বিচিত্র জগৎ ডেস্ক : সাইমন সিও-এর শৈশব কেটেছিল ম্যাকাও-এর কেন্দ্রস্থলে। শহরের সবচেয়ে বড় আবাসন হোটেল সেন্ট্রালের একদম নিকটে একটি পুরনো বিল্ডিংয়ে তিনি বসবাস করতেন। ১৯২৮ সালে চালু হবার পর হোটেল সেন্ট্রাল সেলিব্রিটি এবং কূটনীতিকদের জন্য জমায়েতের অন্যতম স্থান হয়ে ওঠে।
১৯৬০-এর দশকে ছোট্ট সিও-এর বড় হয়ে ওঠা এই হোটেলকে ঘিরেই। এটি প্রাক্তন পর্তুগিজ উপনিবেশের কয়েকটি জায়গার মধ্যে একটি ছিল যেখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ছিল, পুরনো টেনিমেন্ট ভবনগুলির তুলনায় এই হোটেল ছিল বেশ বিলাসবহুল। কিন্তু একদিন তাকে হোটেল থেকে বের করে দেওয়া হয়।
সিও সিএনএন-কে বলছেন, তখন আমি ছোট ছিলাম, বিষয়টা বুঝিনি। আমি হোটেলের দিকে ইশারা করে শপথ করেছিলাম যে আমি একদিন এই হোটেল কিনবো।
যদিও বিশ্বজুড়ে অগণিত শিশু অন্যায়ের মুখে একই রকম প্রতিজ্ঞা করেছে, তবে সিও এমন কয়েকজনের মধ্যে একজন যিনি বাস্তবে কাজটি করে দেখিয়েছিলেন। বর্তমানে ৬৫ বছর বয়সী ব্যবসায়ী সিও ১৯৯১ সালে তার নিজস্ব রিয়েল এস্টেট ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি, লেক হ্যাং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন।
এবার আসা যাক ২০২৪ সালে। সম্প্রতি ৯৬ বছরের সিওকে হোটেল সেন্ট্রালের নতুন মালিক হিসাবে ফিতা কাটতে দেখা গেছে। তিনি হোটেলটি কিনতে চাননি। সিও বলেছেন যে তিনি ম্যাকাওর হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসের একটি অংশ পুনরুদ্ধার করতে চেয়েছিলেন, একটা সময় যা তার হৃদয়ের কাছাকাছি ছিল।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ম্যাকাওর চারপাশে বিলাসবহুল রিসোর্ট কমপ্লেক্স এবং আকাশচুম্বী ভবনগুলি ক্রমাগত মাথাচাড়া দিয়েছে। বিপরীতে আভেনিদা দে আলমেদা রিবেইরো বরাবর বিস্তৃত গলি এবং পুরানো স্থাপত্য, যাকে সান মা লো বলা হয় (ক্যান্টনিজে 'দ্য নিউ রোড' হিসাবে অনুবাদ করা হয়েছে) অনেকটাই জৌলুস হারিয়েছে।
কিন্তু ১৯২০ সালে যখন রাস্তাটি প্রথম খোলা হয় তখনই এটি শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ছিল। হোটেল সেন্ট্রাল পূর্বে প্রেসিডেন্ট হোটেল নামে পরিচিত ছিল। মিন্ট রঙের সাততলা হোটেলটি ম্যাকাওর প্রথম ভবন যেখানে একটি লিফট ছিল।
১৯৩২ সালে এটি শহরের প্রথম হোটেল হয়ে ওঠে যেখানে একটি দুই তলা ক্যাসিনো ছিল। এটি ১৯৩৮ সালে আট তলা এবং ১৯৪২ সালে ১১ তলায় সম্প্রসারিত হয়, যা এটিকে শহরের সবচেয়ে লম্বা হোটেলে পরিণত করে।
১৯৬০ এর দশকে প্রতিযোগিতা তীব্র হওয়ার সাথে সাথে হোটেল সেন্ট্রাল তার ঔজ্বল্য হারাতে শুরু করে। হোটেল সেন্ট্রাল আমাকে ছোট্ট ছেলে থেকে বৃদ্ধ হতে দেখেছে। সুতরাং হোটেলটির সাথে আমার গভীর আবেগ জড়ি।
আজ অবধি, হোটেল সেন্ট্রাল সান মা লো-তে সবচেয়ে উঁচু, বৃহত্তম ভবন হিসাবে বিদ্যমান। আমি অনুভব করেছি যে এই হোটেলের ম্রিয়মান দীপ্তিকে পুনরায় ফিরিয়ে আনা দরকার । তাই আমি এটি পুনরুদ্ধার করার দিকে মন দিয়েছিলাম সিএনএনকে বলছেন সিও।
সেই সুযোগটি অবশেষে ২০০০ সালে আসে, যখন হোটেলের দুই মালিক এটিকে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। ২০১৬ সালে সিও সাত বছরের অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আনুষ্ঠানিকভাবে হোটেলের নতুন মালিক হন। এটাই ছিল প্রথম ধাপ।
প্রায় ১০০ বছরের পুরনো বিল্ডিং সংস্কার করা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ ছিল। বিশেষ করে যেহেতু ১৯৩০-৪০ এর দশকে গড়ে ওঠা হোটেল সেন্ট্রালের মেঝেগুলি দৃঢ় ছিল না। হোটেল বিল্ডিং এবং এর সংলগ্ন এলাকাটি একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী স্থান এবং এটি ইউনেস্কো-তালিকাভুক্ত ঐতিহাসিক কেন্দ্রের মধ্যে অবস্থিত। যার অর্থ কোম্পানিটি তার ভিত্তিকে শক্তিশালী করার জন্য কিছু কাঠামো পরিবর্তন বা ধ্বংস করতে পারেনি।
সিওর- টিমকে হোটেল সেন্ট্রালের সংস্কারের জন্য একটি নতুন পাইলিং পদ্ধতি আবিষ্কার করতে হয়েছিল। হোটেল সেন্ট্রালে কাজ করার আগে চীনের একটি নির্মাণ সাইটে একাধিকবার তাদের নকশা পরীক্ষা করতে হয়েছিল।
হোটেল বিল্ডিংয়ের আসল চেহারাটি পুনরায় তৈরি করতে ডিজিটাল স্কেচিংয়ের মতো নতুন উপকরণ এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন তারা। অনেক সমস্যা কাটিয়ে উঠার পর, অবশেষে ২০১৯ সালে হোটেলের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এর মাঝেই সামনে আসে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ কোভিড-১৯ । অবশেষে ২০২২ সালে হোটেল সংস্কারের কাজ শেষ হয়।
সিও বলেছেন যে, সংস্কারের খরচ ছিল প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ম্যাকানিজ পাটাকা (প্রায় ৫০মিলিয়ন ডলার), যখন মোট বিনিয়োগ ছিল প্রায় ২.২ বিলিয়ন ম্যাকানিজ পাটাকা (বা প্রায় ২৭৪মিলিয়ন ডলার)।
নতুন সংস্কার করা হোটেল সেন্ট্রালে ১৯২০,৩০, ৪০ এর দশক থেকে অনুপ্রাণিত রেট্রো ইন্টেরিয়র ডিজাইন সহ ১১৪ টি কক্ষ রয়েছে। একটি কিপাও ভাড়া পরিষেবা অতিথিদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে হোটেলের পরিবেশের সাথে মেলে ধরার সুযোগ দেয়।
হোটেলের নিচে ‘ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক করিডোর’ নামে একটি প্রদর্শনী ইতিমধ্যেই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। এছাড়াও একটি ছোট শপিং মল, যা হোটেলের তিন তলায় চালু হবে, যদিও খোলার তারিখ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
হোটেলটিতে একটি রেস্তোরাঁ, একটি বেকারি থাকবে। সিও বলছেন, ‘আমরা আশা করি যে দর্শকদের ম্যাকাও সম্পর্কে একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরবে হোটেল সেন্ট্রাল।’ সূত্র : সিএনএন