ওয়েছ খছরু: চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের শেষদিকে এসে সিলেটে এগিয়ে গেল বিএনপি। নির্বাচন যতই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হচ্ছে ততই বিএনপির দাপট বাড়ছে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, প্রথম দফা নির্বাচন থেকে নিরপেক্ষ মাঠ থাকলে প্রথম তিন ধাপেও এগিয়ে যেত বিএনপি। এরপরও শেষদিকে এসে মাঠ কিছুটা নিরপেক্ষ থাকায় ফল তাদের দিকে আসছে বলে মনে করেন নেতারা। এই মুহূর্তে সিলেট বিএনপির অবস্থা তেমন ভালো নয়। যদিও সিলেট বিএনপির নতুন কমিটি যাত্রা শুরু করেছে- এরপরও তৃণমূলের নেতারা জেগে উঠতে পারছেন না। অনেক স্থানেই বিএনপির প্রার্থীরা ‘ধানের শীষ’ প্রতীক না নিয়ে স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচন করে ফলাফল ঘরে তুলছেন।
চতুর্থ দফা সিলেটের বিশ্বনাথ, দক্ষিণ সুরমা ও গোলাপগঞ্জের ২৪ ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ১৭টিতেই পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। বিজয়ী হয়েছেন মাত্র ৭টিতে। বিএনপির ৯ প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। তবে তাদের মধ্যেও অবশ্য রয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ৫ প্রার্থী। জয় পেয়েছেন বিএনপির ২ বিদ্রোহী। তাছাড়া ৩টি ইউনিয়নে জিতেছেন জামায়াতের ৩ নেতা। সিলেটের বিশ্বনাথের ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন ৩টি করে ইউনিয়নে। অপর দুটি ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন দু’দলের বিদ্রোহী দুই প্রার্থী।
এর মধ্যে বিএনপির নিখোজ কেন্দ্রীয় নেতা এম ইলিয়াস আলীর গ্রামের বাড়ি অলংকারীতে বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছেন বিএনপিরই বিদ্রোহী প্রার্থী নাজমুল ইসলাম রুহেল। তার কাছে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আব্দুল হক পরাজিত হয়েছেন। আব্দুল হককে বিএনপির মনোনয়ন দিয়েছিলেন নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা। কিন্তু তৃণমূলের মত ছিল নাজমুল ইসলাম রুহেলের পক্ষে। এ কারণে দিন শেষে জয় ঘরে তুলেছে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী। তবে, বিশ্বনাথ বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, রুহেল বিএনপিরই একজন। তার বিজয় হচ্ছে বিএনপিরই বিজয়।
বিশ্বনাথের খাজাঞ্চিতে বিএনপির গিয়াস উদ্দিন ও লামাকাজী ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী কবির হোসেন ধলা মিয়া। দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩টিতে জিতেছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী। এছাড়া ২টিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এবং অপর ২টি জামায়াত সমর্থিত দুজন জয়ী হয়েছেন। বিএনপির বিজয়ীরা হলেন- কুচাই ইউনিয়নে আবুল কালাম, বরইকান্দি ইউনিয়নে হাবিব হোসেন ও দাউদপুর ইউনিয়নে এইচএম খলিল। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সিলামে ইকরাম হোসেন বকস ও মোগলাবাজার ফখরুল ইসলাম সাইস্তা নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়াও জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জালালপুর ইউনিয়নে সুলাইমান হোসেন ও লালাবাজারে পীর মো. ফয়জুল হক বিজয়ী হয়েছেন।
সিলেটের গোলাপগঞ্জে বিএনপির চার প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচিত হয়েছেন, লক্ষণাবন্দ ইউনিয়নে নসিরুল হক শাহীন, ভাদেশ্বর ইউনিয়নে জিলাল উদ্দিন, গোলাপগঞ্জ সদর ইউনিয়নে আশফাক আহমদ চৌধুরী ও ফুলবাড়ী ইউনিয়নে মাহবুবুল আলম নির্বাচিত হন।
এছাড়াও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে পশ্চিম আমুড়া ইউনিয়নে রুহেল আহমদ, বাঘা ইউনিয়নে ছানা মিয়া বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিন উপজেলায় আওয়ামী লীগের এমন ভরাডুবি হওয়ায় দলের নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে। অনেকেই এ পরাজয়ে প্রধান কারণ হিসেবে প্রার্থী নির্বাচনে ভুল হয়েছে বলে মনে করেন। তাছাড়া দলীয় কোন্দল এবং সরকারের প্রতি ক্ষোভের কারণেও স্থানীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশ্বনাথ বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, এবার বিশ্বনাথে বিএনপির প্রার্থী নির্বাচনে বেশ নাটকীয়তা ঘটেছে।
কোনো কোনো ইউনিয়নে বিএনপির নামে ব্যবসায়ীরা নির্বাচন করেছেন। এ কারণে তৃণমূলের নেতারা বিএনপির পক্ষে ছিলেন না। সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ জানিয়েছেন, সিলেটে অনেকটা প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকছে। এতে করে মানুষ তার মতামত প্রকাশ করতে পারছে। মানুষের মতামত সরকারবিরোধী। শেষ ধাপেও সিলেটে বিএনপি এগিয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।-মানবজমিন
৯ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ