বুধবার, ০৪ এপ্রিল, ২০১৮, ০৭:৩৪:০২

সন্তান ও বউমার নির্যাতনে রক্তাক্ত সেই বৃদ্ধাকে কোলে করে গাড়িতে তুললেন ডিসি

 সন্তান ও বউমার নির্যাতনে রক্তাক্ত  সেই বৃদ্ধাকে কোলে করে গাড়িতে তুললেন ডিসি

ঠাকুরগাঁও: সন্তান ও বউমার নির্যাতনে রক্তাক্ত বৃদ্ধা তাসলেমা খাতুনকে (৯৮) ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল যখন কোলে করে অ্যাম্বুলেন্সে তুলছিলেন সেই দৃশ্য দেখে এলাকাবাসী নীরব হয়ে তাকিয়ে ছিলেন। বুধবার সকাল ৭টায় জেলা প্রশাসক ও সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি দেখে হরিপুর উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গীপাড়া গ্রামের মানুষ অবাক হয়ে যান।

এসময় এলাকার অনেক নারী একে অপরকে বলেন, যে কাজ করা দরকার ছিল নিজের ছেলের, সেটা করলেন বড় স্যার (জেলা প্রশাসক)।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শতবর্ষী বৃদ্ধা তাসলেমা খাতুন বউমার কাছে (ছেলের স্ত্রী) খাবার জন্য ভাত চাইলে আকস্মিকভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ৬০ বছর বয়সী ছেলে বদরউদ্দিন ও তার স্ত্রী। একপর্যায়ে তাদের মারধরের শিকার হন শতবর্ষী ওই বৃদ্ধা। এসময় বাম চোখের নিচে গুরুতর জখম হন তিনি।

ঘটনাটি কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রচার ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় ওই বৃদ্ধার জন্য অনেকে কষ্ট প্রকাশ করে ছেলের শাস্তি দাবি করেন।

এদিকে জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল গভীর রাত পর্যন্ত ঠাকুরগাঁওয়ের বানভাসী মানুষের খোঁজখবর নিতে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান করায় তিনি বিষয়টি দেরিতে জানতে পারেন। এরপর গভীর রাতে তিনি ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করতে যাওয়ার বিষয়টি এই প্রতিনিধিকে নিশ্চিত করেন।

অবশেষে বুধবার সকাল ৭টায় জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল, সাংবাদিক তানভীর হাসান তানু ও রবিউল এহসান রিপন হাজির হন ওই বৃদ্ধার বাড়িতে।

জেলা প্রশাসকের উপস্থিতির খবর শুনে সেখানে হরিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ বেগ, ডাঙ্গীপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনিসহ এলাকার গণ্যমাণ্য ব্যক্তিরা হাজির হন। পরে সবার উপস্থিতিতে তাসলেমা খাতুনকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঠাকুরগাঁওয়ের পথে রওনা হন। এরপর দুপুর ১২টায় তাসলেমা খাতুনকে জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ডাঙ্গীপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনি জানান, রাতে সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। সকালে এসে ডিসি স্যার ও দুজন সাংবাদিক বৃদ্ধ মাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঠাকুরগাঁওয়ে নিয়ে যান।

জরুরি বিভাগের ডাক্তার পার্থ সারথী দাস জানান, বৃদ্ধা মায়ের চোখের ক্ষত খুবই গুরুতর। তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তার সব চিকিৎসা ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতাল থেকে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. আবু মোহাম্মদ খায়রুল কবির।

এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বলেন, রাতে যখন ঘটনাটি জানতে পারলাম এক বৃদ্ধ মা তার সন্তানের হাতে আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি। তখন বিষয়টি আমাকে খুবই ব্যথিত করেছে।

তাই সকাল ৭টায় বৃদ্ধা মায়ের খোঁজে হরিপুর যাই। পরে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বৃদ্ধা মাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে