ওয়েছ খছরু: ‘আমি আজ হলে ফিরবো না, মাসির বাড়ি যাচ্ছি’। বিশ্ববিদ্যালয়ের বান্ধবীর কাছে শেষ মেসেজ দিয়েই মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিয়েছিল সিলেটের ঐশী হামোম। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থেকে ঐশী ওই ম্যাসেজ পাঠিয়েছিল। এরপর দিন একবারের জন্য মোবাইলটি চালু করা হয়েছিল। ট্র্যাকিংয়ে জানা গিয়েছিল- হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে অবস্থান ছিল ঐশীর। কিন্তু ওই এলাকায়ও অভিযান চালিয়ে অপহৃত ঐশীকে পাওয়া যায়নি।
তবে, ঐশীর পরিবার জানিয়েছেন, এক সময় রনি সিংহকে ভালোবাসত ঐশী। কিন্তু রনির বখাটেপনা ভালো লাগতো না তার। বিষয়টি রনিকে সে জানিয়েও দিয়েছে। এরপরও ঐশীর পিছু ছাড়েনি রনি। ছুটে যেত কলেজ হোস্টেলের সামনে। টিউশনে আসার সময় পথ আগলে দাঁড়াতো। রনির ওই উৎপাতের বিষয়টি বাড়িতে গিয়ে মা-বাবাকে বিষয়টি জানিয়েছিল ঐশী।
রনির কারণে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে চাইতো না। পরিবারের পক্ষ থেকে জোর করেই তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল। সিলেটের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্রী ঐশী হামোম। বাড়ি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে। তবে সে বসবাস করতো সিলেটের বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে।
গত ৭ই নভেম্বর ঐশী হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যায়। ঘটনার পর পরিবারের পক্ষ থেকে সিলেটের শাহপরান থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় আসামি করা হয়েছে অপহরণকারী রনি সিংহ ছাড়াও তার পিতা উপেন্দ্র সিংহ, মাতা নন্দরানী সিনহা ছাড়াও অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে। অপহরণ মামলার প্রধান আসামি রনির মা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নন্দরানী সিনহাকে শিক্ষা অফিস থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে অপহৃত ঐশীকে উদ্ধার ও অপহরণকারীদের পুলিশে সোপর্দের জন্য সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেটের শাহপরান থানার এসআই আশরাফুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঐশী হামোম অপহরণ মামলার সব আসামি মোবাইল বন্ধ রয়েছে। ফলে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমেও তাদের অবস্থান সম্পর্কে জানা যাচ্ছে না।
এদিকে, এ ঘটনায় রনির বন্ধু ও স্বজন ব্রজেনকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, ব্রজেন মুখ খুলেও খুলেনি। সে নিশ্চিত করে ঐশী ও রনির সন্ধান দিতে পারেনি। এ কারণে ব্রজেনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ঐশীর সহপাঠীরা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ৭ই নভেম্বর ঐশীকে অপহরণের পর রাত ৮টার দিকে হঠাৎ তার বান্ধবীর মোবাইল থেকে একটা ম্যাসেজ আসে। ওই ম্যাসেজে লেখা ছিল, ‘আমি আজ হলে ফিরবো না, মাসীর বাড়ি যাচ্ছি’। ওই ম্যাসেজ ট্র্যাকিং করে পুলিশ জানতে পারে ম্যাসেজটি প্রেরণের সময় ঐশীর অবস্থান মৌলবীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ছিল।
অপহৃত রনির চাচাতো ভাই বুমগছা হামোম জানিয়েছেন, রনির সঙ্গে প্রেম ছিল এটা সত্য। কিন্তু রনি যে বখাটে সেটি ঐশীর কাছে ধরা পড়ে। এ কারণে কয়েক মাস ধরে রনির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ঐশী। আর সম্পর্ক ছিন্ন করার পর থেকে ঐশীর জীবনকে বিষিয়ে তুলেছিল রনি। সিলেট শহরে চলাফেরা দায় হয়ে পড়েছিল ঐশীর।
ছুটিতে ঐশী বাড়িতে গিয়ে এসব কথা পরিবারের কাছে জানায়। তিনি বলেন, বিষয়টি জানার পর ঐশীর পরিবার থেকে রনির পিতা-মাতাকে জানানো হয়েছে। এবং রনি যাতে বাড়াবাড়ি না করে সে ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু রনির পরিবার সে অনুরোধ রাখেনি। ছুটি কাটিয়ে সিলেট শহরে আসার পর থেকে রনি প্রায় সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলের সামনে গিয়ে ঐশীকে ডিস্টার্ব করতো। সে বিষয়টি জানতো ঐশীর বান্ধবীরা।
তিনি বলেন, রনির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার পর ঐশী জানতে পারে সে বখাটে। এবং নেশায় আসক্ত। সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করলেও সে বখাটেদের সঙ্গেই আড্ডা দিতো। এ কারণেই ঐশী একপর্যায়ে রনির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। পুলিশের ধারণা, অপহরণের পর রনি যেভাবেই হোক ঐশীর সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে। এ কারনে তারা জামিন নিতে আসতে পারে সিলেটের আদালতেও। পুলিশ সে ব্যাপারেও নজর রাখছে।-এমজমিন
১৭ নভেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ