বুধবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৭, ১২:৪৬:৪৩

জুয়াড়িরা ভারতে অর্থ পাচার করে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন!

জুয়াড়িরা ভারতে অর্থ পাচার করে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন!

দীন ইসলাম : বাংলাদেশের নেত্রকোনা ও ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের মধ্যে মৈত্রী জুয়া খেলা জমে উঠেছে। মেঘালয় থেকে পরিচালিত ‘তীর কাউন্টার’ নামে একটি অনলাইন মাধ্যমে এ খেলা চলছে। এর মাধ্যমে দেশীয় জুয়াড়িরা ভারতে অর্থ পাচার করছে। সর্বস্বান্ত হচ্ছেন নেত্রকোনার কয়েকটি উপজেলার নিরীহ বাসিন্দারা। বাংলাদেশ অংশে এ ভয়ানক খেলার সঙ্গে নেত্রকোনা জেলার ২৬ জন ব্যক্তি জড়িয়ে গেছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকদের মধ্যে এ জুয়া খেলা বেশ জমে উঠেছে। বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তের জেলা নেত্রকোনায় এ খেলা চলছে চুটিয়ে। জেলাটির দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা উপজেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে মাদকসহ অন্যান্য পণ্যের চোরাকারবার বেশি। এলাকাটি জেলার অন্য এলাকার তুলনায় বেশ অনগ্রসর। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ‘তীর কাউন্টার’ নামে এক ধরনের অনলাইন জুয়া খেলা শুরু হয়েছে। এটি ধীরে ধীরে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে।

দুর্গাপুর উপজেলার কালিকাপুর, ফান্দা, আগাড়, ফারংপাড়া ও তিনালী মোড় এবং কলমাকান্দা উপজেলার পাঁচগাঁও, মহিষখলা, খারনই, লেঙ্গুড়া বাজার ও গোবিন্দপুর বাজার এলাকার গরিব, নিরীহ ও সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি জুয়া খেলায় জড়িয়ে পড়েছে। এসব নিরীহ মানুষকে প্ররোচনা দিচ্ছে অসৎ ব্যক্তিরা। তাই নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী কয়েকটি এলাকার মানুষ সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়ছে। তীর কাউন্টার নামের জুয়াখেলাটি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং থেকে পরিচালিত হচ্ছে।

প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং থেকে www.teercounter.com ওয়েব সাইটে ‘তীর কাউন্টার’ নামের খেলাটি পরিচালিত হয়। ইন্টারনেট ব্যবহার করে এন্ড্রয়েড মোবাইল এবং কম্পিউটারের মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তি যে কোনো জায়গা থেকে এ খেলায় অংশ নিতে পারে। প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত ০ থেকে ৯৯ নম্বরে খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়। খেলায় অংশগ্রহণকারীরা যে কোনো নম্বরের বিপরীতে টাকা বাজি ধরতে পারে। বিকাল চারটার পর একই ওয়েবসাইটে জুয়া খেলার ফল প্রকাশিত হয়।

বাংলাদেশ অংশে স্থানীয় জুয়াড়িরা দুর্গাপুর-কলমাকান্দা উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় এনালগ পদ্ধতি ব্যবহার করে নিজেরা জুয়ার বোর্ড বসায়। তারা ০-৯৯ পর্যন্ত লেখা একটি শিট ব্যবহার করে। কোনো ব্যক্তি কোন্‌ সংখ্যায় টাকা ধরলে ওই নম্বরের বিপরীতে বিষয়ব্যক্তির নাম ও টাকার পরিমাণ লিখে কার্বন কপিটি ওই ব্যক্তিকে দিয়ে দেয়া হয়। পরে বিকাল চারটায় www.teercounter.com ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিজয়ী সংখ্যাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

জুয়া খেলায় অংশ নেয়া ব্যক্তি বা জুয়াড়িরাও এন্ড্রয়েড মোবাইলফোন এবং কম্পিউটারের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে যে কোনো জায়গা থেকে বিজয়ী সংখ্যা দেখতে পারে। জুয়ার বোর্ড পরিচালনাকারী ব্যক্তিদের (কাউন্টার) সঙ্গে পরিচিত ব্যক্তিরা সরাসরি জুয়ার বোর্ডে উপস্থিত না থেকেও খেলায় অংশ নিয়ে থাকে। এমন ক্ষেত্রে অংশ নিতে ইচ্ছুক ব্যক্তি  বৈকালিক ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বোর্ড পরিচালনাকারী ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট সংখ্যার বিপরীতে যত টাকা বাজি ধরতে চায় তা পাঠিয়ে দেয়।

প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, জুয়া খেলাটি পরিচালনার জন্য জুয়াড়িরা শুধুমাত্র ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং নিয়ন্ত্রিত www.teercounter.com ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘তীর কাউন্টার’ জুয়া খেলার ফলাফলটি ব্যবহার করে। জুয়া খেলার বাকি সব পর্যায় স্থানীয়ভাবে শেষ করা হয়। এ কারণে মেঘালয়ের শিলং থেকে ওয়েবসাইটে ‘তীর কাউন্টার’ জুয়া খেলা পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থানীয় জুয়াড়িদের আর্থিক বা অন্য কোনো যোগাযোগ করার প্রয়োজন হয় না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মৈত্রী জুয়া খেলার কারণে নেত্রকোনার স্থানীয় নিরীহ জনসাধারণের অনেকেই প্রতারিত হয়েছেন। তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে এখন এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। নিঃস্ব হয়ে এলাকা পর্যন্তও ছেড়েছে। প্রতিবেদনে জুয়া খেলা পরিচালনার সঙ্গে বাংলাদেশ অংশে জড়িতদের নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুয়া খেলাটি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং থেকে একটি ওয়েবসাইটে পরিচালিত হয়।

এ কারণে দেশীয় জুয়াড়িদের ব্যবহার করে কোনো কুচক্রীমহল ভারতে অর্থ পাচার করতে পারে। এতে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, জুয়া খেলাটি আপাতত দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা বা নেত্রকোনা জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। তবে ওয়েবসাইট ব্যবহার করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ও বিকাশ পদ্ধতি চালু থাকায় খেলাটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনটা হলে সারা দেশের সীমান্ত এলাকায় জুয়াড়িদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাবে। এ কারণে সীমান্ত এলাকার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা কালোবাজারিদের দখলে চলে যেতে পারে ও দেশের অর্থ বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এভাবে জুয়া খেলা চলতে থাকলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় জুয়া খেলার অর্থ যোগান দিতে জুয়াড়িরা ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণ, গুম, খুনসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়বে। এতে এলাকার সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হবে। একই সঙ্গে ওই সব এলাকার মানুষের নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়বে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনা জেলার এসব জুয়াড়িদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

এ জন্য এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জুয়া খেলার কুফল সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে জানাতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। এদিকে বিটিআরসিকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং থেকে পরিচালিত www.teercounter.com ওয়েবসাইটটি ব্লক করার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ জন্য প্রক্রিয়া চলছে। এমজমিন
১৮ জানুয়ারি ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে