ঠাকুরগাঁও থেকে : ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা জগন্নাথপুর খোঁচাবাড়ি এলাকায় যুবক তানভীর আহম্মেদের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে গত চারদিন ধরে অনশন করছে সরকারি মহিলা কলেজের এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী। আজ সোমবার থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হলেও অনশন ছেড়ে পরীক্ষায় বসেনি মেয়েটি।
এর আগে, গতকাল রবিবার বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন প্রভাবশালী ছেলের পক্ষ নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করলে তা এলাকাবাসী মেনে নেয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর খোঁচাবাড়ি এলাকার ব্যবসায়ি আব্দুল মোতালেবের ছেলে তানভীর আহম্মেদ বাবুর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে একই ইউনিয়নের ঠাকুরগাঁও সরকারি মহিলা কলেজের এক শিক্ষার্থীরা সাথে। গত দেড় বছর ধরে সম্পর্ক চলাকালে তানভীর আহম্মেদ ওই মেয়েক বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অবৈধ ভাবে মেলামেশা শুরু করে।
হঠাৎ ওই শিক্ষার্থী গর্ভধারণ করে। তখন প্রেমিকা তানভীর আহম্মেদ বাবুকে ওই শিক্ষার্থী বিয়ের চাপ দেয়। তানভীর বিয়ে করতে রাজির আগে প্রেমিকাকে শর্ত দেয় গর্ভের ভ্রুণ নষ্টের জন্য। বিয়ের জন্য অবশেষে গত ৩ মাস আগে ভ্রুণ নষ্ট করে ওই শিক্ষার্থী।
কিন্তু ভ্রুণ নষ্ট করার পরেও তানভীর বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায়। অবশেষে কোনো উপায় না পেয়ে বর্তমানে পরীক্ষার টেবিলে না বসে বিষের বোতল হাতে এখনও প্রেমিকের বাড়িতে অনশন করে। গত শুক্রবার থেকে প্রেমিক তানভীরের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে অনশন শুরু করে।
এলাকাবাসী অনশনের বিষয়টি অবগত হলে স্থানীয় ইউপি সদস্য কেদার নাথকে অবহিত করেন। পরে ইউপি সদস্য ঘটনাস্থলে এসে প্রভাবশালী ছেলের বাবা মোতালেবকে ম্যানেজ করে অনশনকারী ওই মেয়েকে দুই লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানান।
কিন্তু অনশনকারী ওই শিক্ষার্থী টাকা না নিয়ে প্রেমিককে বিয়ের দাবিতে অনশন অব্যাহত রাখে। ওই ইউপি সদস্য কেদার নাথ বাড়ি থেকে ছেলে তানভীর ও তার পরিবারকে ভাগিয়ে দেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে, গতকাল রবিবার বিয়ের দাবিতে অনশনের বিষয়টি নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় লোকজন ইউনিয়ন পরিষদে বসলে শেষ পর্যন্ত সুরাহা হয়নি।
অনশনকারী মেয়ের মা জানান, তানভীর আমার মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে। গত ৩ মাস আগে বাচ্চা নষ্ট করলে বিয়ে করবে তানভীর এমন দাবি জানালে কোনো উপায় না পেয়ে শহরে এসে বাচ্চা নষ্ট করা হয়। কিন্তু তানভীরকে পরে বিয়ের চাপ দিলে সে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায়।
অবশেষে আমার মেয়ে বিষের বোতল হাতে নিয়ে বিয়ের দাবিতে ছেলের বাড়িতে অবস্থান নেয়। স্থানীয় চেয়ারম্যান, আমাকে মেম্বার ছেলের বাবার কাছে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করার প্রস্তাব দেয়। আমার মেয়েকে ওই ছেলে বিয়ে না করলে সে আত্নহত্যা করবে।
বিয়ের দাবিতে অনশনকারী ওই মেয়ে জানান, তানভীর আমার জীবন নষ্ট করেছে। আমি তাকেই বিয়ে করব। তার সাথে বিয়ে না দিলে এই বাড়িতে আত্মহত্যা করব।
ছেলের বাবা মোতালেবের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমার ছেলে ওই মেয়েকে বিয়ে করবে না। বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যানকে মীমাংসার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইউপি সদস্য কেদার নাথ বলেন, স্থানীয়ভাবে অনশনের বিষয়টি সুরাহা চলছে। সুরাহা না হলে বিয়ের ব্যবস্থা করা হবে।
জগন্নাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিনের কাছে জানতে তিনি বলেন, ছেলে ও তার পরিবার ওই মেয়েকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। মেয়ের পরিবার পরিষদে বা থানায় লিখিত অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঠাকুরগাঁও সদর থানার অফিসার্স ইনচার্জ আব্দুল লতিফ মিঞ্চা বলেন, অনশনের বিষয়টি আমরা এখনো অবগত নই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।
এমটিনিউজ২৪/এম.জে/ এস