বিভিন্ন মহলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বদরুলের পরিবারও অনেকটা প্রতারণার শিকার। কারণ নিম্নবিত্ত পরিবারে বদরুলের জš§। পিতা-মাতা শরীরের ঘাম ঢেলে বদরুলকে উচ্চ শিক্ষিত করতে চেয়েছিলেন। ভর্তি করেছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সর্বস্ব খুঁইয়েও গড়তে চেয়েছিলেন আলোকিত মানুষ হিসাবে। রোদে পোড়া, ঘাম ঝরানো টাকা বাড়ি থেকে আনলেও পরিবারের সেই চাওয়া পুরণ করেনি বদরুল। উল্টো আলোকিত না হয়ে, হয়েছে অন্ধকার গলির লম্পট। উদাসীনতায় লাটে উঠে তার লেখাপড়া। দীর্ঘ ৮ বছরেও শেষ করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা। এখনও বাকি অনেকগুলো সেমিস্টার। সর্বশেষ ক্যাম্পাস ছেড়ে শিক্ষকতা শুরু করে। খন্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে যোগ দেয় ছাতকের আয়াজুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে। মানুষ গড়ার কারিগরের দায়িত্ব নিলেও বদলায়নি তার ভেতরের অমানুষিকতার স্বভাব। পুষে রাখা এই অমানুষিকতার বহি:প্রকাশ ঘটায় এমসি কলেজে খাদিজার উপর পৈশাচিক হামলা চালিয়ে। খাদিজার উপর হামলার পর তার সঙ্গে প্রেম, সম্পর্কের বিষয়েও মিথ্যাচার করে যাচ্ছে বদরুল। ছাত্রলীগের কমিটিতেও বদরুল স্থান করে নেয় মিথ্যাচারের মাধ্যমে। শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেয়ার বিষয়টি গোপন রেখে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের গত কমিটিতে স্থান করে নেয়। এখানেও কেন্দ্রের করুণা লুটে বদরুল মিথ্যা তথ্য দিয়ে। ২০১২ সালের ১২ জানুয়ারি গণপিটুনির শিকার হয় বদরুল। খাদিজাকে উত্যক্ত করতে গিয়ে এলাকাবাসীর গণপিটুনির বিষয়টি স্বাধীনতাবিরোধী শিবিরের হামলা বলে প্রচার করে চতুর বদরুল। ওই ঘটনা দলের কাছে তুলে ধরে শিবিরের হামলায় ‘নির্যাতিত’ দাবি করে খুব সহজেই শাবি ছাত্রলীগে স্থান করে নেয় বদরুল। সর্বশেষ আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতেও অনেক তথ্য গোপন করে চতুর বদরুল। আদালতে রেকর্ডকৃত বক্তব্যের সঙ্গে মিল নেই গ্রেফতারের পর পরই দেয়া বক্তব্যের। যেখানে খাদিজাকে হত্যা ও পরিকল্পনার কথা নিজ মুখেই বলেছিল বদরুল।
অপরদিকে বদরুল আলমকে নিয়ে বিপাকে ছাত্রলীগ। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন খাদিজার উপর হামলার পর মন্তব্য করেন, ‘বদরুল ছাত্রলীগের কেউ নয়। সংগঠনে তার কোনো পদও নেই।’ অনুরূপ বিবৃতি দেন শাবি ছাত্রলীগ সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ ও ইমরান খান। তাদের দাবি, চাকরিতে যোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বদরুলের পদ-পদবিসহ সদস্যপদ বাতিল হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আলাদা করে তাকে বহিষ্কারের প্রয়োজন নেই। অথচ বদরুল ছাতকের আয়াজুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে যোগ দেয় ২০১৪ সালে। শাবির সর্বশেষ কমিটি গঠন করা হয় এ বছরের শুরুতে। এই কমিটির প্রথম সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে রাখা হয় বদরুলকে।
সোমবার এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে শাবি ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলম এমসি কলেজের পুকুর পাড়ে খাদিজাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। বর্তমানে খাদিজা রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মাথায় অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকরা তাকে ৭২ ঘন্টা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। এ ঘটনায় বদরুলকে আসামি করে শাহপরান থানায় খাদিজার চাচা আব্দুল কুদ্দুস একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেছেন। বুধবার খাদিজার উপর হামলার ঘটনা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে ছাত্রলীগ নেতা বদরুল।-যুগান্তর
০৭ অক্টোবর,২০১৬/এমটি নিউজ২৪ ডটকম/এইচএস/কেএস