বিয়ানীবাজার থেকে : ঢাকায় দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত অনলাইন লেখক ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র নাজিম উদ্দিন সামাদের (২৬) মরদেহ দাফন করা হয়েছে। গতকাল সকাল ১১টায় জানাজা শেষে কঠোর পুলিশি পাহারায় পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়। জানাজায় এলাকার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে নিহতের চাচাতো ভাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী বদরুল হক দেশে পৌঁছে বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে পরিবারের পক্ষে তার মরদেহ রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে গ্রহণ করেন। এ সময় পরিবারের সদস্য ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। এ নিয়ে নিহতের পরিবারের সদস্যরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
নিহতের ভাইপো সুমন আহমদ জানান, শুক্রবার ভোর সাড়ে ৬টায় নাজিম উদ্দিন সামাদের কফিন সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার তিলপাড়া ইউনিয়নের টুকাভরাউট গ্রামে পৌঁছে। তিনি ওই গ্রামের মৃত আবদুস সমেদের ৪র্থ সন্তান। এলাকার শত শত লোক রাত থেকে মরদেহের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। মরদেহ তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছার পর একনজর দেখতে উপচেপড়া ভিড় করে সাধারণ মানুষ।
এ ঘটনায় ডিএমপির সূত্রাপুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক ও লাশ উদ্ধারকারী নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৪-৫ জনকে আসামি করে বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সমীর কুমার সূত্রধরকে মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বাদী নুরুল ইসলাম সূত্রাপুরের একরামপুর মোড় থেকে নাজিমের লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সান্ধ্যকালীন ক্লাস শেষে বাসায় ফেরার পথে হৃষিকেশ দাস রোডে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র নাজিম উদ্দিনকে কুপিয়ে ও গুলি চালিয়ে হত্যা করে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। ইসলাম ধর্মের কঠোর সমালোচনা করে অনলাইনে লেখালেখি করতেন নাজিম। এ কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে কিনা তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে।
নিহতের মা তহিরুন নেসা (৬০) বলেন, ‘অনুমান তিন মাস আগে নাজিম বাড়িত আইয়া গেছে। লেখাপড়ার লাগি হে বাড়িত খম আইতো। আমার লগে হে পরতেদিন ২-৩ বার করিয়া মাতিতো।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, ‘আমি একলা থাকতাম পারমুনি, আমার পুয়ায় জিগাইতো। এখন হে-উ আমারে একলা পালাইয়া গেলগি’। এসব কথা বলেই ফের মূর্ছা যান তহিরুন নেসা।
নাজিমের চাচাতো ভাই বদরুল হক জানান, ‘বাড়ির খাম-খাজ হখলতাউ নাজিমে খরতো। আমরা লন্ডন থাকি কোনতা খইয়া দিলে হে খুব সকাল তা করিলাইতো।’ তিনি বলেন, ‘লেখালেখিতে খেউ আঘাত পাইলে আমরারে জানইতা পারতা। কিন্তু না জানাইয়া ইলা খুন করার মানি কিতা।’ তিনি প্রশ্ন রাখেন- ‘জানে মারিয়া ইসলাম কায়েম হইবনি।’
নাজিম উদ্দিন সামাদের ফুফাতো ভাই ছাদেক আহমদ বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ লাশ গ্রহণ কিংবা দাফন কাজে অংশ নিতে আসেননি। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র খুন হলো, আর দূর থেকে আন্দোলন করে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা ভালো লক্ষণ নয়।
বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জুবের আহমদ বলেন, লাশ দাফনে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ পাঠাই। এ সময় কোনো সমস্যা হয়নি বলে জানান তিনি। এদিকে অনলাইন লেখক নাজিম উদ্দিন সামাদকে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী দাবি করে হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন বিয়ানীবাজার গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র হাসান শাহরিয়ার। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে আমরা পুরো উপজেলার শিক্ষার্থীদের নিয়ে সোমবার দুপুরে মানববন্ধন কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। -এমজমিন
৯ এপ্রিল ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস