শুধু দুই আঙুলেই জীবন জিতে নিচ্ছে একরামুল
                                        
                                
                            
                            
                            
                                
                                
 
 
                     
                                 
                                 
                                 
                                  
                
                
                                
                          
                                        
                                         
                                                                                    
                                                                             
                                             
                                        
                                        
                                       
                                        
                                             
                                           
                                                                                 
                                                                                
                                                                                 
                                                                                
                                                                                  
                                             
                                             
                                                                                    
                                                                                 
                                     
   
                                             
     
                      
                                     
                                    
                                  পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও): একরামুল হকবাঁ হাতটি নেই একেবারেই। আঁকাবাঁকা একটি ডান হাত আছে বটে, কিন্তু তারও দুটি আঙুল; কবজির পরপরই যেন ঝুলে আছে প্রহসন হয়ে! তবে একরামুল বুঝে গেছে—যেমনই হোক, ওই দুটি আঙুলই তার জীবন টিকিয়ে রাখার অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। তাই ওই দুই আঙুলের মাঝেই কলম রেখে ভারসাম্য বজায় রাখতে ডান কাঁধে সেটি ঠেকিয়ে লিখে চলে সে।
এবার পীরগঞ্জ সরকারি বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে জেএসসি (জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট) পরীক্ষা দিচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার জাবরহাট উচ্চবিদ্যালয়ের শারীরিক প্রতিবন্ধী ছাত্র একরামুল হক।
সরেজমিনে গত বৃহস্পতিবার দেখা যায়, কেন্দ্রের একটি কক্ষে অন্যান্য পরীক্ষার্থীর সঙ্গে বসে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে একরামুল। কাছে গিয়ে কেমন হচ্ছে পরীক্ষা জানতে চাইলে, সে জানায়, ২০১২ সালের পিএসসি (প্রাইমারি স্কুল সার্টিফিকেট) পরীক্ষার মতো এবারও জেএসসি ভালো হচ্ছে তার।
জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার মল্লিকপুর ব্র্যাক স্কুল থেকে ২০১২ সালে পিএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল একরামুল। সেবার ওই বিদ্যালয় থেকে ২৫ শিক্ষার্থী পিএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। তার মধ্যে মাত্র দুজনই জিপিএ-৫ পেয়েছিল। এদেরই একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী একরামুল হক।
মল্লিকপুর ব্র্যাক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা আরমিনা বেগম বলেন, ‘একরামুলের দেহের গঠন ঠিক নেই। কিন্তু তার মেধা আছে। প্রথম শ্রেণি থেকেই সে মল্লিকপুর ব্র্যাক স্কুলে পড়েছে।’
একরামুল ২০১৩ সালে পীরগঞ্জের জাবরহাট উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক গোপেন মালাকার বলেন, ‘একরামুল প্রায় তিন কিলোমিটার পথ হেঁটে স্কুলে আসে। ছেলেটি অত্যন্ত মেধাবী।’ পড়ালেখা চালিয়ে যেতে ছেলেটির বিত্তবানদের সহায়তা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের দিনমজুর নজিবউদ্দীন আলীর ছেলে একরামুল। তার মা রাহেলা বেগম ও বড় ভাই আকতারুল ইসলাম দিনমজুর। গত বৃহস্পতিবার তাঁদের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, বসতভিটায় একটি মাত্র মাটির চালাঘরই পরিবারটির মাথা গোঁজার একমাত্র অবলম্বন। দিনমজুরির টাকায় কোনো রকমে চলে সংসারটি।
প্রতিবেশীরা জানান, খেয়ে না খেয়ে বাড়ি থেকে আড়াই কিলোমিটার পথ হেঁটে বিদ্যালয়ে যায় একরামুল। টাকার অভাবে ভ্যানেও যেতে পারে না সে।
শারীরিক ক্রটি নিয়ে জন্ম হয় একরামুলের। মা রাহেলা বেগম বলেন, ‘এই ছোয়াডা (সন্তান) নিয়ে জন্মের পর খুব চিন্তা ছিল বড় হয়ে কী করবে, কেমনে বাঁচে থাকবে। কিন্তু এখন দেখেছু পড়াশুনা করে ছোয়াডা মোর মানুষ হবেই।’
পরীক্ষা শেষে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে লড়াকু একরামুল বলে, ‘আমার হাত নেই, কিন্তু দুটো পা তো আছে! আমি সব কিছু করতে পারব। সবার সহযোগিতা পেলে আমি লেখাপড়ায়ও ভালো করব।’-প্রথম আলো
 ৭ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস
                                          
                                             
                                            
                                                 
               
     
     
    
    
    
 
    
    
 
                                          
                                             �