ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে : ঝুমা আমার বিয়ে করা বউ। তার সঙ্গে দীর্ঘদিন প্রেম করেছি। এরপর কোর্ট ম্যারেজ করেছি। কিন্তু সে অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। আমাকে এড়িয়ে চলছিল। এ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে ঝুমাকে আমি ছুরি মেরেছি।’ গতকাল জকিগঞ্জের আদালতে স্ব-ইচ্ছায় দেয়া জবানবন্দিতে আলোচিত ঘটনা স্বীকার করেছে কলেজছাত্র বাহারউদ্দিন।
এর আগে সকালে জকিগঞ্জ থানা পুলিশের কাছেও এসব কথা জানায় সে। বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে সোয়া ৪টা পর্যন্ত জকিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. খায়রুল আমীন বাহারের বক্তব্য গ্রহণ করেন। আদালতে ও পুলিশের কাছে দেয়া বক্তব্যে বাহার নিজেকে ঝুমার স্বামী হিসেবে পরিচয় দেয়। বলে, ঝুমার সঙ্গে তার সেই শৈশব কাল থেকে প্রেম চলছে। তারা দুইজন গভীর প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি জানতো ঝুমার পরিবারও। এ কারণে সে অবাধে যাতায়াত করতো ঝুমাদের বাড়িতে।’
বাহার জানায়- ‘২০১৫ সালের জুলাই মাসে সে ঝুমাকে সিলেটের কোর্টে বিয়ে করেছে। ওই সময় ঝুমার বয়স কম ছিল। স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছ থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে ঝুমার বয়স ১৮ বছরের ওপরে করা হয়। এরপর তারা কোর্ট ম্যারেজ করে। বিয়ের পর থেকে ঝুমা তার পিতার বাড়িতেই ছিল। বিষয়টি কেউ জানতো না।’ সে জানায়- ‘ঝুমার মা বিয়ের কথা জানতে পেরে বাধা হয়ে দাঁড়ান। আর কয়েক মাস ধরে ঝুমাও তাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিল। এ কারণে তার ওপর ক্ষোভ ছিল।’
বাহার ঘটনার দিনের কথা জানিয়ে বলে-‘ঘটনার দিন সে তার স্ত্রী ঝুমাকে জোরপূর্বক তার বাড়ি নিয়ে যেতে চাইছিল। কিন্তু ওই সময় ঝুমা ও তার মা হামলা চালায়। এ কারণে নিজেকে রক্ষা করতে সঙ্গে থাকা ছুরি দিয়ে এলোপাথাড়ি আঘাত করি।’ ঝুমার ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছিল গত রোববার। ওই দিন তার ছোট ভাই আরিফকে স্থানীয় ইছামতি উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করাতে নিয়ে যাওয়ার পথে জকিগঞ্জের কালীগঞ্জ বাজার সংলগ্ন সুরমা নদীর তীর রসুলপুর রাস্তায় স্থানীয় কলেজছাত্রী ঝুমার ও তার মায়ের ওপর হামলা চালায় বাহার। এ সময় বাম হাত ও পেটে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর জখম হয় ঝুমা। মেয়েকে রক্ষা করতে গিয়ে মা করিমা বেগমও আহত হন।
মা-মেয়ে দুজনই সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঝুমার শারীরিক অবস্থা বর্তমানে ভালো বলে ডাক্তাররা জানিয়েছেন। ছুরিকাঘাতের ঘটনায় গত সোমবার ঝুমার পরিবার জকিগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেছে। মামলায় প্রধান আসামি বাহার। মামলার আগে বাহারের বড় ভাই নাসির উদ্দিনকে আটক করে পুলিশ।
রসুলপুর গ্রামে ঝুমার বড় বোন জামিলা জানান, তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে ঝুমা চতুর্থ। তার বাবা মুসলিম আলী দিনমজুরের কাজ করেন। বাড়ির গাছ বিক্রি ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় চলছে ঝুমার চিকিৎসা। রোববার ঘটনার পরপরই পালিয়ে যায় বাহার উদ্দিন। এরপর সে অবস্থান নিয়েছিল আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। কিন্তু পুলিশি অভিযান শুরু হওয়ায় গত চার দিনে সে একাধিকবার আস্তানা বদল করে। অবশেষে গতকাল সকালে সে তার এক দুলাভাইয়ের বাড়ি থেকে বেরিয়ে অন্যস্থানে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে পুলিশ অভিযান শুরু করলে সে মির্জাচক এলাকার জঙ্গলে অবস্থান নেয়। পরে জকিগঞ্জ থানা পুলিশ তাকে ওই জঙ্গল থেকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে।
জকিগঞ্জ থানার ওসি হাবিবুর রহমান জানান, ঘটনার পরপরই পুলিশ সক্রিয় হয়ে উঠায় বাহারউদ্দিন জকিগঞ্জেই অবস্থান করছিল। এবং সে কয়েক দফা স্থান পরিবর্তন করে। পরে গতকাল সকাল ৮টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর গ্রেপ্তারের পর সে পুলিশের কাছে সব কিছু স্বীকার করে বলে জানান তিনি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইমরোজ তারেক জানান, বিকাল সাড়ে ৩টায় বাহারকে জকিগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক খায়রুল আমিনের আদালতে হাজির করলে সে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করে জেলা হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এমজমিন
২০ জানুয়ারি ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এসবি