খলিলুর রহমান : নাইমা শওকত সেতু। কুমিল্লা জেলার কাচিয়াতুলি আদর্শ সদর এলাকার একটি স্কুলে ৬ষ্ট শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। সিলেটে তার বাবার বাড়ি থাকলেও সে জন্মগ্রহণ করেছে নানাবাড়ি কুমিল্লায়। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। জন্মের পর সেতুর ভাগ্যে বাবার দেখা মিলেনি। প্রায় সে বাবার কথা জানতে চাইতো। কিন্তু মা বলতেন বাবা লন্ডনে।
বুধবার রাতে এমনটাই জানিয়েছেন হাউজিং এস্টেটের ৮ নম্বর বাসার লন্ডন প্রবাসী মো. শওকত আলীর দ্বিতীয় স্ত্রী ছালেহা খানম। তিনি জানান, ২০০১ সালে প্রেমের টানে শওকতের হাত ধরে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসেন তিনি। এরপর উভয় পরিবার তাদের সম্পর্ক মেনে নেয়। শুরু হয় তাদের সংসারিক জীবন। এরপর শওকত কখনো তাকে নিয়ে ঢাকা, আবার কখনো সিলেটে থাকতেন। ঢাকা ও সিলেটে শওকতের নিজের বাড়ি আছে বলে জানান ছালেহা।
২০০৩ সালে তাদের একটি মেয়েসন্তানও জন্ম নেয়। কিন্তু মেয়েটি জন্মের পর তার কোনো খোঁজখবর নেননি লন্ডন প্রবাসী শওকত। শওকতের সঙ্গে অনেকবার যোগাযোগ করেও লাভ হয়নি। এ বিষয়টি শওকতের পরিবারকে জানিয়েও কোনো কাজ না হলে পিত্রালয় কুমিল্লায় ফিরে যান ছালেহা।
তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, সেতুর জন্মের কিছুদিন ফের বিয়ে করেন শওকত। এভাবে তিনি ৩/৪টি বিয়ে করেন। একপর্যায়ে ছালেহাকে বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন শওকত। এ নিয়ে শওকতের সাথে স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করার পরও কোনো লাভ হয়নি। তাই ছালেহা বাধ্য হয়ে শওকতের কাছে তালাক চান। কিন্তু তাতেও অপারগতা প্রকাশ করেন শওকত।
ছালেহা জানান, চলতি মাসে লন্ডন থেকে সিলেট আসেন শওকত। এ খবর পেয়ে সেতু তার বাবাকে দেখতে আগ্রহ প্রকাশ করে। তাই বুধবার মেয়েকে নিয়ে কুমিল্লা থেকে সিলেট আসেন ছালেহা। সিলেট এসেই তিনি নগরীর হাউজিং এস্টেটে স্বামীর বাসায় যান। মেয়েকে নিয়ে বাসার ভেতরে প্রবেশকালে শওকত তাদেরকে দেখেও না দেখার ভান করে বাইরে চলে যান।
বাসায় প্রবেশ করে ছালেহা দেখতে পান সেখানে কয়েকজন মহিলাকে। কিছুক্ষণ পর শওকত বাসায় ফিরলে ওই মহিলাদের পরিচয় জানতে চান ছালেহা। এ সময় মহিলাদেরকে আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ছালেহাকে এ ব্যাপারে কোনো কথা না বলতে শাসান তার স্বামী।
কয়েক মিনিট পর অতর্কিতভাবে ছালেহাকে মারধর শুরু করেন শওকত। এ সময় নিজ সিএনজি অটোরিকশা চালক কয়েছকে বাসায় ডেকে আনেন। পরে মেয়ের সামনে লোহার রড দিয়ে পেটাতে থাকেন ছালেহাকে। এখানেই ক্ষান্ত হননি পাষণ্ড ওই লণ্ডন প্রবাসী। ছালেহাকে গলাচেপে হত্যারও চেষ্টা করেন। তবে ছালেহার চিৎকারে প্রতিবেশী লোকজন বাসায় এগিয়ে আসলে পিছু হটেন শওকত।
বিষয়টি স্থানীয় কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েছ লোদীকে জানানো হলে তিনি ওই বাসায় যান এবং বিমানবন্দর থানা পুলিশকে অবগত করেন। খবর পেয়ে পুলিশও ঘটনাস্থলে পৌঁছে ছালেহাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে ছালেহা প্রথমিক চিকিৎসা নিয়ে বিমানবন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেছেন বুধবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে।
বিমানবন্দর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জালাল বলেছেন, ‘হাউজিং এস্টেটে এক লন্ডন প্রবাসী তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে মারধর করার ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি।’
চিকিৎসা ও থানায় সাধারণ ডায়েরি করে ছালেহা ও তার মেয়ে হাউজিং এস্টেটস্থ ৮ নম্বর বাসায় যান। এ সময় শওকত তার ব্যবহৃত রুমগুলো তালাবদ্ধ করে রাখায় মা-মেয়ে আশ্রয় নেন ভাড়াটিয়ার ঘরে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় কাউন্সিলর ও সিটি করপোরেশনের প্রথম প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান কয়েছ লোদী বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। পরে বিষয়টি পুলিশকে অবগত করি।’
তবে বুধবার রাতে প্রবাসী শওকতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ তার বাসায় গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ সময় কথা হয় শওকতের প্রতিবেশি ও তার বাসার ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রতিবেশী ও ভাড়াটিয়া জানিয়েছেন, শওকত বছরে একবার লন্ডন থেকে আসেন। দেশে ফিরেই তিনি নগরীর হাউজিং এস্টেটে নিজ বাসায় অবস্থান করেন। এ সময় নতুন নতুন বাসায় যাতায়াত করতে দেখা যায়। ৫-৬ মাস থেকে তিনি ফের লন্ডনে চলে যান।
তবে এ ব্যাপারে ছালেহা খাতুন বলেন, শওকতের প্রথম স্ত্রী লন্ডনে থাকে। এ ছাড়া তার পরিবারের বাকি সদস্যরাও লন্ডনে থাকেন। কিন্তু শওকত তাদের পরিবারের কাছে ছালেহার কথা বলে দেশে আসে। কিন্তু তার সঙ্গে যোগাযোগ না করেই অন্য নারী নিয়ে বসবাস করে ফের লন্ডনে চলে যায়। তবে ওইসব নারীরা কারা সে সম্পর্কে কিছু বলতে পারেনি তিনি। -বাংলামেইল
১৯ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম