চৌধুরী মুমতাজ আহমদ: স্কুল থেকে ফিরেই ব্যাগ ছুঁড়ে দিয়ে কাঁদতে বসে যেতেন সুবর্ণা সিলেটের সংস্কৃতি অঙ্গনের চেনামুখ সুবর্ণা সাহা শিক্ষকতা করছিলেন নগরীর খাজাঞ্চিবাড়ি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। ‘অজানা’ এক যন্ত্রণা এ স্কুলে যোগদানের পর থেকেই তার সঙ্গী হয়েছিল। তাই স্কুলের এই ‘চাকরি’টা তিনি টেনে নিয়ে যেতে পারছিলেন না। এ মাসেই স্কুলের চাকরি ছেড়ে দেবেন, এমন সিদ্ধান্তও নিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু কি যে হয়ে গেল মাস পেরোনোর আগেই নিজের জীবনের ইতি টানেন সুবর্ণা।
চেনাজানা যে-ই সুবর্ণার কথা বলছিলেন, সবারই এক কথা, হাসিখুশি আর প্রাণবন্ত এ মেয়েটির মনে কী এত দুঃখ লুকিয়ে ছিল? চাপা স্বভাবের সুবর্ণা সাহা কাউকেই তার মনের গহীনের দুঃখের কথা টের পেতে দেননি। ক’দিন ধরে অসুস্থ থাকায় তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডাক্তার জানান শরীরে কোনো রোগ নেই। মনের মাঝে বিষণ্নতার ছায়া নেমেছে। সে বিষণ্নতার ছায়া যে কতটা অন্ধকার ছিল সেই সন্ধ্যাতেই প্রমাণ মেলে। গত বুধবার সন্ধ্যায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন নৃত্যশিল্পী সুবর্ণা।
অনেকেরই সন্দেহ প্রেমের কারণে আত্মহত্যা করেছেন সুবর্ণা সাহা। তবে তার মা বলছেন, মেয়ের কারো সঙ্গে এমন সম্পর্ক ছিল বলে তার জানা নেই। সবার সঙ্গেই ওর ভালো সম্পর্ক, কারো সঙ্গে বিশেষ কোনো সম্পর্কে জড়ায়নি তার মেয়ে। ভেবেছিলেন এ বছরই মেয়ের বিয়ে দেবেন, গয়নাও গড়িয়ে রেখেছিলেন। সুবর্ণার মা মমতা সাহা জানান, মেয়েও রাজি ছিল। শুধু শর্ত ছিল মাকে ছেড়ে দূরে যেতে পারবে না সে। আর ছাড়তে পারবে না নৃত্য। কিন্তু গভীর এক যাতনায় মা আর নৃত্যকে ছেড়ে ঠিকই অসময়ে চলে গেলেন সুবর্ণা সাহা।
সুবর্ণা সাহা আগেও শিক্ষকতা করেছেন। এর আগে তিনি শিক্ষকতা করতেন স্কলার্সহোমে। সে চাকরি ছেড়ে সদ্যই মিউজিক টিচার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন নগরীর খাজাঞ্চিবাড়ি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। সুবর্ণার মা বললেন, এ স্কুলে যোগদানের পর থেকেই তার মেয়েটির জীবনে কালো ছায়া নামে। স্কুলে যাওয়ার সময়-ফেরার পর কখনোই তার মন ভালো থাকতো না। কিন্তু বিকেলে যখন নাচের ক্লাসে নাচ শেখাতে যেত মেয়েটি যেন প্রাণ ফিরে পেত। খুব চাপা স্বভাবের মেয়েটি নিজের ভেতরে দুঃখ বয়ে বেড়ালেও মায়ের কাছে আড়াল করেই রেখেছিল। সুবর্ণার মা সিলেটের রসময় উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষিকা মমতা সাহার ধারণা, স্কুলেই লুকিয়ে আছে কোনো রহস্য।
নগরীর নয়া সড়কে অবস্থিত খাজাঞ্চিবাড়ি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ সিলেটের একটি প্রতিষ্ঠিত বিদ্যাপীঠ। কানাঘুষায় জানা গেছে ‘রহস্য’ ঠিকই লুকিয়ে আছে এ প্রতিষ্ঠানে। তবে কড়া নিরাপত্তার দেয়াল পেরিয়ে সে রহস্যের খবর বাইরে বেরোয় না। ভেতরে যারা আছেন তাদের জানা থাকলেও ভয়ে মুখ খোলেন না। আছে চাকরি হারানোর ভয়, মান হারানোর ভয়। আর তাই দাবি ওঠেছে স্কুলকেন্দ্রিক অজানা যন্ত্রণার রহস্য বের করার।-মানবজমিন
১ মে,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সুবজ/এসএ