উজ্জ্বল মেহেদী, সিলেট : বাড়ির চালতাগাছের মগডালে বসেছিল প্রাণীটি। ‘গেছো ভালুক’ ভেবে উৎসুক মানুষের ভিড় জমে গাছটির নিচে। একপর্যায়ে কৌশলে খাঁচাবন্দী করা হয়। কিন্তু কাছ থেকে দেখে এটিকে ঠিক ভালুকও মনে হচ্ছিল না। তাই মানুষের কৌতূহল বেড়ে যায় অচেনা প্রাণীটি ঘিরে। খবর পেয়ে বন বিভাগের প্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ এটিকে উদ্ধার করে গতকাল মঙ্গলবার সকালে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তার দপ্তরে নিয়ে আসে। শনাক্ত হয় এটি বিরল একটি প্রাণী, নাম—বিন্টুরং। ভালুক-বিড়াল নামেও ডাকা হয় একে।
বন বিভাগের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ দপ্তর জানায়, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বড়দল ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগাঁওয়ে গত সোমবার সকালে প্রাণীটি ধরা পড়ে। ব্রাহ্মণগাঁওয়ের কৃষক আবু বক্করের বাড়ির চালতাগাছের একটি ডালে বসা ছিল। গাছের নিচে খাঁচা রেখে ওই ডাল কেটে ফেলে অক্ষত অবস্থায় বিন্টুরংকে খাঁচাবন্দী করা হয়। খাঁচায় পুরে এটি গেছো ভালুক বলেও শনাক্ত করতে না পেরে লোকজন বন বিভাগে খবর দেয়। সোমবার রাতে উদ্ধার করে সিলেট নিয়ে আসা হয় প্রাণীটিকে। গতকাল সকালে সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রাণী বিশেষজ্ঞরা জন্তুটিকে বিন্টুরং বলে শনাক্ত করেন।
সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) এস এম মুনিরুল ইসলাম বলেন, বিন্টুরং বা ভালুক-বিড়াল বাংলাদেশ ও ভারতে বিরল এক প্রাণী। আগে বাংলাদেশের মধ্যে কেবল মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ও বান্দরবানের পাহাড়ি বনে এদের পাওয়া যেত। কিন্তু প্রায় তিন দশকে এ প্রাণীর দেখা পাওয়া যায়নি। আদমপুরসহ সিলেট অঞ্চলে বিন্টুরংয়ের দেখা এই প্রথম মিলল বলে তিনি জানান।
ডিএফও প্রথম আলোকে জানান, ধারণা করা হচ্ছে প্রাপ্তবয়স্ক বিন্টুরংটি সীমান্তের ওপারে পাহাড়ি এলাকা থেকে এসেছে। সর্বভুক এ প্রাণীটি বেশির ভাগ মাছ ও মাংস খায়। খাবারের সন্ধানে বাংলাদেশে আসতে পারে। তিনি জানান, এটিকে সপ্তাহ খানেক চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রেখে আদমপুরেই ছেড়ে দেওয়া হবে।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী অধিকারবিষয়ক সংগঠন প্রাধিকারের সভাপতি মনজুর কাদের চৌধুরী জানান, বিন্টুরং (ইংরেজি নাম: Binturong, বৈজ্ঞানিক নাম: Arctictis binturong) একটি বৃহদাকৃতির দুষ্প্রাপ্য ও ভিভারিডি পরিবারভুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ঘন বনাঞ্চল এদের আবাসস্থল। বিন্টুরংকে ভালুক-বিড়াল (বিয়ারক্যাট) বলা হয়। কারণ, এ প্রাণীটি ভালুক ও বিড়াল উভয়ের মতো দেখতে। বর্তমানে এটি শুধু বিরল নয়, বিপদগ্রস্ত একটি প্রাণী হিসেবে আইইউসিএনের লাল তালিকায় রয়েছে। -প্রথম আলো।
০৪ জানুয়ারী, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম