মিলাদ জয়নুল : কানাডা পাঠানোর নাম করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। আদম ব্যবসার আড়ালে লোকজনকে জিম্মি করে মূলত মুক্তিপণ আদায় করা এই চক্রের কাজ। সর্বত্র এদের মায়াবি জাল বিছানো। তবে কাউকে তারা স্বপ্নের দেশ কানাডায় পাঠাতে পারে না। তাদের বহুমুখী প্রতারণার শিকার হয়েছেন বেশ কয়েকজন যুবক।
সম্প্রতি এ ধরনের একাধিক চাঞ্চল্যকর ঘটনার খবর পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সিলেট শহর থেকে এক মহিলাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। জানা যায়, বিয়ানীবাজার উপজেলার শেওলা ইউনিয়নের ঘড়ুয়া গ্রামের এক তরুণ একইরকম প্রতারণার শিকার হয়েছেন। মোস্তাফিজুর রহমান লিমন (২২) নামের ওই তরুণ কানাডায় যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। এ সুযোগ নিয়ে প্রতিবেশী সমছুল ইসলাম সমছু মিয়ার ছেলে সাইফুর রহমান তাকে কানাডায় পাঠিয়ে দেবে মর্মে চুক্তি করেন।
২০ লাখ টাকার বিনিময়ে লিমনকে কানাডায় পৌঁছে দেয়া হবে বলে জানান সাইফুর। কথামত সাইফুরের পিতা সমছু মিয়ার কাছে টাকা রাখা হয়। প্রায় ২৫ দিন পূর্বে লিমনকে কানাডায় পাঠানোর জন্য ঢাকায় নেয়া হয়। সেখানে এক আদম ব্যবসায়ী রাজারবাগ থেকে তাকে রিসিভ করে বেনাপোলগামী গাড়িতে উঠিয়ে দেয়। বেনাপোলে পৌঁছার পর অবৈধপথে লিমনকে কলকাতা নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে বিমানে করে আরেকটি দুর্গম এলাকায় নিয়ে যায় প্রতারক আদম ব্যবসায়ীরা। বিমানবন্দরের অদূরে একটি বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর শুরু হয় নির্যাতন।
দু’একদিন পর লিমনের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ভারতীয় প্রতারকরা তাকে যেভাবে শিখায়, সেভাবেই ফোন করে বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে থাকে সে। মোবাইলফোনের নাম্বার রোমিং করে বাড়ির লোকজনদের জানানো হয়-লিমন কানাডা পৌঁছে গেছে। এ খবর শুনে তার পরিবারের সদস্যরা দালাল সাইফুরের হাতে ২০ লাখ টাকা তুলে দেন। টাকাগুলো হাতিয়ে নেয়ার পর মুক্তি পান লিমন। তিনি জানান, ভারতের ওই বাড়িতে অনেক বাঙালি তরুণ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তারা সবাই কানাডায় যাওয়ার জন্য আদম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ছিল।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ নিয়ে লিমন জানান, অন্তত ২০ জন তরুণ ওই বাড়িতে বন্দি। তাদের একজনকে অপরজনের সঙ্গে কথা বলতে দেয়া হয় না। সারাক্ষণ অস্ত্রধারীরা পাহারায় থাকে। সকালে-বিকালে দু’বেলা তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়। ভারতীয় মোবাইলফোনের নাম্বার রোমিং করে এটাতে কানাডার নাম্বার সংযুক্ত করা হয়েছে। ওই বন্দিশালায় পৌঁছার পরই ওইসব নাম্বার ব্যবহার করে বাড়ির লোকজনদের ফোন দেয়া হয়।
আদম ব্যবসায়ীরা মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে শিখিয়ে দেয়-‘আমি কানাডায় পৌঁছে গেছি। আমাকে কাজের পারমিশন কার্ড দেয়ার পর আত্মীয়স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে।’ ব্যাস-এ পর্যন্তই। আর কথা না বাড়িয়ে চুক্তির টাকা আনতে বাড়িতে লোক পাঠিয়ে দেয় আদম ব্যবসায়ীরা। লিমন আরো জানান, আদম ব্যবসায়ী সাইফুর রহমান তাদের টাকা ফিরিয়ে দেয়া হবে বলে মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রায় বছর তিনেক আগে উপজেলার বারইগ্রামের তোফায়েল আহমদ নামের আরেক যুবককে একই কায়দায় ভারতে পাঠিয়ে ১৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় আদম ব্যবসার ছদ্মাবরণ করা প্রতারক চক্র। তাকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর কথা ছিল।
এখন প্রতারক চক্রের জাল বিস্তৃত হয়েছে গ্রামান্তরে। প্রতারণার কৌশল হিসেবে কানাডায় পাঠাতে চুক্তি করে তারা। এরপর ফিল্মী স্টাইলে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা এ চক্রের কাজ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, আমি এ বিষয়ে এখনো কিছু জানতে পারিনি। তবে কেউ অভিযোগ করলে এসব প্রতারক অপহরণকারীদের শিকড় উপড়ে ফেলা হবে। মানবজমিন
২৫ জানুয়ারি ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এসবি