মো. আব্দুল লতিফ লিটু, ঠাকুরগাঁও থেকে : গ্রাম থেকে শহরের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। গ্রামের কোথাও ফুলের দোকান নেই। রাত পোহালেই ২১ শে ফেব্রুয়ারি। আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শিবগঞ্জ মালিগাও এলাকার ভগদগাজি স্কুলের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী আঁখি এখন ফুল পাবে কোথায়?
এদিন ফুল নিয়ে শহীদ মিনারে না গেলে মনের মধ্যে এক ধরণের কষ্ট অনুভব হয়। আঁখি জানে না সে কষ্ট কিসের। তাই চার বান্ধবীকে নিয়ে পাশের বাড়ির একটি বাগানে ফুল তুলতে যায় মেয়েটি। অন্তত একটি করে ফুল আনতে পারলেও সান্তনা। কিন্তু ফুল আর শহীদ মিনারে দেওয়া হয়নি আঁখির, দিতে হয়েছে জীবন!
আঁখিরা যখন ওই বাগানে ফুল তুলতে যায়, তখন বাগান মালিকের স্ত্রী তা দেখে ফেলেন। তিনি আঁখিদের বকাঝকা করে তাড়িয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর বাগান মালিক নাসিরুল ইসলাম আঁখির বাসায় গিয়ে আরও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালজ শুরু করেন।
ওই ব্যক্তি বাড়ি ত্যাগ করার পর অভিমানে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে আঁখি। সবাইকে ছেড়ে চলে যায় না ফেরার দেশে। আর কোনদিন শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া হবে না আঁখির। যাবে না কোন বাগানে ফুল তুলতে। এ ঘটনায় আঁখির পরিবার ও এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
রবিবার রাত ১টায় এ ঘটনা ঘটে। আঁখি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শিবগঞ্জ মালিগাও এলাকার কাবুলের মেয়ে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে আঁখির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে ঠাকুরগাঁও সদর থানা পুলিশ।
আখির বাবা কাবুল জানান, মেয়েটি তো শুধু কয়েকটি ফুলই তুলেছিল। তার জন্য এত গালিগালাজ করতে হবে! কতটা কষ্ট পেলে এতটুকুন একটা মেয়ে নিজের জীবন দিয়ে দেয়!
বাগান মালিক নাসিরুল ইসলাম জানান, একটি বাগান করতে অনেক খরচ লাগে। মেয়েগুলো আমাদেরকে না জানিয়ে ফুল তুলেছে। তাই একটু বকাবকি করেছি মাত্র। এতটুকু কারণে সে আত্মহত্যা করতে পারে না।
স্থানীয় চেয়ারম্যান দবিরুল ইসলাম বলেন, বেশি আবেগের কারনে এমটি ঘটেছে।
ঠাকুরগাঁও সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) আব্দুল মান্নান জানান, পুলিশ লাশ উদ্ধার করেছে। তার আত্মহত্যার কারণ এখনো পুলিশ জানতে পারেনি। লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিডি প্রতিদিন
২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস