ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে : জীবনের গ্লানি টানছেন সুমা বেগম। জিহ্বার কাটা অংশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ডাক্তার বলেছিল- কাটা অংশ মিললেও হয়তো জোড়া লাগানোর ব্যবস্থা করা যেত। কিন্তু পাওয়া যায়নি। এ কারণে কাটা জিহ্বা নিয়েই জীবন কাটাচ্ছে সুমা।
স্বামী ও তার দুই সহযোগীর নির্মমতার শিকার হয়ে মৃত্যুর মুখে ছিল সুমা। কিন্তু ভাগ্য ভালো বেঁচে গেছে সে। এখন টানছে দুর্বিষহ জীবনের গ্লানি। মেডিকেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সুমা এখন পিতার বাড়ি সিলেট শহরতলীর পশ্চিম দর্শা গ্রামে রয়েছে। ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছে সুমা। কিন্তু স্বাভাবিক হতে পারছে না। আস্তে আস্তে কথা বলছে। স্বজনদের কাছে জানিয়েছে তার জীবনে ঘটে যাওয়া নির্যাতনের কথা।
সুমার ভাবী সিলেটের সদর উপজেলার কান্দিগাঁও গ্রামের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রুমা বেগম জানিয়েছেন- সুমা বেঁচে আছে। কিন্তু জীবন্ত লাশ হয়ে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের কোপ রয়েছে। এ কারণে প্রতি সপ্তাহেই তাকে যেতে হচ্ছে ডাক্তারের কাছে। ব্যান্ডেজ খুলে ড্রেসিং করতে হচ্ছে। তিনি বলেন- জিহ্বা কাটার পর অর্ধেক অংশ স্বামী বেলালই নিয়ে গেছে। এ কারণে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ডাক্তার বলেছিল- কাটা অংশ পেলে হয়তো জিহ্বায় জোড়া লাগানো যেত। সুমার ওপর নির্যাতন চালানো হয় বিজয় দিবসের আগের রাতে। দক্ষিণ সুরমার খানুয়া গ্রামের বেলালকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল সুমা বেগম। কিন্তু ওই স্বামীই দুই সহযোগীকে নিয়ে সুমাকে ঘরে থেকে ডেকে এনে হাত-পা বেঁধে নির্মম নির্যাতন করে। এ সময় তারা সুমার জিহ্বা কেটে দেয়। বাম পায়ের রগ কেটে দেয়। আর পিঠেও নির্যাতন চালায়।
এ ঘটনায় বেলালের মাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ঘটনার ১০ দিন পর বেলাল সিলেটের আদালতে হাজির হয়। পরে পুলিশ বেলালকে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও সে হামলার ঘটনা স্বীকার করেনি। বরং পুলিশকে নানা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে। সুমার পরিবার জানায়- বেলাল ঘটনার দিন মোটরসাইকেল নিয়ে সুমাদের গ্রামে এসেছিল। ঘটনার পর সে মোটরসাইকেল ও জুতা রেখে পালিয়ে যায়। দিবালোকের মতো সব কিছু পরিষ্কার হলেও বেলাল পুলিশের কাছে ঘটনা স্বীকার করেনি।
তারা আশা করেন, সুমার ওপর হামলার ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা চলছে। সেটির আভাস ইতিমধ্যে পাওয়া গেছে। একই ভাবে তারা এলাকায় নানা অপপ্রচার রটাচ্ছে। এতে করে সুমার পরিবার নতুন করে ষড়যন্ত্রের মুখে পড়েছে। তবে- জালালাবাদ থানা পুলিশ জানায়- বেলালই ঘটনাকারী। এটি ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। তার দুই সহযোগী এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। সুমার স্বামী বেলাল সুমাকে বিয়ের পর পরিবারের চাপে আরো একটি বিয়ে করেছিলেন। ওই বিয়ের পর থেকে বেলাল স্ত্রী সুমার কাছে ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে।
সুমা স্বামীর মন রক্ষার্থে বিভিন্ন এনজিও থেকে ৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে বেলালের হাতে তুলে দিয়েছিল। আর বাকি দুই লাখ টাকা না দেয়ায় তার ওপর এই নির্যাতন চালানো হয়। সুমার ভাই হাফিজ ও ভাবী রুমা জানিয়েছেন, সুমার চিকিৎসায় প্রচুর টাকা ব্যয় হয়েছে। সুমা জীবন ফিরে পেয়েছে। এখন সে ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছে। কিন্তু এনজিওর পাওনাদাররা ক্রমাগত টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। সুমার চিকিৎসা ব্যয় বহন করা ও ঋণের টাকা পরিশোধ করা তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
তারা বলেন- এরপরও সুমার ওপর যে নির্যাতন চলছে সেটি সুষ্ঠু বিচার হলে শান্তি পাবো। কারণ সুমার ওপর অন্যায় অত্যাচার চালানো হয়েছে। পিতৃহারা মেয়ের ওপর এমন ঘটনার বিচার না হলে আফসোসের অন্ত থাকবে না। এজন্য তারা সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাহায্য কামনা করেন। এমজমিন
১৪ জানুয়ারি ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এসবি