ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে : গৃহবধূ সুমার জিহ্বা কেটে উল্লাস করেছে পাষণ্ড স্বামী। শুধু তাই নয়, হাত-পা বেঁধে বাম পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। ডানপায়ে দিয়েছে ধারালো অস্ত্রের কোপ। চাকু দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়েছে পিঠে। এই অবস্থায় মৃত্যুর পথযাত্রী এখন সিলেটের সুমা বেগম। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ফিরেনি জ্ঞান।
সুমার উপর এমন বর্বরতায় হতবাক সবাই।ঘটনাটি সিলেট শহরতলির পশ্চিম দর্শা গ্রামে। পিতৃহীন সুমার এই পরিণতিতে মা আয়না বিবি শুধুই কাঁদছেন। দর্শা গ্রামের মৃত আবদুল আলীর মেয়ে সুমা বেগম সুনাবি। বয়স ২৬ বছর। ২০০৮ সালে সুমার বিয়ে হয় একই এলাকার খানুয়া গ্রামের মৃত ইছমত আলীর ছেলে বেলাল আহমদের সঙ্গে। বেলাল সিলেট নগরীর উপশহর এলাকায় ওয়ার্কশপে কাজ করে। বিয়ের পর থেকে বেলালের পরিবারের সঙ্গে বিরোধ লেগেই ছিল সুমার।
কারণ, বেলালের মা সুমার সঙ্গে বিয়েতে রাজি ছিলেন না। এ কারণে বেলাল তার বোন ও বোন জামাইকে সঙ্গে নিয়ে সুমাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর কিছুদিন সুমা স্বামীর বাড়ি থাকলেও পারিবারিক বিরোধ থাকায় পিতার বাড়ি দর্শা গ্রামে চলে আসেন। কয়েক বছর ধরে তিনি পিতার বাড়িতেই বসবাস করছিলেন। তিন বছর আগে বেলাল সুমাকে না জানিয়ে বাদাঘাট এলাকায় আরো একটি বিয়ে করে। ওই বিয়ের কথা জানাজানি হওয়ার পর বিরোধ তীব্র হয়। সংসারের কথা চিন্তা করে সুমা ডিভোর্স দেয়নি বেলালকে।
গত কয়েক মাস ধরে বেলাল সুমার কাছে ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। স্বামীর চাপাচাপির কারণে সুমা বিভিণ্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বেলালের হাতে তিন লাখ টাকা তুলে দেয়। এরপরও বেলাল আরো দুই লাখ টাকার জন্য সুমাকে চাপ দিচ্ছিল। বুধবার রাতে বেলাল সুমার কাছে দুই লাখ টাকা চেয়ে ফোন করে। সুমা এ সময় জানায়, সে তিন লাখ টাকা ঋণ করে দিয়েছে। ওই ঋণ শোধ করতে পারছে না। নতুন করে টাকা দিতে পারবে না। এ কথা বলার পর বেলাল সুমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। দেখে নেয়ার হুমকিও দেয়।
গত বৃহস্পতিবার রাত ৭টার দিকে বেলাল তার বন্ধুকে নিয়ে আসে সুমাদের বাড়ি দর্শা গ্রামে। সুমাকে ডেকে বাইরে নিয়ে যায়। বাড়ির পূর্ব পাশে লাকড়ির ঘরের কাছে নিয়ে বেলাল ও অপর দুই যুবক তার মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলে। এ সময় তারা লাকড়ির ঘরের ভেতরে সুমাকে নিয়ে যায়। হাত-পা বেঁধে ফেলে। এ সময় বেলাল হাতের চাকু দিয়ে সুমার জিহ্বার অগ্রভাগ দ্বিখণ্ডিত করে। পরে তার বাম পায়ের গোড়ালির রগ কেটে দেয়।
ডান পায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেয়। পিঠে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। নির্যাতনের পর সুমা হঠাৎ ‘মাগো’ বলে চিৎকার দিলে মা আয়না বেগম চিৎকার শুনে এগিয়ে আসেন। তিনি দেখেন বেলাল ও তার সঙ্গে থাকা অপর দুই যুবক দেয়াল টপকে পালিয়ে যাচ্ছে। ঘটনাস্থলে সুমার রক্তাক্ত দেহ মাটিতে পড়ে আছে। রাত ৯টার দিকে গুরুতর অবস্থায় সুমাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডাক্তাররা রাতেই তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে অস্ত্রোপচার করেন।
সুমার বড় ভাই হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, রাতে তার শরীরে রক্ত দেয়া হয়েছে। শুক্রবারও তাকে রক্ত দেয়া হয়। ৫ ব্যাগ রক্ত তার শরীরে দেয়া হয়েছে। এরপরও সুমার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। তিনি বলেন, সুমার উপর যেভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে সেটি দেখে চিকিৎসকরাও আঁৎকে উঠেন। সুমা এখন ওসমানী মেডকেল কলেজ হাসপাতালের ৪র্থ তলার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত সুমার জ্ঞান ফিরেনি। সুমার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে চিকিৎসকরাও কিছু বলতে পারছেন না। কেবল বলেছেন দোয়া করতে। সুমার মা আয়না বিবি ঘটনার পর থেকে কাঁদছেন। তার উপর নির্যাতনের শাস্তি চান তিনি।
বলেন, বেলালের অত্যাচারে আজ আমার মেয়ে মৃত্যুর মুখে। এদিকে, এ ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় অভিযোগ দিতে পারেনি সুমার পরিবার। ভাই হাফিজুর বলেন, এখনও অবসর হইনি। থানায় যাবো কিভাবে। তবে, ঘটনাটি শোনার পর তৎপর হয়ে উঠেছে সিলেটের জালালাবাদ থানা পুলিশ। থানার ওসি আক্তার হোসেন বলেন, প্রথমে ঘটনাটি জানার পর প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা মিলে। মেয়েটির ওপর নির্মম অত্যাচার চালানো হয়েছে।
তিনি বলেন, মামলা পরে হবে আগে আসামি গ্রেপ্তার করতে হবে। নতুবা এরকম ঘটনা সমাজে আরো ঘটতে থাকবে। রাতে তিনি বেলাল ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করতে একাধিক অভিযান চালিয়েছেন। দর্শা গ্রামের ইউপি সদস্য দুলাল মিয়া জানিয়েছেন, সুমার ওপর মধ্যযুগীয় বর্বরতা চালানো হয়েছে। সে এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে। তিনি এ ঘটনার বিচার দাবি করেন। এমজমিন
১৬ ডিসেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস