সোমবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:৪২:৫১

ফিল্মি স্টাইলে বরের সামনেই যেভাবে নববধু ছিনতাই করে প্রেমিক!

ফিল্মি স্টাইলে বরের সামনেই যেভাবে নববধু ছিনতাই করে প্রেমিক!

ওয়েছ খছরু : প্রেমিকের হাতেই অপহৃত হয়েছিল নববধূ শাপলা দেবনাথ। প্রেমিক সুশান্ত দেবনাথ নতুন বর নিখিলেসের বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে তাকে জোরপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে যায়। কিন্তু ঘটনার পরপরই পুলিশ তৎপর হয়ে উঠে। নগরীর সব প্রবেশমুখে বসায় চৌকি। শুরু করে শাপলাকে উদ্ধার অভিযান।

শেষ পর্যন্ত অপহরণের প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় শাপলার প্রেমিক সুশান্তকে। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছে সুশান্ত প্রেমের কারণে অপহরণের কথা জানালেও শাপলা এ ব্যাপারে মুখ খুলেনি।

তবে, নববধূ শাপলাকে রাত কাটাতে হয়েছে থানা হাজতেই। শাপলার পরিবার জানিয়েছে, সুশান্তের সঙ্গে আত্মীয়তার সূত্রে পরিচয় থাকলেও কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। সুশান্ত’র পক্ষ থেকে কখনো বিয়ের প্রস্তাবও দেয়া হয়নি।

শাপলা দেবনাথ। বাড়ি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের দয়ারবাজারের জীবনপুরে। পিতার নাম কোকিল দেবনাথ। শনিবার শাপলার সঙ্গে বিয়ে হয় দিরাইয়ের সুতারাগাঁও গ্রামের রবীন্দ্র দেবনাথের ছেলে নিখিলেস দেব নাথের। প্রায় ১০টি মাইক্রোবাস নিয়ে নিখিলেস কোম্পানীগঞ্জে কনের বাড়িতে যান। ওখানে তাদের ধুমধামে বিয়ে হয়। বিয়ের পর শনিবার বিকালে নববধূ শাপলাকে নিয়ে বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের পথে রওনা দেন নিখিলেস দেবনাথ।

তার সঙ্গে ছিল ১০টি গাড়ির বরযাত্রা। রাত পৌনে ৮টার দিকে কনে নিয়ে বরযাত্রার বহরটি টুকেরবাজারের তেমুখী এলাকায় পৌঁছে। এমন সময় একটি প্রাইভেট কারসহ কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে প্রেমিক সুশান্ত ব্যারিকেড দেয়। এ সময় সে নতুন বর নিখিলেসের বুকে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে নববধূ শাপলাকে ছিনিয়ে নেয়। একপর্যায়ে শাপলাকে প্রাইভেট কারে তুলে তারা সুনামগঞ্জ বাইপাস হয়ে দক্ষিণ সুরমা অভিমুখে পালিয়ে যায়।

এদিকে, নববধূ ছিনতাইয়ের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ছুটে আসে সিলেটের জালালাবাদ থানা পুলিশ। তারা এসে মেট্রোপলিটন ও জেলা পুলিশে তারবার্তার মাধ্যমে খবর দিয়ে দেয়। এতে করে গোটা নগরেই পুলিশ তৎপরত হয়ে ওঠে।

বরযাত্রীরা জানিয়েছেন, যে প্রাইভেট কারে নববধূ শাপলাকে তুলে নেয়া হয়েছে সেটির কোনো নাম্বার ছিল না। এদিকে, পুলিশ তৎপর হয়ে উঠায় রাত ১০টার দিকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে নববধূ শাপলাকে উদ্ধার করে পুলিশ।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো. নুরুল আফসার জানিয়েছেন, রাত দশটার দিকে ওসমানী মেডিকেলের সামনে একটি মাইক্রোবাস থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতাল ফাঁড়ি পুলিশ। পরে খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানার পুলিশ সেখানে গিয়ে থানায় নিয়ে আসে। ওই ঘটনায় দু’জনকে আটক করা হয়েছে।

তারা হচ্ছে, সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার বড়গ্রাম গ্রামের মৃত রঞ্জন নাথের ছেলে সুশান্ত দেবনাথ (৩০) ও সুনামগঞ্জের বড়পাড়া গ্রামের মুজিবুর রহমানের ছেলে রবি মিয়া (২৫)। এছাড়া বহনকৃত মাইক্রোবাস ও একটি অনটেস্ট  মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি জানান, নিখিলেসের সঙ্গে শাপলার বিয়ে মেনে নেয়নি সুশান্ত। এ কারণে সে সহযোগীদের নিয়ে শাপলাকে অপহরণ করেছে। তবে, পুলিশ তৎপর থাকায় তারা পালাতে পারেনি। ধরা পড়েছে। এদিকে, অপহরণের ঘটনার পরপরই রাতে সিলেটের জালালাবাদ থানায় মামলা করেছেন নববধূ শাপলার পিতা কোকিল দেবনাথ। মামলায় তিনি প্রধান আসামি করেন সুশান্ত দেবনাথকে।

এ ছাড়া মামলায় গ্রেপ্তারকৃত রবিউল ইসলাম রবি, সুমন আহমদ ওরফে  কাউয়া সুমন, রুহেল এবং মানিককেও। সিলেটের জালালাবাদ থানার ওসি আক্তার হোসেন গতকাল বিকেলে জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাদের রিমান্ড চাওয়া হবে।

তিনি বলেন, নববধূর পিতার অপহরণ মামলার প্রেক্ষিতে সুশান্ত ও রবিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। রাতে থানাতেই ছিলেন নববধূ শাপলা দেবনাথ। দুপুরে তাকে সিলেটের আদালতে পাঠানো হয়েছে। এদিকে, আদালত সূত্র জানিয়েছে, বিকালে সিলেট মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ সিদ্দিকীর আদালতে নববধূ শাপলার ২২ ধারা জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। আর গ্রেপ্তারকৃত সুশান্ত ও রবিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জের জীবনপুর এলাকার সাবেক মেম্বার মাস্টার শিলন চন্দ্র নাথ জানিয়েছেন, শাপলার সঙ্গে সুশান্তের কোনো সম্পর্ক ছিল না। এ ছাড়া সুশান্তের সঙ্গে সরাসরি আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। আত্মীয়ের আত্মীয়তার সূত্র ধরে পরিচয় হতে পারে। কিন্তু সেটিকে কোনো ভাবেই প্রেম বলা যাবে না। তিনি বলেন, নিখিলেসের সঙ্গে শাপলার বিয়ে হয়েছে পারিবারিকভাবে। এবং বেশ ঢাকঢোল পিঠিয়ে বিয়ে হয়। এমজমিন

১২ ডিসেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে