বুধবার, ০৬ আগস্ট, ২০২৫, ১১:১৭:৪৬

টিকটকে প্রেমের মর্মান্তিক পরিণতি!

টিকটকে প্রেমের মর্মান্তিক পরিণতি!

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : চার বছর আগে টিকটকে পরিচয়, এরপরে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে ঠাকুরগাঁওয়ের কলেজছাত্র গোলাম ফেরদৌস দুর্লভ বিয়ে করেন সিরাজগঞ্জের কলেজছাত্রী তানজিলা আক্তারকে। এরপরে মোবাইলের কথা হতো তাদের। দুই সপ্তাহ হলো কলেজছাত্রী যোগাযোগ বন্ধ করে দেন দুর্লভের সাথে, ব্লক করে দেন সামাজিক মাধ্যমে।

এমতাবস্থায় স্ত্রীর সাথে দেখা করতে তার এলাকায় গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন কলেজছাত্র গোলাম ফেরদৌস দুর্লভ।

তার পরিবারের অভিযোগ, সরকারি চাকরি পাওয়া ছেলে পেয়ে কলেজছাত্রীর পরিবার ছেলেকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করেছে। এ ঘটনার তদন্ত এবং জড়িতদের বিচারের দাবি তুলেছেন তারা।

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের পাতিলভাসা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আব্দুর রহমানের ছেলে গোলাম ফেরদৌস দুর্লভ। লাহিড়ী ডিগ্রী কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করতেন।

গত রবিবার রাতে বাড়ীতে কাউকে না জানিয়ে ট্রেনে করে যান সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার চৌবাড়ি গ্রামের ভ্যান চালক আইয়ুব আলীর মেয়ে কলেজছাত্রী তানজিলা আক্তারকে নিতে।

সেখান থেকে সোমবার বিকালে মোবাইলে স্বজনদের খবর দেওয়া হয় মুনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পড়ে আছে দুর্লভের মরদেহ। সেখানে সোমবার রাতে ছুটে যান স্বজনরা। মরদেহ ময়না তদন্তের শেষে কলেজছাত্রের ঠাকুরগাঁওয়ের গ্রামের বাড়ীতে গতকাল মঙ্গলবার রাত ২টার সময় পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

কামারখন্দের স্থানীয় এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, সোমবার (৪ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে কামারখন্দ উপজেলার চৌবাড়ি বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশ থেকে কলেজছাত্র গোলাম ফেরদৌস দুর্লভ বিষপান করেছেন- এমন খবর ছড়িয়ে কলেজছাত্রীর বাবা আইয়ুব আলী স্থানীয়দের সহায়তায় প্রথমে তাকে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। পরে তার মরদেহ শহীদ এম মুনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা রাখা হয়। সেখান থেকে ময়না তদন্তের পর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।

বুধবার বিকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক বাবা ছেলে হারানোর শোকে বাকরুদ্ধ।

মা কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন। পরিবারের ছোট ছেলে ছিলেন গোলাম ফেরদৌস দুর্লভ। তার বাবার স্বপ্ন ছিল তাকে পড়াশোনা করিয়ে পুলিশ বানাবেন। সেই স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে তাদের।

কলেজছাত্রের ভাই সৌরভ আলী অভিযোগ করেন, মেয়ের সাথে আমার ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে। বিয়ের হলফনামা রয়েছে, মুন্সি মোহর হয়েছে। মেয়েটি তাকে শর্ত দিয়েছিল কিছু টাকা এবং স্বর্ণ জোগাড় করে নিয়ে যেতে। তারপর সে আমাদের বাড়ীতে আসবে। এজন্য সে বউ নিতে গেছে। সেখানে গিয়ে শুনতে পায় মেয়ের সরকারি চাকরিজীবির সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছে। বিয়ের কাগজপত্র দেখানোর পর ঘটনা ধামাচাপা দিতে আমার ভাইকে তারা হত্যা করেছে।

কলেজছাত্রের মা আমিনা শিরিন বলেন, ছেলের অপরাধ পেলে তাকে বেধে রাখুন, পুলিশে দিন। মেরে ফেললেন কেন? আমি এ ঘটনার তদন্ত চাই, জড়িতদের শাস্তি চাই। আমার স্বামী অসুস্থ ছিল, একটু কথা বলতে পারত, ছেলেকে দাফন করে এসে বাকরুদ্ধ। কথাই বলতে পারছে না।

কলেজছাত্রকে হত্যার দায়ে সিরাজগঞ্জের খামারখন্দে থানায় গিয়ে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন কলেজছাত্রীর ভাই ও মা। এ নিয়ে পারিবারিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বুধবার রাতে।

কামারখন্দ থানার ওসি আব্দুল লতিফ জানান, ময়না তদন্তের পর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে সিরাজগঞ্জ সদর থানা পুলিশ। এ ঘটনায় ওই থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। পরিবার যদি এ ঘটনায় মামলা করে, তাহলে পুলিশ তদন্ত করে রহস্য উন্মোচন করবে।

এ বিষয়ে কলেজছাত্রীর পরিবার কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি। তবে একটি ভিডিওতে কলেজছাত্রীর মা আফরোজা বেগম দাবি করেছেন, কলেজছাত্র তাদের বাড়ীতে আসেনি। মোবাইলে কথা বলেছে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে